চাকরির পরীক্ষা দিতে বসে মাঝেমাঝেই এসএমএস করছেন এক যুবক। এমন দৃশ্য দেখে সন্দেহ জেগেছিল পরীক্ষার হলে দায়িত্বে থাকা কৃষ্ণনগরের এক কলেজ-শিক্ষকের। ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, দালাল চক্রের মাধ্যমে ভুয়ো পরিচয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। দিন কয়েক আগের ওই ঘটনার তদন্তে নেমে শনিবার চক্রের দুই চাঁইকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সৌমেন মাঝি ও সুখেন দাস। সৌমেন কোন্নগরের বাসিন্দা, সুখেনের বাড়ি বারাসতের নীলগঞ্জে। সৌমেন ও সুখেন চাকরির পরীক্ষার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান।
সিআইডি সূত্রের খবর, গত ১ ডিসেম্বর রাজ্য আবগারি দফতরের চাকরির পরীক্ষায় বিষয়টি নজরে আসে। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। পরে বিষয়টির তদন্তে নামে সিআইডি। ধৃত পাঁচ জনের মোবাইলের এসএমএস-এর সূত্র ধরে গত বুধবার বালুরঘাট থেকে গৌরকৃষ্ণ বিশ্বাস ও সুব্রত বিশ্বাস নামে দুই ব্যাঙ্ককর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের জেরা করেই তদন্তকারীদের কাছে দালাল চক্রের বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
তদন্তকারীরা জানান, চাকরির পরীক্ষার জন্য অঙ্ক, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের মতো বিষয়ে পারদর্শীদের ভুয়ো পরীক্ষার্থী সাজিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিতেন গৌরকৃষ্ণ ও সুব্রত। প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে তাঁরা তড়িঘড়ি সমাধান করে এসএমএস মারফত উত্তর গৌরকৃষ্ণ-সুব্রতর কাছে পাঠিয়ে দিতেন। গৌরকৃষ্ণ এবং সুব্রত তা এসএমএস করে দিতেন সৌমেন-সুখেনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের কাছে। সিআইডি জানিয়েছে, সব পরীক্ষার্থী অবশ্য এই সুবিধা পেতেন না। এসএমএসে উত্তর পাঠানোর জন্য মাথাপিছু ২-৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিতেন সৌমেন-সুখেনরা। ভুয়ো পরীক্ষার্থী অর্থাৎ, পরীক্ষার হলে যাঁরা প্রশ্নপত্র সমাধান করতেন, তাঁরা মাথাপিছু প্রায় এক লক্ষ টাকা নিতেন বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
সিআইডি জানিয়েছে, ভুয়ো পরীক্ষার্থীরা ধরা পড়ার পর থেকেই সৌমেন ও সুখেন বেপাত্তা হয়ে যান। এ দিন কলকাতায় ফিরলে তাঁদের পাকড়াও করেন গোয়েন্দারা। আজ, রবিবার রাজ্য স্টাফ সিলেকশন কমিশনের পরীক্ষা রয়েছে। পুলিশের দাবি, সে কারণেই এ দিন ফের কলকাতায় আসছিলেন দু’জনে। পুলিশের একটি অংশ বলছে, এই ঘটনায় আরও কয়েক জন জড়িত রয়েছে। ভুয়ো পরীক্ষার্থীদের জন্য জাল অ্যাডমিট কার্ড তৈরি করে, নদিয়ার এমন একটি কম্পিউটার সেন্টারের খোঁজও পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনাচক্রে, গত শনিবার রেলের পরীক্ষায় একটি জালিয়াতি চক্রের সন্ধান পায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স দফতর। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাওড়ার জগাছায় হানা দিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করে তারা। উদ্ধার হয় পুরনো পরীক্ষার একটি উত্তরপত্র, স্ক্যানার, ফটোকপি মেশিন এবং ৭১টি মোবাইল ফোন।
কিন্তু চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন তো একই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের আলাদা আলাদা ‘সেট’ থাকে। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে জালিয়াতি সম্ভব? সিআইডি জানিয়েছে, ১ ডিসেম্বরের পরীক্ষায় একাধিক সেট থাকলেও প্রতিটি সেটে নম্বর দেওয়া ছিল। ফলে হলে বসে যাঁরা প্রশ্নের উত্তর তৈরি করছিলেন, তাঁরাও সেটের নম্বরও একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছিলেন। অন্য পরীক্ষার্থীরাও একই ভাবে মোবাইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেন, তাঁদের কার কাছে কোন সেট রয়েছে। বাইরে থেকে তাঁদের কাছে সেই মতোই উত্তর পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। গোয়েন্দারা জানান, রবিবারের পরীক্ষাতেও নজরদারি চালাবেন তাঁরা।
তবে রাজ্য স্টাফ সিলেকশনের কমিশনের চেয়ারম্যান কে এস রাজেন্দ্রকুমার জানান, সিআইডি-র ধরপাকড়ের সঙ্গে রবিবারের পরীক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। ফলে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেবেন তাঁরা। |