মেলেনি টাকা, শিকেয় ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি রোখার কাজ
কার হাতে, কোন খাতে টাকা দেওয়া হবে এই প্রশ্নের জটে আটকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, কালাজ্বর, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস-এর মতো গুরুতর রোগ রোখার কাজ প্রায় শিকেয় উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। অথচ গত বছরই রাজ্যের ৬৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন পতঙ্গবাহিত এই সব রোগে। মারা যান ৫৪ জন। ডেঙ্গি তো ২০১২তে কলকাতা ও তার আশপাশে প্রায় মহামারীর আকার নিয়েছিল। অথচ, ঠিক তার পরের বছরেই প্রথম ৯ মাসে এই সব রোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও কানাকড়িও পায়নি রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের জন্য চলতি বছর এই খাতে ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে একটি টাকাও আসেনি।
বিষয়টি নিয়ে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে দিল্লি-কলকাতা চিঠি চালাচালি হয়েছে বেশ কয়েক বার। লাভ হয়নি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাসের কথায়, “পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন থেকে ৭৫% টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। ২৫% দেবে রাজ্য। কেন্দ্র তার অংশের ৩৬ কোটি না-দেওয়ায় রাজ্যও তার দেয় প্রায় ১২ কোটি সরাসরি মঞ্জুর করতে পারেনি। তবে কাজ যাতে একেবারে থেমে না-যায় তার জন্য স্বাস্থ্য সমিতি থেকে ১২ কোটি টাকা ধার করে রাজ্য খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ চালাচ্ছে।”
চলতি বছরে এখনও জনস্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং প্রচার কর্মসূচির কিছুই করা যায়নি। মাসের পর মাস মাইনে বন্ধ রয়েছে প্রায় ৪০০ জন অস্থায়ী জনস্বাস্থ্য কর্মীর। অথচ এই কর্মীরাই কর্মসূচি চালানোর সারথি। স্লাইডে রক্ত সংগ্রহ ওপরীক্ষা থেকে শুরু করে জমা জলে লার্ভার খোঁজ করা, ওষুধ বিতরণ, আক্রান্ত নতুন রোগী চিহ্নিত করা, ডিডিটি স্প্রে করা, কোনও এলাকায় কোনও একটি রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে কিনা দেখা সবই এই কর্মীদের করার কথা। মাইনে না পেয়ে তাঁরা সেই কাজ করা কার্যত বন্ধ রেখেছেন। ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট-ও প্রায় কিছুই কেনা হচ্ছে না। এই অবস্থায় ডিসেম্বর মাসের পরেও টাকা না এলে সব কাজই বন্ধ হয়ে যাবে।
চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে আর মাত্র মাস তিনেক বাকি। মার্চের মধ্যে টাকা আসবে এমন নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না কেন্দ্র। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে যদি সে টাকা আসেও, তা দিয়ে প্রায় বছরভর পড়ে থাকা কাজ সময়ে শেষ করা যাবে না। শুধু তাই নয়, এতগুলি মাস টাকার অভাবে রোগ প্রতিরোধের কাজ ঠিকঠাক না এগোনোয় পরিস্থিতি এ বারও ফের খারাপ হওয়া আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ২০০৫ সাল থেকে গোটা দেশে জাতীয় কার্যক্রম চালু করেছিল কেন্দ্র। লক্ষ্য ছিল, ২০১৫ সালের মধ্যে কালাজ্বর ও ফাইলেরিয়া নিয়ন্ত্রণ (প্রতি ১০ হাজারে আক্রান্তের সংখ্যা ১-এর নীচে নিয়ে আসা) এবং ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ও জাপানি এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধ। গত ৭ বছর ধরে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (এনআরএইচএম)-এর তহবিল থেকে প্রত্যেক রাজ্যের জন্য আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি বছর টাকা এসেছে তিন খেপে। কিন্তু এ বার কেন এক কিস্তিও এল না?
স্বাস্থ্য মিশনের অন্তর্গত এই প্রকল্পের অধিকর্তা এ সি ধারিওয়ালের বক্তব্য, পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধের টাকা পাঠানো হত পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সমিতিতে। প্রথম দফায় সাত বছরের চুক্তি হয়েছিল। তার মেয়াদ শেষ হয় গত বছর। নতুন করে চুক্তির সময় দেখা যায়, স্বাস্থ্য সমিতির কোনও রেজিস্ট্রেশনই নেই! তাঁর কথায়, “কেন্দ্র তখন বরাদ্দের টাকা আটকে দেয়। সমিতির রেজিস্ট্রেশন করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেপ্টেম্বর মাস প্রায় পার করে দেয়। তত দিনে তাদের জন্য বরাদ্দ টাকা জরুরি প্রয়োজনে আমরা অন্য রাজ্যে বিলি করে দিয়েছি। কারণ টাকা ফেলে রাখা যায় না।”
ধারিওয়ালের আরও বক্তব্য, “আমরা তা-ও পশ্চিমবঙ্গকে একটা সুযোগ দিয়েছিলাম। বলা হয়েছিল, কেন্দ্রের অন্য একটি তহবিল থেকে আমরা রাজ্যকে টাকা দেব। কিন্তু নিয়মানুযায়ী সেই টাকা স্বাস্থ্য সমিতি নয়, সরাসরি জমা পড়বে রাজ্যের অর্থ দফতরের ট্রেজারিতে। ওরা এখনও তাতে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি।”
এর জবাবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা (জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ) সচ্চিদানন্দ সরকার বলেন, “আমরা সবুজ সঙ্কেত দেব কী করে? ট্রেজারি থেকে ওই টাকা তোলার জন্য আলাদা খাত বা ‘হেড’ তৈরি করতে হবে। এ জন্য অ্যাডভোকেট জেনারেলের অনুমোদন লাগে।
এই সব করতেই তো তিন মাস কেটে যাবে!”
সঙ্কটের সাত দফা
প্রস্তাবিত এনসেফ্যালাইটিস আইসিইউ চালু হয়নি মেদিনীপুর মেডিক্যাল, সিউড়ি, ইমামবাড়া হাসপাতালে
ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি পরীক্ষার কিট যথেষ্ট সংখ্যায় কেনা যায়নি
২৯টি পুরসভায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জলে লার্ভা খোঁজা, ডিডিটি ছড়ানো হয়নি
বাড়ি-বাড়ি ফাইলেরিয়ার ওষুধ খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মী নিয়োগ হয়নি
পুর এলাকায় নতুন কত জন ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন খোঁজা যায়নি
কালাজ্বরপ্রবণ একাধিক জেলায় দ্বিতীয় দফায় ডিডিটি স্প্রে হয়নি
জঙ্গলমহলে ভেষজ-লাগানো মশারি কেনা যায়নি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.