|
|
|
|
সৌমিত্রর গোয়েন্দাগিরি
এত দিন ছিলেন শুধুই ফেলুদা। কিন্তু কেমন লাগে ব্যোমকেশকে তাঁর?
‘চিড়িয়াখানা’য় ব্যোমকেশ সাজতে পারলে কেমন লাগত? উত্তর খুঁজলেন সংযুক্তা বসু |
ব্যোমকেশ বক্সীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় কলেজ জীবন থেকেই। ঠিক যেমন ভাবে পড়তেন স্যর আর্থার কোনান ডয়েল, আগাথা ক্রিস্টি, তেমন ভাবেই আঁতিপাতি করে পড়তেন ব্যোমকেশ বক্সীর গোয়েন্দা গল্প। একটা সময়ের পর ভক্ত হয়ে ওঠেন রেমন্ড শ্যান্ডলারের লেখার। দুর্দান্ত অ্যাকশন প্যাকড ডিটেকটিভ গল্প। গোয়েন্দা গল্পের প্রতি তাঁর টান বরাবরের। এখনও চলছে তাঁর পরিচালিত নাটক ‘সবজান্তা’। সেটাও কমেডির মোড়কে গোয়েন্দা গল্প।
কিন্তু বাঙালি গোয়েন্দা যদি হয়? তাঁর পছন্দ সেই ব্যোমকেশের নরম-কোমল বাঙালিয়ানা, পছন্দ ব্যোমকেশের বুদ্ধির বিশ্লেষণী ক্ষমতা। সে কালের বাঙালি চরিত্রের খুব কাছাকাছি মনে হয় ব্যোমকেশকে।
অথচ সত্যজিৎ রায়ের চোদ্দোটি ছবিতে কাজ করেও এমন লোভনীয় ‘ব্যোমকেশ’ চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ তাঁর জীবনে এল না। ‘ফেলুদা’ সাজলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
তাঁর অভিনয়ে এত দিন পর সেই প্রিয় ব্যোমকেশ আসছে স্বাগত চৌধুরী পরিচালিত ‘দূরবিন দ্য টেলিস্কোপ’ ছবিতে। ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে দেখা হতে বললেন, “আমাদের কাজই তো অভিনয় করা। আগে-পরের কোনও ব্যাপারই নেই। যখন যেমন কাজ আসে, অভিনয় করার সুযোগ আছে এমন চরিত্র এলেই কাজ করি। সে ভাবেই ‘দূরবিন দ্য টেলিস্কোপ’য়ের ব্যোমকেশ এসেছে। তা ছাড়া এটা তো ব্যোমকেশের অরিজিনাল গল্প নয়। একটা ফ্যান্টাসি। এবং গল্পের দাবিতে ব্যোমকেশ এখানে কিছুটা বয়স্ক। সেই সিনিওরিটির কথা ভেবেই আমাকে কাস্ট করা হয়েছে সম্ভবত।”
কথায় কথায় আরও জুড়লেন সৌমিত্র, “ব্যোমকেশ কিন্তু আমার বরাবরের প্রিয়। ফেলুদা যদিও ভাল লাগে। ব্যোমকেশের মধ্যে নানা ধরনের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করার একটা আলাদা বিচক্ষণতা আছে। ফেলুদার বাঙালিয়ানা আছে, ব্যোমকেশেরও বাঙালিয়ানা আছে পরতে পরতে। কিন্তু ব্যোমকেশের বাঙালিয়ানা অনেক বেশি সাবেকি। আমজনতার চেনা। কিছু মধ্যবিত্ততাও আছে তার মধ্যে।” |
এ বার ব্যোমকেশ |
তখনকার ফেলুদা |
|
|
|
জয়সলমির আর বেনারসের বিশ্বনাথের ঘাটে ফেলুদার ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এখনও মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। কিন্তু কেন সত্যজিৎ রায়ের ‘চিড়িয়াখানা’ ছবিতে তাঁকে ব্যোমকেশ হিসেবে নেওয়া হল না? সেই সময় সৌমিত্রের মনে হয়নি ব্যোমকেশ করতে পারলে বেশ হত? সেই আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এসে পড়ল উত্তমকুমারের সঙ্গে?
সৌমিত্র ঋজু ভাষায় যে জবাব দিলেনতার সারমর্ম এই যে, কখনওই তাঁর ব্যোমকেশ চরিত্রে অভিনয় করার কথা মনে হয়নি। বললেন, “কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্ন নেই। এ ছবিটা করার কথা ছিল সত্যজিৎবাবুর কয়েক জন সহকারীর। তখনই ঠিক হয়েছিল উত্তমদা অভিনয় করবেন। চিত্রনাট্য লিখে দেন সত্যজিৎ রায়। পরে ছবিটা পরিচালনা করতেও রাজি হন। তাই আমার অভিনয়ের প্রশ্নই ওঠেনি। আমি ব্যোমকেশ করব এমনটা ভাবিওনি।”
এ বার সেই ব্যোমকেশের চরিত্রে সৌমিত্রকে দেখা যাবে একেবারে হালের উত্তর কলকাতায়। এক সাবেক পাড়ার ১৩ নম্বর বাড়িতে থাকে অজিতের সঙ্গে। গল্পের ফেলুদার বাড়ির ঠিকানা ১৩ নম্বর রজনী সেন রোডের আদলে এই বাড়ির ঠিকানা। সেখানে থাকে অঙ্কের টিচার প্রদোষবাবু (ফেলু মিত্তিরের ভাল নাম)। প্রদোষবাবু (সব্যসাচী চক্রবতী) আর ব্যোমকেশবাবু মিলে একটা খুনের কিনারা করতে উদ্যোগী হয়।
শুনলে মনে হবে, এ কোন আজগুবি গল্প? আর মজাটা এখানেই। এ ছবির অন্যতম প্রযোজক গায়ক সৈকত মিত্র বললেন, “ছবিতে একসঙ্গে হাজির বাংলা সাহিত্যের বাঘা বাঘা গোয়েন্দারা। আছে কিরীটী, জয়ন্ত, মোহনের মতো গোয়েন্দাদের নামেও বিভিন্ন চরিত্র। আছে ক্যাপটেন স্পার্কও। বাচ্চাদের জগতে এরা তো সব সময়ই আছে। সবাইকে একসঙ্গে দেখে খুদেরা আনন্দ পাবে।”
এ ছবিতে নাকি ব্যোমকেশের চুলের ছাঁট ‘চিড়িয়াখানা’র ব্যোমকেশের আদলে! সে কথা তুলতে হেসেই উড়িয়ে দিলেন সৌমিত্র। বললেন, “ব্যোমকেশ এখানে বয়স্ক। চুলের স্টাইলে কোনও ভাবেই উত্তমদার প্রভাব নেই। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যোমকেশের পাকাচুল। তবে হ্যাঁ, এই হেয়ারস্টাইলে আমার বয়সটা কিন্তু দিব্যি কমে গেছে। দেখে মনে হবে বড় জোর বছর ষাট কি পঁয়ষট্টি।”
তবে এই ছবির গল্পে ব্যোমকেশ কিন্তু বক্সী নন। তিনি ব্যোমকেশ বসু। পেশায় এল আই সি এজেন্ট। পাড়ার দত্তগিন্নি তার স্বামীর খুনের কিনারা করার জন্য এসে হাজির হয় ব্যোমকেশবাবুর কাছেই।
আর তার পর কিংবদন্তি গোয়েন্দার নামে নামএমন দুই পুরুষের মধ্যেই জমে ওঠে টানাপোড়েন। এই ফাঁকে দর্শকও দেখে ফেলবেন ব্যোমকেশ বনাম প্রদোষের একটা ছোট্ট মজার লড়াই। ব্যোমকেশ-ফেলুদার এই যৌথ অভিযানটাই কিন্তু শেষমেশ দেখার! |
“উত্তমকুমার দারুণ করেছিলেন
ব্যোমকেশ।
আমি কোনও দিন
সৌমিত্রকে ব্যোমকেশ হিসেবে ভাবিইনি।”
সন্দীপ রায় |
“ফেলুদার তীক্ষ্ণতা, বলিষ্ঠতা, ঝকঝকে
স্মার্টনেসের সঙ্গে
অবশ্যই মানিয়ে যান
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
কিন্তু ব্যোমকেশের
কথা উঠলে বলব, ‘চিড়িয়াখানা’য়
উত্তমকুমারকে
বেশ
মানিয়েছিল
ব্যোমকেশের চরিত্রে।
তাঁর জায়গায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে
ভাবতে পারি না।”
সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
“আমি যদি ৫০ কি ৬০-য়ের দশকে দাঁড়িয়ে
ব্যোমকেশ বক্সী
করার অবস্থায় থাকতাম,
সৌমিত্রকেই নিতাম। ব্যোমকেশের
মতো
বাঙালি
বুদ্ধিদীপ্ত পার্সোনার সঙ্গে হুবহু মিলে যান।”
অঞ্জন দত্ত |
|
|
|
|
|
|
|