আজ, শনিবার থেকে কোচবিহারে রান্নার গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরদের দোকানে গ্রাহকদের জন্য আধারের বিভিন্ন ‘বায়োমেট্রিক’ (ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেওয়া এবং চোখের মণির স্ক্যান করা) তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হচ্ছে। শুক্রবার জেলাশাসক, জনগণনা দফতরের কর্তা, তেল সংস্থার প্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। আপাতত স্থির হয়েছে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই প্রক্রিয়া। তবে আগামিকাল, রবিবার এক দিনের জন্য তা বন্ধ থাকবে। তেল সংস্থার আধিকারিক সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় বলেন, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকির টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া কোচবিহারেই প্রথম শুরু হয়েছে। আজ, শনিবার থেকে ছবি তোলার কাজও শুরু হবে।”
কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে গত ১ নভেম্বর এবং হুগলিতে ১ ডিসেম্বর থেকে আধার নম্বরের ভিত্তিতে গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্র। বহু গ্রাহকই যেমন সেই ব্যবস্থায় ভর্তুকির টাকা পাচ্ছেন তেমনই অভিযোগ, এখনও অনেকেরই আধার নম্বর তৈরির জন্য নাম নথিভুক্তি ও বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয়নি। এ জন্য যে শিবির হওয়ার কথা, অনেক জায়গাতেই তা এখনও হয়নি।
যে সব গ্রাহকের এখনও নাম নথিভুক্তি বা বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ বাকি, জরুরি ভিত্তিতে শুধুমাত্র তাঁদের আধার নম্বর তৈরির জন্য গ্যাসের দোকানেই বিশেষ শিবির চালুর কথা ভাবা হয়েছিল। গোড়ায় কলকাতায় প্রথম ওই ব্যবস্থা চালুর কথা থাকলেও পরে ঠিক হয় কোচবিহারে পাইলট প্রকল্প হিসেবে তা শুরু হবে। কারণ জনগণনা দফতর ও আধার কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, কোচবিহারে ইতিমধ্যেই জনসংখ্যার প্রায় ৮০%-এর নাম নথিভুক্তি ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। প্রায় ৭২%-এর আধার নম্বরও তৈরি। ফলে ওই নথিভুক্তি ও বায়োমেট্রিক তথ্য তালিকায় বাদ থাকা মানুষের সংখ্যা অনেক কম হওয়ার সম্ভাবনা। তাই সেখানে এই শিবির চালু করা সহজতর। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই পরে কলকাতা বা হাওড়ায় শিবির আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
তেল সংস্থা ও সরকারি সূত্রের খবর, কোচবিহারে ইন্ডেন গ্যাস, এইচপি গ্যাস ও ভারত গ্যাসে মিলিয়ে মোট এক লক্ষ ৩৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার ইতিমধ্যেই তেল সংস্থাকে তাঁদের আধার নম্বর জানিয়েছেন। মোট ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা ১৯। আজ প্রথমে ১৩টি দোকানে এই শিবির চালু হবে। সোমবার থেকে চালু হবে আরও তিনটিতে। তবে আপাতত ইন্ডেন-এর তিনটি ডিস্ট্রিবিউটরের দোকান বাকি থাকবে। কারণ সেগুলি সম্প্রতি চালু হয়েছে ও তাদের গ্রাহক সংখ্যা খুবই কম। তাঁদের জন্য হয় অন্য দোকানে বা পরে সেই দোকানেই শিবির করা হবে। তবে ওই দোকানে গ্রাহকদের পরিবারের অন্য সদস্যরা দিয়ে ছবি তোলাতে পারবেন না। শুধুমাত্র গ্রাহকেরাই সেই সুবিধা পাবেন।
ছবি তোলাতে গ্রাহকেরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দোকানে যাবেন নাকি ডিস্ট্রিবিউটরদের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করবেন তা নিয়ে অবশ্য কিছুটা ধোঁয়াশাই রয়েছে। কারণ এর আগে ভাবা হয়েছিল, কোন গ্রাহককে কবে দোকানে যেতে হবে তা ডিস্ট্রিবিউটরেরাই তাঁদের জানাবেন। এ দিনের বৈঠকের পর জনগণনা দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে সেটা ঠিক হবে।
যদিও তেল সংস্থা সূত্রের খবর, গ্রাহকেরা নিজেরাই দোকানে যাবেন। সঙ্গে নিতে হবে গ্যাসের সংযোগের নথি (‘ডিপোজিট ভাউচার’) অথবা ‘ব্লু-বুক’ এবং সরকারি কোনও পরিচয়পত্র। এরপর জনগণনার তালিকায় সেই গ্রাহকের নাম থাকলে দেখা হবে তাঁর আধার নম্বর তৈরি হয়েছে কি না। তা হয়ে থাকলে গ্রাহককে তা জানিয়ে দিয়ে ইন্টারনেট থেকে ই-আধার-এর প্রিন্ট নিয়ে নিতে বলা হবে। কিন্তু যদি দেখা যায় গ্রাহকের নাম নথিভুক্তি হয়নি ও তাঁর বায়োমেট্রিক তথ্য নেই, তাহলে সেখানেই সে সব সংগ্রহ করা হবে। এবং সেদিনই এই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে আধার কর্তৃপক্ষের কাছে যাতে তারা দ্রুত তাঁদের আধার নম্বর তৈরি করতে পারে।
কারও যদি জনগণনার তালিকায় নাম না থাকে? সরকারি সূত্রের বক্তব্য, গ্রাহককে ওই শিবিরেই জনগণনার আবেদনপত্র (এনপিআর ফর্ম) দেবেন সরকারি প্রতিনিধি। এবং সেখানে উপস্থিত জনগণনা দফতর বা জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি তা খতিয়ে দেখে তাঁর নাম নথিভুক্ত করবেন। তারপর আগের নিয়ম মতোই তাঁর আধারের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হবে এবং তা আধার কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। |