|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
এখনও ভীষণ প্রাসঙ্গিক |
তাপস সিংহ |
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে যত চর্চা হয়েছে, দেশভাগের ইতিহাস নিয়ে ততটা চর্চা হয়েছে কি? আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদদের কথা জানি, ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তাঁদের অক্লান্ত লড়াইয়ের কথা জানি। কিন্তু, সেই স্বাধীনতার মূল্য চোকাতে হয়েছে দেশভাগ দিয়ে! ভিটেমাটি ফেলে, বহু পুরুষ ধরে চারিয়ে যাওয়া শিকড় নিজের হাতে কেটে যে অসংখ্য মানুষ তাঁদের নিজস্ব ভুবনডাঙা পিছনে ফেলে রেখে চলে এলেন, তাঁদের কথা কি খুব বেশি লেখা হয়েছে?
এই প্রশ্নটা নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে পুরনো একটি গ্রন্থের নবতম ও পরিবর্ধিত সংস্করণ। হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বাস্তু ১৯৭০-এ প্রথম প্রকাশ করে সাহিত্য সংসদ। ৪৩ বছর পরে বইটি নতুন করে প্রকাশ করেছে দীপ প্রকাশন (৩০০.০০)। সংযোজিত হয়েছে লেখকপুত্র অলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাবার কথা’ এবং মধুময় পালের ‘উত্তরকথা’। হিরণ্ময়বাবুর পোশাকি পরিচয় ছিল, তিনি আই সি এস। তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় তাঁকে উদ্বাস্তু, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন দফতরের সচিব ও মহাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। ১৯৪৯-এর শেষের দিকে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা শুরু হয়। ১৯৪৯-এর শেষ এবং ১৯৫০-এর প্রথম দু’মাসে পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রায় দু’লক্ষ হিন্দু উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। সেই উদ্বাস্তুদের সুষ্ঠু পুনর্বাসন, তাঁদের জন্য যতটা সম্ভব সহনীয় পরিবেশ তৈরি করা, সব ফেলে এ পারে চলে আসা মানুষগুলো যাতে আরও একটু মানবিক ব্যবহার পান, তার জন্য প্রাণপাত করেছিলেন হিরণ্ময়।
সেই পরিচয় বিধৃত আছে তাঁর উদ্বাস্তু গ্রন্থে। শুধু সরকারি তথ্য নয়, আছে ব্যক্তিগত অনুভূতির ছোঁয়া। আসলে, হিরণ্ময় তো নিছক এক জন আমলা ছিলেন না! গত শতকের তিরিশের দশক থেকে নিরন্তর সাহিত্যচর্চা করে গিয়েছেন তিনি। ৪২টি নানা ধরনের গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। প্রথম প্রকাশের সময় উদ্বাস্তু গ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন, ‘যারা স্বাধীনতা লাভ করবার জন্য আন্দোলন করল, মরণপণ যুদ্ধ করল, প্রাণ দিল, তারা দেখল পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে বলে ইংরেজ ভারতত্যাগ করলেও তারা প্রকৃত স্বাধীনতা পেল না। কারণ ভারত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে পাকিস্তানের সৃষ্টি হবার ফলে সেখানে হিন্দুর প্রকৃত স্বাধীনতা ভোগের সম্ভাবনা রইল না।’ এত দিন পরে, আজকের ভিন্ন প্রেক্ষাপটেও কী ভীষণ প্রাসঙ্গিক উদ্বাস্তু! |
|
|
|
|
|