|
|
|
|
পাহাড় চাইছে ঘরের প্রার্থী, বললেন হরকা |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
আর বাইরের কেউ নন, এ বারে পাহাড়ের কাউকেই দার্জিলিং লোকসভা আসনে প্রার্থী করার দাবি উঠেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরে।
শনিবার শিলিগুড়ির সুকনায় রেঞ্জ অফিসারদের এক অনুষ্ঠানে এসে এ কথা জানান মোর্চার কালিম্পঙের বিধায়ক তথা প্রচারসচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী। আসন্ন লোকসভা ভোটে মোর্চা কী করবে, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অনেক বার বাইরের লোককে প্রার্থী বা সমর্থন করেছে পাহাড়। তাতে পাহাড়বাসীর কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই পাহাড়ের প্রায় সবাই চান, স্থানীয় কাউকেই প্রার্থী করা হোক।” জনমতের কথা মাথায় রেখেই মোর্চা এই নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। হরকা তার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “আমাদের দল মানুষের মতামতকে মর্যাদা দেয়। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে ভাবছি আমরা।”
তবে হরকা এটাও জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে দলীয় স্তরে এখনও কোনও চূড়ান্ত কথা হয়নি। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি কুমার রাইও দাবি করেছেন, দলে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবু স্থানীয় প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে হরকার খোলাখুলি সওয়ালকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মানছেন মোর্চা নেতাদের অনেকে। আবার উল্টো মতও রয়েছে তাঁদের মধ্যে। নেতাদের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে হরকার। সেই সুবাদে প্রচারসচিব স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই এই মত জানিয়ে থাকতে পারেন।
হরকা-ঘনিষ্ঠ মোর্চা নেতারা অবশ্য বলছেন, লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বিজেপি থেকে সমদূরত্ব রাখতে চাইছে দল। হরকা সে কথাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত তা-ই যদি হয়, তা হলে দার্জিলিঙের বর্তমান সাংসদ বিজেপির যশোবন্ত সিংহকে আর মোর্চা সমর্থন জানাবে না। একই ভাবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে এবং বর্তমানে জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎবাবুর সম্ভাবনাও চলে যাবে বিশ বাঁও জলে। বরং মোর্চা এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিলে স্বস্তিতে থাকবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এর ফলে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ফের দৃঢ় করার সুযোগও তৈরি হবে বলে মোর্চার অনেকেরই ধারণা।
ঘটনাচক্রে ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে দেখা করার কথা রয়েছে বিমল গুরুঙ্গের। মুখ্যমন্ত্রী সময়ও দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে মোর্চার প্রচারসচিবের বার্তা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে স্বীকার করেছেন তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা।
তবে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আগে খোঁজ নিই, উনি ঠিক কী বলেছেন। তার পরে দলে আলোচনা করে মন্তব্য করব।” এ প্রসঙ্গে হরকা নিজে কিন্তু লুকোছাপা করেননি। তাঁর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দলের সভাপতি একান্ত বৈঠক করবেন। সামনে লোকসভা ভোট। তা নিয়ে কথা হতেই পারে।”
হরকার বক্তব্যকে কিন্তু গুরুত্ব দিচ্ছেন না সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, “তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চার বরাবরই আঁতাঁত রয়েছে। মাঝে লোক দেখানো নাটক হয়েছে। লোকসভা ভোটে তারা যে হাত ধরে চলবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।” বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য মোর্চার সমর্থন পাওয়ার আশা ছাড়ছেন না। তাঁর কথায়, “ওঁদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে। তাই ওঁরা শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেবেন, তা এখনই বলা যায় না।” রাহুলের ব্যাখ্যা, “মোর্চাকে বুঝতে হবে, পাহাড়ের সমস্যায় নজর রাখেন এবং তা সংসদে তুলবেন, এমন লোকই সেখানে প্রার্থী হওয়ার উপযুক্ত। সে তিনি যেখানকার বাসিন্দাই হোন না কেন।” দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকার এই নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও জেলা কংগ্রেসের একাধিক নেতা মনে করেন, বহিরাগত প্রার্থীকে সমর্থন করলে লাভের লাভ যে কিছু হয় না, সেটা মোর্চাও এখন বুঝতে পারছে। রাহুল অবশ্য সে কথা মানেন না। তাঁর মতে, মোর্চা এমন ভেবে থাকলে তা ঠিক নয়।
অশোকের মতো পাহাড়ের বিরোধী দল গোর্খা লিগের মুখপাত্র প্রতাপ খাতিও হরকার মতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁর বক্তব্য, “গত বারেও আমরা সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়ার কথা বলি। মোর্চাই শেষে বিজেপিকে সমর্থন করে। তাই এ বারেও গুরুঙ্গ কী করবেন, তা আন্দাজ করা সম্ভব নয়।” জিএনএলএফ-ও সে কথা মনে করে। তবে গোর্খা লিগের দাবি, মোর্চা এ বার একক ভাবে জেতার বা কাউকে জেতানোর জায়গায় নেই।
এই অবস্থায় আজ, রবিবার বিমল গুরুঙ্গের সাংবাদিক বৈঠক। তিনি কী বলেন , সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।
|
(সহ-প্রতিবেদন: রেজা প্রধান) |
|
|
|
|
|