অন্ধজনে আলো দেখানোয় বাংলা তৃতীয়
বাংলায় চক্ষুদানের আগ্রহ বেড়েছে। বেড়েছে চোখ সংগ্রহ এবং প্রতিস্থাপনের হারও। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯-’১০ সালে রাজ্যে ৬৮০টি কর্নিয়া প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। ২০১০-’১১ সালে তা বেড়ে হয় ১২৪২। পরের অর্থবর্ষে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৩৫। দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন প্রায় সমসংখ্যক মানুষ।
তিন বছরের মধ্যে রাজ্যে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের সংখ্যা যেমন দ্বিগুণ হয়েছে, পাশাপাশি তেমনই লাফিয়ে বেড়েছে কর্নিয়া সংগ্রহের সংখ্যাও। ২০০৯-’১০ সালে সংখ্যাটা ছিল ১৬৮২। ২০১১-’১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার। রাজ্যে মরণোত্তর চক্ষুদানের আন্দোলনও চলছে তিন দশকের বেশি সময় ধরে। এত দিন পরে হঠাৎ এ ভাবে কর্নিয়া দান এবং প্রতিস্থাপনের হার বাড়ল কী ভাবে?
চক্ষুচিকিৎসকদের বক্তব্য, মৃতদের পরিবারকে সময়মতো বোঝাতে না-পারা এবং পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্যই এত দিন মৃতের শরীর থেকে চোখ সংগ্রহ করা যেত না। চোখ দানের অঙ্গীকার সত্ত্বেও তাই মৃত্যুর পরে চোখ নেওয়া যেত না অনেক ক্ষেত্রেই। কখনও কখনও আবার অঙ্গীকারবদ্ধ ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দের ঠিকমতো বোঝাতে না-পারায় পাওয়া যেত না কর্নিয়া। একসঙ্গে এই দু’টি ঘাটতি মেটানো সম্ভব হওয়াতেই রাজ্যের কর্নিয়া সংগ্রহ এবং কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের হার এতটা বেড়েছে বলে মনে করছেন চক্ষুচিকিৎসকেরা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ২০০৯-’১০ সালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ছিল ষষ্ঠ। এখন বাংলা তৃতীয় স্থানে।
কী ভাবে সম্ভব হল এটা?
সরকারি পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে কর্নিয়া সংগ্রহ এবং কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে না-পারায় রাজ্য সরকার বছর চারেক আগে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে। ওই সব সংস্থার মধ্যে দু’টি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল রয়েছে। বাকিরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সঙ্গে নিয়েই এই সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (চক্ষু বিভাগ) সিদ্ধার্থ নিয়োগী। তাঁর কথায়, “এ রাজ্যে বছরে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার এক শতাংশ কর্নিয়া পেলেই অন্ধত্ব দূর করার কাজ সহজ হয়ে যাবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি খুব ভাল কাজ করেছে। এ বার আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাব বলে মনে হচ্ছে।”
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি এগিয়ে আসাতেই যে ভাল সাড়া মিলেছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন চক্ষুচিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কী ভাবে সাফল্য আসছে, তার কারিগরি দিকের ব্যাখ্যা দিয়েছেন কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় দত্ত। তিনি বলেন, “আগে গোটা চোখ তুলে নেওয়া হত। তাই অনেকেই তাতে রাজি হতেন না। এখন তা করা হয় না। শুধু কর্নিয়া ও আশপাশের একটু অংশ তুলে নেওয়া হয়। তাতে প্রায় বোঝাই যায় না যে, চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে।”
ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্নিয়া সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ওই চক্ষু হাসপাতালের অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এ বছর ইতিমধ্যেই এক হাজার কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছি।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে একযোগে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক ভাস্কর সিংহ বলেন, “মৃতদের পরিবারকে বোঝানোটাই মূল সমস্যা। মানুষকে বোঝাতে না-পারলে কর্নিয়া পাওয়া যাবে না। আমরা ডাক পেলেই ছুটে যাই। মানুষকে বোঝাই। ফলও পেয়েছি।”

চক্ষুদান
সাল সংগ্রহ প্রতিস্থাপন
২০০৪-’০৫ ১১৪৭ ৩০৪
২০০৬-’০৭ ১২৫৮ ৪৯৮
২০০৭-’০৮ ১৬১৪ ৭৩৬
২০০৮-’০৯ ১৩৭০ ৫০৯
২০০৯-’১০ ১৬৮২ ৬৮০
২০১০-’১১ ২১৫২ ১২৪২
২০১১-’১২ ২৯২০ ১৫৩৫
* ২০১২-’১৩ সালে এর মধ্যে দু’টি ক্ষেত্রেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.