পথ দেখিয়েছে আফরোজা। সেই পথেই গত দেড় মাসে মুক্তি পেয়েছেন ৫১ জন বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে ৪৬ জন মহিলা ও শিশু, পাঁচ জন পুরুষ। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর পথে এই পদক্ষেপ নতুন দিশা দেখাচ্ছে বলে পূর্ব ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ-কর্তাদের দাবি।
বেআইনি ভাবে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ার অপরাধে ২০০৯ সালে মা মানোয়ারা বেগমের সঙ্গে জেলে যেতে হয়েছিল পাঁচ বছরের আফরোজাকে। মানোয়ারা বেগমের দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। অসুস্থ হয়ে সংশোধনাগারেই মৃত্যু হয় মানোয়ারার। একা হয়ে পড়ে ছোট্ট আফরোজা। কারা দফতরের তদানীন্তন আইজি বংশীধর শর্মা উদ্যোগী হয়ে আফরোজাকে পাঠান রানাঘাটের এক বেসরকারি হোমে। সেখানে শুরু হয় মেয়েটির পড়াশোনাও। শর্মা এখন বিএসএফের এডিজি (পূর্বাঞ্চল)। কয়েক মাস আগে তিনি নিজেই সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে আফরোজাকে পৌঁছে দেন তার পরিবারের কাছে।
বিএসএফ সূত্রের খবর, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই উদ্যোগে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ। তার পরে সীমান্তে ধরা পড়া নির্দোষ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সেখান থেকেই মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শর্মা জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দু’পারে বেশির ভাগ জায়গাতেই জনবসতি খুব কাছাকাছি। ফলে মাঝেমধ্যেই অনেক মহিলা ও শিশু ভুল করে সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসেন। দালালের খপ্পরে পড়েও অনেকে ঢুকে পড়েন ভারতে। কোনও অপরাধের সঙ্গে হয়তো তাঁদের যোগ নেই। ওই বিএসএফ-কর্তা বলেন, “ঠিক হয়েছে, এই সব ক্ষেত্রে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ বা বিজিবি-র সঙ্গে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ করে সঙ্গে সঙ্গেই ওই সব মহিলা ও শিশুকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।”
দিল্লির এই সিদ্ধান্তকে ঢাকাও স্বাগত জানিয়েছে বলে বিএসএফ সূত্রের খবর। তার জেরেই গত ২১ সেপ্টেম্বর ১৯ জন মহিলা, ২৭টি শিশু এবং সেই সঙ্গে পাঁচ জন বাংলাদেশি পুরুষকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ অফিসারেরা জানান, মাসখানেক আগে হিলি সীমান্তে ববিতা রায় (২৮), অপর্ণা রায় (৪০) এবং নিতু (১১) এ দেশে ঢুকতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন। তাঁদের সঙ্গে ধরা পড়ে বিধান পাল নামের এক ব্যক্তিও। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিএসএফ জওয়ানেরা জানতে পারেন, বিধান আসলে পাচারকারী। সে ওই দুই মহিলা এবং বালিকাটিকে এ দেশে পাচার করছিল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ববিতা, অপর্ণা ও নিতুকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় বিএসএফ। বিধানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে খুশি রাজ্যের কারা দফতরও। এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলে প্রায় চার হাজার বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন। কারা দফতর সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে ৭০০ বন্দির মুক্তির আদেশ হয়ে গিয়েছে। বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দি যথাক্রমে ৯০০ এবং ২২০০ জন। তাঁদের সঙ্গে শিশু রয়েছে অন্তত ২০০। আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা হল, এ দেশে ঢুকে পড়ার দায়ে যে-সব বাংলাদেশি জেল খাটেন, তাঁদের অধিকাংশেরই অপরাধের নজির নেই। কিন্তু দিনের পর দিন তাঁদের জেলে থাকতে হয়।” এই নিয়ে কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্রের কাছে বারবার দরবার করেছে রাজ্যের কারা দফতর। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে এ রাজ্যের জেলগুলিতে বাংলাদেশি বন্দির ভিড় কমবে বলে মনে করছেন কারা দফতরের কর্তারা।
|