ভারতে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ-এর বাজার ধরতে এ রাজ্যের নির্মাতাদের সঙ্গে হাত মেলাতে চায় জাপানি সংস্থাগুলি। সম্প্রতি মুম্বইয়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সম্মেলন ‘ইন্ডিয়া সফ্ট’-এ বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সেরে ফেলেছেন জাপানি মোবাইল কনটেন্ট ফোরামের অন্যতম কর্তা কোজি ইতো। সরকারি সূত্রে খবর, এ বার রাজ্যে এসে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য শীঘ্রই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ই-মেল পাঠাতে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরও।
এমনিতে অ্যাপ মানে অ্যাপ্লিকেশন। সহজ কথায়, নির্দিষ্ট কাজের জন্যই যা তৈরি। মোবাইলে ব্যবহারের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি এই ধরনের বিভিন্ন অ্যাপে নানা সুবিধা মেলে। কখনও অ্যাপে ক্লিক্ করে ফোনেই পড়ে ফেলা যায় খবরের কাগজ। কখনও আবার খেলা যায় মজাদার গেম। দুনিয়া জুড়ে এই অ্যাপের বাজার ধরার জন্যই পুরোদস্তুর ঝাঁপাতে চাইছে জাপান। যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ গতিতে বাড়তে থাকা ভারতের বাজারও।
অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও অ্যাপের বাজার কব্জা করতে জাপানি সংস্থাগুলির প্রধান বাজি বিভিন্ন গেম-অ্যাপ। তা তৈরির প্রযুক্তিতেও তারা দড়। কিন্তু গ্রাহকদের মন জয়ের জন্য প্রযুক্তির পাশাপাশি শক্তিশালী ‘কনটেন্ট’ (গেমের গল্প, পারিপার্শ্বিকতা ইত্যাদি)-এর উপরেও জোর দিচ্ছে তারা। চাইছে তাকে স্থানীয় চাহিদার সঙ্গে যথাসম্ভব মানানসই করতে। যাতে গুরুত্ব পায় গ্রাহকদের পছন্দ-অপছন্দ। আর ঠিক এই কারণেই ভারতের বাজার ধরতে এ দেশের অ্যাপ নির্মাতাদের সঙ্গে হাত মেলাতে চাইছে জাপানি সংস্থাগুলি। পরিকল্পনায় উঠে আসছে রাজ্যের নামও।
এ রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলও মনে করে, অ্যাপ তৈরির জন্য প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। আর পশ্চিমবঙ্গে তার জোগান পর্যাপ্ত। যে- কারণে নিউক্লিয়াস মাইন্ডস, অবজেক্টসল টেকনোলজিসের মতো নতুন সংস্থা ইতিমধ্যেই বাজারে নেমেছে। সঙ্গে রয়েছে ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চার্সের মতো পুরনো সংস্থাও। যারা মূলত বিনোদন শিল্পের জন্য অ্যাপ তৈরি করছে। ই-লার্নিং ক্ষেত্রে অ্যাপ তৈরি শুরু করেছে ই-থিঙ্ক। সংস্থাটির অন্যতম কর্তা কল্যাণ কর জানান, এই ব্যবসার প্রধান তিনটি শর্ত হল উচ্চ মানের প্রযুক্তি ব্যবহার, সমস্ত প্ল্যাটফর্মের জন্য উপযুক্ত অ্যাপ তৈরি এবং অবশ্যই সাইবার নিরাপত্তা। তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার উপযুক্ত মানবসম্পদ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তা ছাড়া, এ রাজ্যের সঙ্গে অনেক আগে থেকে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকার দরুন এই নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রেও জাপানি লগ্নিকারীরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকবেন।”
বিদেশের বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণের দায়িত্বে থাকা ইতো যে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সেরে ফেলেছেন, তার একটা কারণ যদি দক্ষ মানবসম্পদ হয়, তবে অন্যটি অবশ্যই ভারতে অ্যাপের সম্ভাবনাময় বাজার। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এ দেশে প্রতি মাসে শুধু হোয়াটস্অ্যাপের গ্রাহক সংখ্যাই বাড়ছে এক কোটি করে। তা ছাড়া, দেশে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার যত বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অ্যাপের জনপ্রিয়তাও তরতরিয়ে ঊর্ধ্বমুখী। চলতি বছরে দেশে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬.৫ কোটির বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৬ সালে তা হবে ৩৮ কোটি।
ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালেই দেশে অ্যাপের বাজার ১,৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই বাজারের বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৯,০০০ অ্যাপ সংস্থা রয়েছে। যার অধিকাংশই তৈরি হয়েছে গত তিন বছরে।
এ বার এই বাজার আর মানবসম্পদের টানেই ভারতের দিকে নজর দিচ্ছে জাপানি অ্যাপ সংস্থাগুলি। হাত বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে।
কম দামি ফোনেও অ্যাপস। শুধু মাত্র দামি স্মার্ট ফোনেই অ্যাপস-এর সুবিধা নয়, তুলনায় কম দামি ফোনেও যাবতীয় অ্যাপস ভরে ক্রেতা টানতে চাইছে নোকিয়া। নিজেদের পুরনো জায়গা ফিরে পেতে সব পকেটের মাপেই স্মার্ট ফোন তৈরি করছে তারা। মাইক্রোসফট্-এর হাতে নোকিয়া আসার পরে যাতে উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মের সদ্ব্যবহার করা যায়, সে জন্যও তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন অ্যাপস। ভারতের বাজার ধরতে নোকিয়ার ‘আশা’ সিরিজের নতুন ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ, উই চ্যাট, লাইন, ইবাডি, নিমবাজ-এর মতো মেসেজিং অ্যাপস-এর পাশাপাশি থাকছে অন্যান্য অ্যাপসও। সম্প্রতি কলকাতা থেকেই আশা ৫০২, ৫০০ এবং ৫০৩ মডেল বাজারে ছাড়া হল। |