বেড়েছে ছিনতাই, পাহারা বাড়বে উত্তরবঙ্গের ট্রেনে

চিত্র ১: তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেসের বাতানুকূল দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোচবিহার যাচ্ছিলেন মিনতি চক্রবর্তী। এই লাইনে একলা যাত্রায় অভ্যস্ত মিনতিদেবীর প্রতি বার ঘুম ভেঙে যায় নিউজলপাইগুড়ি এলে। কিন্তু ২০ নভেম্বর ঘুম ভাঙে নিউকোচবিহার স্টেশনের আগে। দেখেন হ্যান্ডব্যাগটি নেই। যাতে হাজার কুড়ি টাকা, প্যান, ভোটার কার্ড একাধিক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ছিল।
চিত্র ২: ওই সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে এক পিএইচডি-র ছাত্রী সফর করছিলেন। নিউজলপাইগুড়ি স্টেশনের পর তিনিও দেখেন তাঁর ল্যাপটপ-সহ ব্যাগ নিখোঁজ।
চিত্র-৩: মাস দেড়েক আগে কামরূপ এক্সপ্রেসে ধুপগুড়ি যাচ্ছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। নিউজলপাইগুড়ি আসতেই ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। দেখেন সংরক্ষিত বাতানুকূল তৃতীয় শ্রেণির কামরার ঘোরাঘুরি করছে কিছু ব্যক্তি। এক জন পায়ের কাছে বসেও পড়ে। আসনের নীচ থেকে ব্যাগ নিয়ে পালাতে গেলে তাঁকে ধরে ফেলেন অনিন্দ্যবাবু। টানাহ্যাঁচড়ায় ব্যাগটি ফেলেই পালায় সে।
বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। উত্তরবঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে এমন যাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, এই লাইনে, বিশেষ করে এনজেপি চত্বরে ও তার আশপাশে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ, কাবলিওয়ালার পোশাক পরা এক ব্যক্তি ও তাঁর দল রয়েছে এর পিছনে। এ-ও অভিযোগ, রেল পুলিশ জেনেও কিছু করছে না। কাটিহারের ডিআরএম এ কে শর্মা জানান, এমন কোনও ঘটনা নথিভুক্ত হয়নি। হবে কী করে! মিনতিদেবীর বক্তব্য, “ব্যাগ খুইয়ে মাথার ঠিক ছিল না। কোচ অ্যাটেনডেন্টের পাত্তা ছিল না। এর মধ্যে স্টেশন এসে পড়ে। নেমে পড়ি।” পরে অবশ্য কোচবিহার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
ঘুমন্ত অবস্থায় ছিনতাই-ই নয়, খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনতাইয়েরও বহু অভিযোগ এসেছে উত্তরবঙ্গের এই ট্রেনগুলি থেকে। তবে স্লিপার ও বিশেষ করে অসংরক্ষিত কামরাতেই এমন ছিনতাই ঘটে থাকে বলে জানিয়েছে রেল। কিন্তু তা বলে বাতানুকূল দ্বিতীয় শ্রেণিতেও এ ভাবে চুরি?
এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও গ্যাং ছাড়াও উঠে এসেছে নানা ধরনের সম্ভাবনার কথা। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কোচ অ্যাটেনডেন্ট বা প্যান্ট্রি কারের কর্মীদের একাংশের যোগসাজশের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না রেল মন্ত্রক। এই ধরনের একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে দুই শ্রেণির কর্মীদের যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তে পাওয়া গিয়েছিল। মাসখানেক আগেই হাওড়ামুখী হিমগিরি এক্সপ্রেসে যাত্রীদের টাকা পয়সা ও ব্যাগ চুরির অভিযোগে দুই প্যান্ট্রি কর্মীকে গ্রেফতার করে ঝাঁঝা রেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাই উপরোক্ত দু’টি ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের না হলেও রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে মালদহ, আলিপুরদুয়ার ও কাটিহারের ডিআরএমকে। রাতে আরও রেল পুলিশ দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ডিভিশনকে। সমস্যা, নানা ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের ফলে ঠিকাদারদের অধীনে কাজ করা প্যান্ট্রি কর্মী বা কোচ অ্যাটেন্ড্যান্টদের ঠিক তথ্য রেলের কাছে থাকে না। এঁদের কেউ অপরাধ করলে তার খোঁজ পাওয়া শক্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি কিছু সুপারফাস্ট ট্রেনে কোচে দুর্গন্ধ তাড়াতে ও পোকামাকড় মারতে স্প্রে করা হয়। মিনতিদেবীর অভিযোগ, “সম্ভবত ওই স্প্রে-তে কিছু ছিল। সাধারণত ট্রেনে আমার ভাল ঘুম হয় না। কিন্তু সে দিন আমি ও সহযাত্রীরা অঘোরে ঘুমিয়েছি।” এই অভিযোগও খতিয়ে দেখছে রেল মন্ত্রক। মন্ত্রকের বক্তব্য, মিনতিদেবীর উপর স্প্রে-র প্রভাব হলে তা অন্য কামরার বাকি যাত্রীদের উপরও হত। কিন্তু তা হয়নি। তাই রাতে চলন্ত ট্রেনে পুলিশ পাহারাই একমাত্র সমাধানের রাস্তা বলে মনে করছে মন্ত্রক।
অধীরবাবুর বক্তব্য, “এ ক্ষেত্রে জিআরপি-র সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা পাওয়া যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিযোগ আসায় রেল মন্ত্রক অবশ্যই পদক্ষেপ করবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.