|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
রবীন্দ্রসংগীত ‘শিক্ষিতদের গান’ |
গত বছরের গোড়ায় তাঁর রবীন্দ্রনাথের গান ও অন্যান্য বইটির (প্রতিভাস, ৩০০.০০) ‘কথামুখ’ লিখেছিলেন প্রয়াত সুভাষ চৌধুরী: ‘সংগীত বিষয়ক আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় দেশ পত্রিকায় সাগরময় ঘোষ-এর আমন্ত্রণে।’ সে-লেখাটি অবশ্য হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু যেগুলি সংকলিত হল, তার মূল্য কম নয় রবীন্দ্রগানের শ্রোতা বা পাঠকের কাছে। সুভাষবাবু ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতবেত্তা, তাঁর রচনা আমাদের দীক্ষিত করে কেমন ভাবে শুনতে হয় কবির লেখা ও সুর-করা গান। তিনি লিখছেন, ‘রবীন্দ্রসংগীতের মূল্যায়নে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন গানের বাণীর বিন্যাসে, যতি স্থির করায় আর লয় নির্বাচনে।... এখানে বাণীবিন্যাসের মতো শব্দ উচ্চারণ, সাংগীতিক অলংকরণ প্রয়োগ কৌশল, লয় নির্বাচন কোনোটির গুরুত্ব কম নয়।... রবীন্দ্রনাথ নিজেই স্পষ্ট করে বলছেন তিনি কোনো অবিমিশ্র সংগীতের রূপ রচনা করতে চাননি। সংগীতকে কাব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন যেখানে সেখানে রাগসংগীতের শুদ্ধতার প্রশ্ন কতখানি যুক্তিযুক্ত তা ভাববার প্রয়োজন আছে।... বাক্যে শব্দের গুরুত্ব অনুসারে সুর ব্যবহৃত হয়েছে।’ রবীন্দ্রগান নিয়ে তাঁর এ-বইতে আলোচনার সঙ্গে রয়েছে সাহানাদেবী ও সত্যজিত্ রায়ের সাক্ষাত্কার। সেখানে সত্যজিতের মন্তব্য, ‘শিক্ষা-দীক্ষারও অনেকখানি তফাত হয়ে গেছে। ভীষণ তফাত রয়ে গেছে এবং সেইখানে আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথের গান হচ্ছে শিক্ষিতদের গান... ।’
পবিত্র সরকার তাঁর গানের ঝরনাতলায় (প্রতিভাস, ২০০.০০) বইটি উত্সর্গ করেছেন সুভাষ চৌধুরীকে, ভূমিকা-য় লিখেছেন ‘যাঁদের কাছে আমি রবীন্দ্রসংগীতের মমার্থ বোঝার অনুশীলন করেছি, তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য প্রয়াত সুভাষ চৌধুরী।’ আদ্যন্ত রবীন্দ্রগান নিয়ে এ-বইতে পবিত্রবাবু এক দিকে যেমন তাঁর ব্যক্তিগত উত্তাপের কথা লিখেছেন, অন্য দিকে উঠে এসেছে মৌলিক দৃষ্টিকোণ ও জিজ্ঞাসা। একটি মন্তব্য: ‘কথার অর্থ ও ব্যঞ্জনা কত দূর যেতে পারে, জীবনের কত বিচিত্র ও সুকুমার অনুভব-বিন্দুকে তা ধরতে পারে তার এক চূড়ান্ত পরীক্ষা রবীন্দ্রসংগীতে। সুর কথাকে কতভাবে সমর্থন করতে পারে তারও এক চূড়ান্ত পরীক্ষা রবীন্দ্রসংগীতে।’
‘রবীন্দ্রসংগীতের উচ্চারণ’ নিয়ে একটি অসামান্য রচনায় জানাচ্ছেন ‘কোনো-কোনো ক্ষেত্রে সে উচ্চারণ মুখের ভাষার উচ্চারণ থেকে যথেষ্টই আলাদা, আবার কোনো-কোনো ক্ষেত্রে খুব কাছাকাছি হয়েও সম্পূর্ণ এক নয়। তাতে শুধু উচ্চারণের ব্যাকরণ নয়, উচ্চারণের নন্দনতত্ত্বেরও একটা ভূমিকা থাকে।’
প্রতিভাস থেকেই বেরিয়েছে সুধীর চক্রবর্তীর তিনটি পুরনো বইয়ের পরিমার্জিত সংস্করণ। একটি রবীন্দ্রগান-সংক্রান্ত গানের লীলার সেই কিনারে (২৫০.০০)। অন্য দু’টি বাংলা গানের চার দিগন্ত (১৭৫.০০) ও বাংলা গানের সন্ধানে (২৫০.০০)। এতে যেমন এক রসিকের অনুসন্ধিত্সা ধরা পড়ে; তেমনই তাঁর অনবদ্য লেখনীতে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ-সমসাময়িক, এবং রবীন্দ্রোত্তর বাংলা গানের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও সমবায়িক বহুমুখী বিকাশরেখায় দেশ-কাল-সমাজেরও আবিষ্কার চিহ্নিত হয়।
ওয়রশিপ ব্যান্ড, চার্চ ব্যান্ড এবং কয়্যার কী করে জুড়ে গেল খ্রিস্টীয় ধর্মসংগীতে? রাখালিয়া বাঁশিরই বা ভূমিকা কী ইহুদি ধর্মসংগীতে? এমনই সব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা প্রসেনজিত্ দাশগুপ্তের মহাসিন্ধুর ও পার থেকে (পারুল, ২০০.০০)। হিন্দু, বৌদ্ধ, প্রাচীন মিশরীয়, ইসলাম প্রভৃতি পৃথিবীর দশটি ধর্মের সংগীতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বিবর্তন নিয়ে এমন বই বাংলা ভাষায় দুর্লভ। রয়েছে সবিস্তার উল্লেখপঞ্জি ও পাঠপঞ্জিও।
|
|
|
|
|
|