|
|
|
|
কফিন বয়ে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই
কেউ বলতে ‘দ্য কফিন মেকার’ সিনেমার অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ্, রত্না পাঠক শাহ্
আর রণদীপ হুডা। ছবির ‘হতভাগ্য’ পরিচালক বীণা বক্সীর মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে এখন একটা গুজব খুব স্পষ্ট। নাসিরুদ্দিন শাহ্ অভিনীত ‘দ্য কফিন মেকার’য়ের পোস্টার নিয়ে হইচই হলেও, দেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা এই ছবিটার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চান না।
গোয়ার চলচ্চিত্র উৎসবের স্ক্রিনিংয়ের আগে অনেকেই তাকিয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ্-য়ের দিকে। তিনি কি আসবেন এই সিনেমার স্ক্রিনিংয়ে? তিনি না এলে অন্তত রত্না পাঠক শাহ্? বা রণদীপ হুডা? না, কেউ এলেন না।
শোনা গেল তাঁরা ব্যস্ত।
গোয়ার চলচ্চিত্র উৎসবের পরে কেরলেও সিনেমাটা দেখানো হয়। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। অথচ ফিল্মের নায়ক নাসিরুদ্দিন। তিনি এক কফিন প্রস্তুতকারকের চরিত্রে। রত্না, নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী, ইসাবেলার ভূমিকায়। আর রণদীপ রয়েছেন মৃত্যুর চরিত্রে। রোজ রোজ তো তাঁর ছবি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় না।
ইন্টারনেটে সিনেমাটা নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ লেখালেখি শুরু হয়ে গিয়েছে।
তা হলে কেন এই উন্নাসিকতা?
আনন্দplus-য়ের কাছে এই বিষয়ে মুখ খুললেন পরিচালক বীণা বক্সী। |
|
বীণা বক্সী |
|
গোয়া-তে ‘দ্য কফিন মেকার’ নিয়ে বেশ হইচই হল। তার পর কেরলের চলচ্চিত্র উৎসব। ফ্লোরেন্সে বাইট বে অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড...
হ্যাঁ, এটা আমার প্রথম ছবি। এছাড়াও গ্রিসে গোল্ডেন পিগাসেস পুরস্কারও জিতেছে ছবিটা। দারুণ লাগছে।
কিন্তু কোথাও ফিল্মটা নিয়ে নাসিরুদ্দিন শাহ্, রত্না পাঠক শাহ্ বা রণদীপ হুডা-কে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও উত্তেজনা দেখছি না কেন?
ওঁরা সিনেমাটার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন।
কেন?
দেখুন, সিনেমাটা যখন শুরু হয়, তখন আরও একজন প্রযোজক ছিলেন। তিনি আমার সম্পর্কে যা-না তাই বলে বেরিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি পরিচালক হিসেবে যোগ্য নই। এমনও হয়েছে যে আমাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ছবির পরিচালক হিসেবে। এক বছর যে আমার কী ভাবে কেটেছে, তা একমাত্র আমিই জানি।
মুম্বইতে জোর গুজব যে আপনার সিনেমার তো পুরো শ্যুটিং সম্পূর্ণ হয়নি। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন আপনি সেটা শেষ করে ইফি-তে দেখালেন কী করে?
আমি ১৫ বছর বিজ্ঞাপন করেছি। আমার কাছে ফিল্ম-য়ের শুরু, মধ্যভাগ আর শেষটা ছিল। আমার গল্পটা ছিল অ্যান্টন গোমস বলে গোয়ার এক কার্পেন্টারকে নিয়ে। যিনি কফিন বানান। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি কী ভাবে মৃত্যুকে জয় করেন বা করেন না সেটাই গল্প। যা শ্যুটিং করেছিলাম, তা দিয়ে এই গল্পটা বেশ বলা যেত।
কত শতাংশ শ্যুট করেছিলেন আপনি?
৯৭ শতাংশ শ্যুটিং করা ছিল।
আর বাকি তিন শতাংশ?
এটা অনেকটা চিকেন বিরিয়ানির মতো। কেউ চায় চিকেনের সঙ্গে ডিম দিতে। আমার ওই ডিমটা আর দেওয়া হয়নি। কিন্তু যেটা বানিয়েছি, সেটা তো চিকেন বিরিয়ানিই হয়েছে। কেউ চায় ওপরে কাঠবাদাম ছড়িয়ে দিতে। আমার কাছে কাঠবাদাম ছিল না। তাই কাজুবাদাম দিয়েছিলাম। ইন্ডাস্ট্রিতে এ রকম অনেক গল্প আছে যে পরিচালকরা ছ’ঘণ্টার মেটেরিয়াল শ্যুট করেছেন। কিন্তু সিনেমা তো সেই দু’ঘণ্টার! সব দৃশ্য তো আর সিনেমাতে ব্যবহার করতে পারা যায় না। আমার যা ছিল, আমি তা দিয়েই সিনেমাটা শেষ করেছি। সেটা কমপ্লিট না ইনকমপ্লিট, তা দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখেই বুঝতে পারবেন।
এই ৯৭ পারসেন্ট শ্যুট করে ১০০ পারসেন্ট দেখানোর ট্রিকটা কী? অনেক পরিচালকেরই তো অর্থাভাবের জন্য এই সমস্যা হয়। তাঁদের জন্য আপনার কী টিপস্ আছে?
পরিচালক হিসেবে আমরা অনেক কিছু শ্যুট করি। কিন্তু কোন দৃশ্যটা থাকবে, কোনটা থাকবে না, সেটা তো একমাত্র পরিচালকেরই সিদ্ধান্ত। এই রকম গল্প তো কম শুনিনি যে কোনও ইগোইস্টিক অভিনেতা অনেক দৃশ্যকে রি-শ্যুট করতে বলেছেন কারণ সহ-অভিনেতার রোলটা বেশি জোরালো হয়ে গিয়েছে। আমি যদি ১০০ ভাগ শ্যুটও করতাম, শেষ পর্যন্ত বিচার্য ব্যাপারটা হত যে আমি দু’ঘণ্টায় কী দেখাচ্ছি। যে কোনও অভিনেতার কাছে ফিল্মটা পুরোটা শ্যুট করাটাই কাম্য। তা না হলে একজন পরিচালক মারাত্মক ভাবে ভেঙে পড়েন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বড় সত্যি হল যে পরিচালকদের কোনও রাইট থাকে না তাঁদের ফিল্মের ওপর। চুক্তিতে লেখাই থাকে যে বাদবাকি টাকাটা পাওয়া যাবে ফিল্ম রিলিজের পর। এটা কিন্তু বিজ্ঞাপনে হয় না। আইনগত ভাবে আমার কোনও অধিকার থাকে না এটা ঠিক করার যে একটা সিনেমা কবে মুক্তি পাবে, কোন চলচ্চিত্র উৎসবে তা দেখানো হবে, কী ভাবে সেটাকে মার্কেট করা হবে। যদি প্রযোজক ভাল হন, তবে উনি পরিচালককে ডাকেন এই সবে ইনভলভড্ হতে। ভাগ্যবশত, আমার প্রযোজক শ্রীনারায়ন স্টুডিয়োজের ভরত ভিজন আমাকে সেই সম্মানটা দিয়েছেন।
তাই কি অনেক পরিচালকই আজকাল প্রযোজক হওয়ার কথা ভাবছেন?
অ্যাবসোলিউটলি। কারণ তাঁরা জানেন না যে কোনও মুহূর্তেই তাঁদের বের করে দেওয়া যেতে পারে। |
|
‘দ্য কফিন মেকার’য়ে নাসিরুদ্দিন শাহ্ ও রত্না পাঠক শাহ্ |
|
‘দ্য কফিন মেকার’ সিনেমার একটা
বড় গুণ হল যে বিষয়টা গম্ভীরহলেও হিউমারের কোনও অভাব নেই...
হ্যাঁ। প্রথম থেকেই তা চেষ্টা করেছিলাম।
একটা দৃশ্যে দেখিয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহ্ রণদীপ হুডাকে বলছেন কী ভাবে ছোটবেলায় মাথা ফেটে স্টিচ হওয়ার সময় উনি একদম কাঁদেননি। কারণ সামনে দাঁড়িয়েছিলেন যৌন আবেদন সম্পন্না একজন সুন্দরী নার্স। সেই দৃশ্য দেখে তো গোয়াতে হাসির রোল পড়ে যায়...
আরে ওটা যখন শ্যুট করছিলাম তখন হি ওয়াজ পিসড অফ উইথ মি। উনি ভাবছিলেন ওই দৃশ্যগুলো শ্যুট করা একেবারেই বেকার।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। আমি স্কুলে যখন পড়তাম তখন আমার এক ক্লাসমেট জানালা দিয়ে পড়ে গিয়ে ইনজিওর্ড হয়। খুব লেগেছিল কিন্তু একদম কাঁদেনি। জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন? বলেছিল নার্সের ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দেখে ও কষ্ট একদম ভুলে গিয়েছিল। ‘দ্য কফিন মেকার’য়ের স্ক্রিপ্ট লেখার সময় এই ঘটনা মনে পড়ে। আমি একটু অ্যাড করি। নাসিরকে দিয়ে বলাই যে ও কাঁদেনি কারণ ‘দ্য নার্স হ্যাজ বিগ বিগ বুবস।’ একটা টেকের পরে আবার আমি একটা টেক চাই। নাসির ভেবেছিলেন এটা একটা স্টুপিড আইডিয়া। উনি আমাকে একটা শিক্ষা দিতে গিয়ে একটু বাড়াবাড়িই করে ফেললেন। আমি ওঁকে বাধা দিইনি। সত্যি বলতে কী আমার ওই অভিনয়টা আরও ভাল লাগে। তখনই এক অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলেছিলাম ওইটাকেই ব্যবহার করব। চারিদিকে এই সিনেমাটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যে আমার কোথাও মনে হয় দে আর ডাইং অব কিউরিওসিটি। মুখে বলতে পারছেন না। আমি শুনেছি এমন অনেকে ওঁদের বলেছেন যে ফিল্মটা দেখা উচিত কারণ না দেখলে ওঁরা একটা ‘সিনেমাটিক এক্সপিরিয়েন্স’ মিস করবেন।
মনে হয় না নিজে এগিয়ে গিয়ে মিটমাট করতে?
অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এটা তো বলব ওঁরা যা এফর্ট দিয়েছেন, তা কখনওই অস্বীকার করা যায় না। নাসির কী অসম্ভব খেটেছেন এই ফিল্মের জন্য। রত্নাকে দেখে মনে হয় উনি যেন সত্যিই ইসাবেলা। রণদীপও চমৎকার।
এটাও কি হতে পারে না যে ওঁরা আপনার কাজের ধরনের মধ্যে কোনও গণ্ডগোল দেখেছেন...
হতে পারে। কোনও সময় ওঁদের মনে হয়েছিল যে আমি বোধহয় সেই রকম পরিচালক নই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে সবার নিজস্ব একটা ভিশন থাকে। আমি তো আর সেটে অভিনেতাদের সঙ্গে হিটলারের মতো ব্যবহার করি না। সেটা করলে পনেরো বছর ধরে বিজ্ঞাপন দুনিয়ায় সারভাইভ করতাম না। ফেভিকলের প্রচুর বিজ্ঞাপন করেছি। ইলেকশনের আগে একটা বিজ্ঞাপন করেছিলাম যেখানে দেখিয়েছিলাম একজন নেতা কী ভাবে ফেভিকল লাগিয়ে কুর্শিতে বসেই আছে। ভিম বার চ্যালেঞ্জের বিজ্ঞাপন শ্যুটিংয়ের সময় কলকাতায় গিয়েছি। এমনি এমনি তো আর আমি এই সব কাজ করিনি। আর সবাই ফিল্মটা ‘ডিজওন’ করেননি। শিল্পা শুক্ল তো গোয়াতেও গিয়েছিল।
টাকাপয়সা না দেওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা আছে?
ফিল্মটা একটু ওভারবাজেট ছিল ঠিকই। কিন্তু যা চুক্তিতে বলা হয়েছিল সব্বাই ভরতের কাছ থেকে সব কিছু পেয়েছি।
তবু কোনও অনুশোচনা হয়?
না, অনুশোচনা হয় না। আমার ওঁদের জন্য করুণা হয়।
মানে নাসিরুদ্দিন শাহ্, রত্না পাঠক শাহ্, আর রণদীপ হুডার জন্য করুণা?
আসলে এই ফিল্মে ওঁদের পারফরম্যান্স এত উচ্চমার্গের যে আমার করুণা হওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই। এত ভাল কাজ। আর ওঁরা নিজেরাই সেটা দেখছেন না। কোনও একপেশে মতামত ছাড়া, কোনও সংস্কার ছাড়া তো শুধুমাত্র একটা ফিল্মকে ফিল্ম হিসেবে দেখা উচিত। |
|
|
|
|
|