রাত আড়াইটে। বিয়েবাড়ির ধকলের পর সবাই ঘুমিয়ে। বিয়ের সাজে বাড়ি থেকে বেরোল কনে। মোবাইলে ডাক পেয়ে মোটরবাইক নিয়ে হাজির প্রেমিক ও তার বন্ধু। অন্ধকারে উধাও হল ওরা। পরদিন থানায় গিয়ে কনে জানাল, জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, পালানো ছাড়া উপায় ছিল না।
শুক্রবার গভীর রাতে বনগাঁ থানার রাউতারা গ্রামের ঘটনা। ভোরে বধূর বাড়ির লোক তাঁকে বাড়িতে দেখতে না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তাঁদের অনুরোধে এক বন্ধু তরুণী ও তাঁর প্রেমিককে ফোন করে ডেকে আনেন কলেজে। তার পরে থানায় যান ওঁরা। বনগাঁ দীনবন্ধু কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের মেয়েটি সেখানে জানান, তাঁর অমত সত্ত্বেও জোর করে বিয়ে দেন বাবা। বাধ্য হয়ে এই উপায় বেছে নিয়েছেন তিনি।
পাত্র তারকেশ্বরের। চলতি বছরের জুনে তাঁর সঙ্গে রেজিস্ট্রিও হয়ে গিয়েছিল। তরুণী পুলিশকে জানান, বাবা তাঁকে একটি কাগজে সই করতে বলেছিলেন। সেটা যে রেজিস্ট্রির কাগজ ছিল, তা তিনি বোঝেননি।
তাঁর আরও বক্তব্য, শুক্রবার বিয়ের আগে বেশ কিছুদিন তাঁকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। বিয়ের রাতে বাড়ি ছাড়ার আগে বনগাঁ থানার আইসি চন্দ্রশেখর দাসকে একটি চিঠিতে জানান, স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়ছেন। থানায় আইসির সামনে বিয়ের গয়নাও বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেন তিনি। “এমন ঘটনা চলচ্চিত্রে দেখা গেলেও, জীবনে বিরল। সমাজের চোখরাঙানি উপেক্ষা করার যে সাহস মেয়েটি দেখিয়েছে, তা ব্যতিক্রমী,” বলেন সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার। “সম্মানরক্ষায় হত্যা বা অনার কিলিং-এর মতোই, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করাও অপরাধ,” বলেন তিনি। তরুণী জানিয়েছেন, মেয়ে সহপাঠীকে বিয়ে করলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন বলে ভয় দেখিয়েছিলেন বাবা। এক বার ব্যাগও গুছিয়ে ফেলেছিলেন।
পাত্রের অভিভাবকেরা ইতিমধ্যেই ডিভোর্স-এর জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। শনিবার সরকারি আইনজীবী সমীর দাসের সহায়তা নিচ্ছেন তাঁরা। সমীরবাবু জানান, সোমবার বনগাঁ আদালতে ডিভোর্সের জন্য আবেদন করা হবে। তরুণীর দাবি, সে তার প্রেমিকের বিষয়টি পাত্রকে জানিয়েছিল। পাত্রপক্ষের কেউ অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। মেয়েটির প্রেমিক এ দিন জানিয়েছেন, তরুণী তাঁর বাড়িতেই থাকবে। “প্রেমিক ছেলেটি যদি বিশ্বাসঘাতকতা করত, মেয়েটির দাঁড়ানোর জায়গা থাকত না। এ ভাবে জোর করে মেয়ের বিয়ে দেওয়া এক রকম মরণের মুখে ঠেলে দেওয়া,” বলেন তিলোত্তমা। |