পুলিশের জালে ধরা পড়ল সাত জনের একটি বাংলাদেশি ডাকাত দল। পুলিশ জানায়, এই দলটি মাঝে মধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতা ও দিল্লিতে ডাকাতি করে চম্পট দিত। এ বারেও একই উদ্দেশ্য নিয়ে সোনারপুর থানার নয়াবাদ এলাকায় ডেরা বেঁধেছিল দলটি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাত দলের কাছে পাওয়া একটি মোবাইলের সূত্র ধরে বছর দুয়েক আগে দিল্লির এক ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনারও কিনারা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ জানায়, দিল্লির ফর্জবাজার থানার নিউ সঞ্জয় বিশ্বাস নগর এলাকায় বছর দুই আগে আরশাদ খান নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতি হয়। বাড়ির তালা ভেঙে লোকজনকে মারধর করে লুঠপাট চালায় এক ডাকাত দল। অভিযোগ, সেই সময়ে আরশাদের মেয়ের শ্লীলতাহানি করে ওই দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ জানায়, সপ্তাহ তিনেক আগে বাংলাদেশের খুলনা থেকে আসা ওই ডাকাত দলটিকে ধরা হয়। ওই দলের মহম্মদ ফারুক নামে এক জনের কাছে পাওয়া মোবাইলের নম্বরের তালিকা যাচাই করে একের পর এক ফোন করতে শুরু করে পুলিশ। তার মধ্যে একটি নম্বর ছিল দিল্লির। সেই নম্বরে ফোন করতেই জনৈক ব্যক্তি বলতে থাকেন, ‘হাম কিসিকো বোলেঙ্গে নেহি। মেরা ঘর ফির মাত আও।’ ওই ব্যক্তিকে জানানো হয়, ফোন করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। শুনে তিনি জানান, তাঁর নাম আরশাদ খান এবং তাঁর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
পুলিশ জানায়, “লুঠপাটের সময় ডাকাতেরা আরশাদের ফোন কেড়ে নিয়েছিল এবং নম্বরটা রেখে দিয়েছিল। মোবাইল চুরি যাওয়ায় একই নম্বরের নতুন একটি সিম কার্ড নেন আরশাদ। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, মাঝে-মধ্যেই তাঁকে ফোন করে ফারুক হুমকি দিয়ে বলত, কাউকে কিছু বললে তারা ফের লুঠ চালাবে। ডাকাতির-মামলা তুলে নেওয়ার জন্যেও চাপ দিত। পুলিশ জানায়, আরশাদের বাড়িতে ডাকাতির পরে দিল্লি পুলিশ জোরদার তল্লাশি চালিয়েছিল। সেই খবর স্থানীয় সোর্স মারফৎ ফারুকের দল জেনে যায়। এর পর থেকেই ফোনে আরশাদকে শাসানি দিতে থাকে ফারুক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “দিল্লি পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ওরা কলকাতায় আসছে।” ধৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতি-সহ অনুপ্রবেশের মামলা করা হয়েছে। ধৃতদের জেরায় জানা গিয়েছে, দিল্লি ও কলকাতা-সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২০টি ডাকাতি করেছে এই দলটি। যখন যেখানে ডাকাতি করত, স্থানীয় দৃষ্কৃতীদের সঙ্গে নিত তারা। মাস দুয়েক আগে রাজপুরের এক বাড়িতে মারধর ও লুঠপাট চালিয়েছে বলে জেরায় স্বীকার করেছে ধৃতেরা। ওই বাড়ির গৃহকর্তা অর্নিবাণ ঘোষ ধৃতদের শনাক্ত করেছেন বলে দাবি পুলিশের। ধৃতদের জেরা করে স্থানীয় কয়েকজন ডাকাতকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান প্রবীণ ত্রিপাঠী। উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় আরও কিছু ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় ধৃতদের সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। |