ছাত্রদের কাছেও এখন হারছে করিমের বাগান

ডেম্পো ১ (হোলিচরণ)
মোহনবাগান ০
ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে আসা করিম বেঞ্চারিফাকে দেখে মনে হচ্ছিল, কোনও শ্মশানযাত্রী। যিনি ‘শবদেহ’ আগলে বসে রয়েছেন এবং মৃত্যুর কারণ বলতে বলতে ক্লান্ত!
ইদানীং মাঠে আসার সময় দু’টো গাড়ি আনছেন দু’কোটির ওডাফা ওকোলি। একটা নিজের গাড়ি। আর একটা ভাড়া করা বাইক। মোহনবাগান জিতলে গাড়িতে বাড়ি ফিরছেন। হারলে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বাইক চড়ে। শনিবার আবার ধাওয়া করা মিডিয়া আর ক্ষিপ্ত দর্শকদের ভয়ে পালাতে গিয়ে হেলমেটটা পরারও সময় পেলেন না।
গ্যালারির হাজার দশেক দর্শকের মধ্যে শ’পাঁচেক বিক্ষোভ দেখালেন চটি, জুতো হাতে। দু’একজন জলের বোতল আর ঢিলও ছুড়লেন ক্ষোভে। কেউ কেউ কাঁদলেন। মাথায় হাত দিয়ে গ্যালারিতে বসে রইলেন অনেকেই। টিম বাস বেরিয়ে যাওয়ার পর যাঁদের অনেকে আবার হতাশ গলায় বলে গেলেন, “এর পর পাড়ায় গিয়ে মুখ দেখাব কী করে? বাড়ি ফিরব কী করে?”

ডেম্পো-গুহায় বন্দি ওডাফা।
সমর্থকদের এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা যাঁদের, সেই কর্তারা কোথায়? বছরের পর বছর টিম ট্রফি না পেলেও যাঁরা বহাল তবিয়তে আলো করে এসে বসেন চেয়ারে! নানা নাটক করেন। টিভির বুমের সামনে, অর্বাচীনের মতো কথাবার্তা বলেন।
না, সেই কর্তারা কেউ কোথাও নেই। যুবভারতীতে দূরবিন দিয়ে খুঁজলেও যাঁদের এ দিন পাওয়া যেত না। মাঠে তো ওঁরা কেউ আসারই প্রয়োজন বোধ করেন না। কেউ বিদেশে, কেউ অসুস্থ, কেউ ব্যবসার নাম করে বাইরে, কেউ রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। নিজেদের অফিসের লোকজনকে ভোটার করে রেখেছেন ওঁরা। ক্লাবে বশংবদ লোকজন রেখেছেন। ভোটে জিতে টিকে থাকার সব রাস্তা পাকা। কোটি কোটি মানুষের আবেগের কোনও দামই নেই ওই কর্তাদের কাছে। থোড়াই কেয়ার! কেন ওরা মাঠে এসে সময় নষ্ট করবেন?
নিট ফল, যত দিন যাচ্ছে গঙ্গাপাড়ের ক্লাবের গঙ্গাপ্রাপ্তি আরও নিশ্চিত হচ্ছে। অবনমনে না পড়লেও আই লিগেই বাগানের যা হাল, প্রথম ছয়ে থাকাই মনে হচ্ছে কঠিন ।
শতবর্ষপ্রাচীন ক্লাবের প্রধান ফটকের পাশের ফেন্সিং বহু দিন ধরেই ধংসস্তূপ! বছর খানেক আগের ঝড়ের পর শহরের ক্ষতিগ্রস্ত সব জায়গার পুনর্নিমাণ হয়ে গেলেও বাগান আছে সেই তিমিরেই। আবর্জনায় ভর্তি।
মরিসিও আলফান্সোর ছাত্রদের কাছে ওডাফা-ক্রিস্টোফার-ডেনসনদের অসহায় আত্মসমর্পণের সঙ্গে কেমন যেন সেই ধ্বংসস্তূপ, আবর্জনার ছবি মিলে যায়। করিমের টিমে এত আবর্জনা যে, তা সরানোই মুশকিল। অন্তত কোচ সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। “আমার রিজার্ভ বেঞ্চে রক্ষণের দু’জন ভাল ফুটবলার আছে। কিন্তু মাঝমাঠে আর ফরোয়ার্ডে আমার হাতে তো তেমন পরিবর্তই নেই। যা আছে তা দিয়ে...?” তবে কর্তারা যে বলছেন, টিম আপনি বেছেছেন? কষ্টের হাসি হেসে জবাব আসে, “নো কমেন্টস।”
সুপারফ্লপ

হতাশায় শয্যা নিলেন মাঠেই।
ডেম্পো কবে শেষ জিতেছে? অস্থায়ী কোচ মরিসিও আলফান্সো মাথা চুলকে বললেন, “চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়েছিলাম। মনে হচ্ছে মাস দেড়েক আগে।” তার পর আবার? ক্রিসমাস গিফট নিয়ে গোয়া ফিরছেন? “এক পয়েন্ট পেলেই ভাবতাম জিতেছি। টিমের যা অবস্থা। সেখানে তিন পয়েন্ট। সব ছেলেদের কৃতিত্ব,” বলে দেন জেজে-হোলিচরণদের কোচ।
কারা হারাল তেরো কোটির বাগানকে? বলা যায় বেশির ভাগই শিক্ষানবিশ। ফেডারেশনের বন্ধ হয়ে যাওয়া অ্যারোজ-অ্যাকাডেমিরই তো সব ছাত্রপ্রণয় হালদার, হোলিচরণ, অলউইন জর্জ, নারায়ণ দাস, প্রবীর দাস। কারও বয়স কুড়ি, কারও তেইশ। এঁদের সঙ্গে যোগ হয়েছিল বাগান থেকে বিতাড়িত জুয়েল রাজার জেদ (যিনি ইনজুরি টাইমে লালকার্ড দেখলেন), ক্লিফোর্ড-সেলফউইনদের অভিজ্ঞতা। আর তাতেই ওডাফা-ক্রিস্টোফাররা শেষ। কাতসুমি হামাগুড়ি দিলেন। ডেনসন-রাম মালিকরা হতোদ্যম হয়ে পড়লেন। বাগানের এত খারাপ অবস্থা যে, এক সঙ্গে চার-পাঁচটা পাস খেলতেই পারলেন না করিমের ছেলেরা। ইচে যদি প্রধমার্ধের মাঝামাঝি গোললাইন থেকে অলউইন জর্জের তুলে দেওয়া বল বের না করতেন তা হলে ফলটা ২-০ হতই। কারণ এর কিছুক্ষণ পরই ডেম্পোর হোলিচরণ হাফ টার্নে অসাধারণ একটি গোল করে গেলেন। করিম দাবি করলেন, দ্বিতীয়ার্ধে নাকি তাঁর দল ভাল খেলেছে। শুনে অনেকে হেসে ফেললেন। কারণ ওডাফা বা খেপ খেলা ক্রিস্টোফার যে একটা শটও গোলে মারতে পারেননি!

বাইকে উঠে পলায়ন। শনিবার।
ডেম্পোর অস্থায়ী কোচ মরিসিও টিমটা সাজিয়েছিলেন পিরামিডের মতো করে। ৪-৩-২-১। মাঝমাঠ জমাট করে প্রতি আক্রমণের ফর্মুলা। ওডাফার পিছনে বঙ্গসন্তান প্রণয় আর ক্রিস্টোফারের পিছনে নারায়ণ। দুই বিদেশিকেই অকেজো করে দিলেন দুই বঙ্গসন্তান। সবচেয়ে বড় কথা, ডেম্পোর গতির সঙ্গে মোহনবাগানের পার্থক্য ছিল অনেকটা দুরন্ত ট্রেনের সঙ্গে গরুর গাড়ির মতো। ক্লিফোর্ড আর অলউইনের ডায়াগনাল দৌড় এবং জুয়েলের ধ্বংসাত্মক ফুটবল করিমের টিমের কঙ্কালটা আরও বের করে দিয়ে গেল। পঙ্কজ মৌলা, রাম মালিক, মণীশ ভার্গবদের দিয়ে যা সামাল দেওয়া ছিল দুঃসাধ্য। অঘটন তাই আটকানো গেল না।
বাগানে তাই রজনীগন্ধা বা হাসনুহানা নয়, ফুটল যা সেটা ক্যাকটাস!

মোহনবাগান: সন্দীপ, প্রীতম, কিংশুক (আইবর), ইচে, সৌভিক, রাম (পঙ্কজ), ডেনসন (সাবিথ), কাতসুমি, মণীশ, ওডাফা, ক্রিস্টোফার।

যে যেখানে
১) বেঙ্গালুরু (১৩ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট)
৮) ইস্টবেঙ্গল (১০ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট)
১০) মোহনবাগান (১৪ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট)
১১) মহমেডান (১২ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট)
ছবি: উৎপল সরকার।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.