|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ |
পার্ক স্ট্রিট
তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ |
ছিল হরিণ বাগান। লোকমুখে বেরিয়াল গ্রাউন্ড রোড। তাই-ই কিনা হয়ে দাঁড়াল
অভিজাত কসমোপলিস রাজপথ। তারই আনাচে কানাচে কলম হাতে সুবোধ সরকার |
পার্ক স্ট্রিটকে ঠিক রাস্তা বলে ভাবতে ভাল লাগে না। সে হল বড়লোকের বখাটে সন্তান। লন্ডনের ওয়েস্টমিন্স্টারে না হয়ে গঙ্গা থেকে পনেরো মিনিট দূরে জন্মেই অর্ধেক সাহেব হয়ে গেল। কলোনিয়াল মাতৃজঠর থেকে নির্গত হল। বাবা সাহেব, মা বাঙালি, একেই বলে বাংলা মায়ের অ্যাংলো ছেলে।
ছেলে না মেয়ে? রাস্তার আবার জেন্ডার হয় নাকি? পেট থেকে পড়েই তো কেউ সুন্দরী হয় না। মেয়েরা সুন্দরী হয় অনেক ঘষাঘষি করে। রাস্তা সুন্দরী হয় অনেক খোঁড়াখুঁড়ি করে।
পার্ক স্ট্রিট প্রথমে ছিল একটা বাগান। হরিণ বাগান। এক সাহেবের বাগান। এই মেম আসছে, সাহেব আসছে, পার্টি হচ্ছে, রাত তিনটের সময় ফুর্তি হচ্ছে।
এলিজা ইম্পে লোকটার নাম। ১৭৭৩ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস হলেন। হ্যাঁ, তখন সুপ্রিম কোর্ট এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুরেই ছিল। এই এলিজা নামের লোকটাকে বলা হত ‘স্যার’ এলিজা ইম্পে।
গুলি মারো সাহেবের মুখে। এই লোকটাই আমাদের নন্দকুমারকে ফাঁসি দিয়েছিল। পার্ক স্ট্রিটের কী স্টেটাস, কী খাতির তখন, কেননা তার মালিক ফাঁসি দিয়েছে নন্দকুমারকে। লোকটা ছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের ‘হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সঙ’। চাটুকার বললে কম বলা হয়, আসলে লোকটা ছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের ‘হেঞ্চম্যান’। মানে যাঁরা বড় হন, তাঁদের কয়েকটা ‘হেঞ্চম্যান’ লাগে। তাঁরা কোর্টে, সেনেটে, ইউজিসি-তে, বিধানসভায় ঘুরে বেড়ান, তাদেরকে দিয়ে খারাপ কাজগুলো করিয়ে নিতে হয়, যেগুলো নিজে করলে গদি টলে যেতে পারে। স্যার এলিজা লোকটা জাঁহাবাজ টেঁটিয়া ছিল। হরিণ পুষলেই তো মানুষ হরিণ হয়ে যায় না!
লোকে বেরিয়াল গ্রাউন্ড রোড বলত। কেন বলবে না? তখন কতগুলো কবরখানা? এদিকে একটা ফ্রেঞ্চ তাইরেটা কবরখানা যেখানে কলকাতার বহু সাধের বড়লোকি হাই রাইজ উঠে দাঁড়াল পঞ্চাশের দশকেই। ও দিকে মল্লিকবাজারের দিকে প্রথমে তিন খানা কবরভূমি ছিল, এখন যেটা দাঁড়িয়ে আছে ‘ব্রেন অ্যান্ড স্পাইন’ হসপিটালের নেক্সস্ট ডোর নেবার হয়ে, সেখানে মাইকেলের সমাধি। |
|
শুনেছি মাইকেলের জন্মদিনে বাঙালি তরুণ কবিরা পিঠে গিটার নিয়ে গাঁজা খেতে যায়, অ্যাপলিনেয়ারের কবিতা পড়ে শোনায়। বাঙালির আর কিচ্ছু হবে না, সত্তর বছর আগেকার আঁতলামো সেই অ্যাপলিনেয়ারেই আটকে আছে। পার্ক স্ট্রিটকে দেখেও শিখতে পারে... কী ছিল, আর কী হনু। ছিল হরিণের বাগান। হয়ে গেল ইংরেজ ভারতের সবচেয়ে গ্লামারাস রাস্তা।
ব্লু ফক্সে নাচ গান, উদ্দাম স্যাক্সোফোন, ম্যুলা রুজের সামনে পাইপ মুখে দীর্ঘদেহী পার্সি বণিক, ভিক্টোরিয়ান ইংরেজি আউড়ে চলেছেন এ দৃশ্য আর দেখা যায় না। এই লোকটি থাকত লিটল রাসেল স্ট্রিটে, যেখানে কয়েক ঘর পার্সি ছিল। ইরান থেকে ধাক্কা খেয়ে যখন পার্সিরা এ দেশে আসে, তখন এক ভারতীয় রাজা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমরা কী চাও এ দেশে?’
এক পার্সি বিদ্বান এক গেলাস দুধ দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা হলেন দুধ, আর আমরা’ বলে এক চামচ চিনি মিশিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমরা হলাম চিনি। এবার নাড়ুন, একই থাকবে, একটুও উপচে পড়বে না।’
কিন্তু ব্লু ফক্স আর ম্যুলা রুজের মাঝখানে একজন বাঁশিওয়ালাকে বাঁশি বাজাতে শুনেছি। কী অপূর্ব কী করুণ সেই সুর, যেন বলছে, ‘আমাকে একটু দাঁড়াতে দাও, ঠেলে সরিয়ে দিও না’। কেউ কাউকে দাঁড়াতে দেয় না, দাঁড়াতে হয়। লোকটা গতকালও এসে দাঁড়িয়েছিল, রোগা, খেতে না পাওয়া, সভ্যতার ধাক্কা খেতে খেতে দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশিওয়ালাকেই আমার মনে হয় এই পৃথিবীর শেষ টাইটান।
মিস শেফালির উত্থান পার্ক স্ট্রিটে না হোক, তার অল্প দূরে চৌরঙ্গি পাড়ায়। তখন সারা কলকাতা তাঁর নেশায় আচ্ছন্ন। তাঁর কম জামা-পরা নাচ সে সময় কলকাতাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সত্যজিৎ রায়ও তাঁর নাচ দেখে ছবিতে নিয়েছিলেন। এত বড় সম্মান শেফালিকে আর কেউ দিয়েছেন কি!
শেফালিকে কোনও দিন নাচতে দেখেনি পার্ক স্ট্রিট। কিন্তু তাঁর হাতে তৈরি বহু তন্বী আসর জমিয়েছেন এ মহল্লায়। আর তাই এক সময়ের এই ডান্স-ক্যুইনেরও নিয়মিত যাতায়াত ছিল এখানে। শেফালি বলতেন, আমার কোমরে ছুরি চালান, রক্ত বেরবে না। বেরবে নাচ। এক সন্ধেও পারফর্ম না করে মিস শেফালি আজ পর্যন্ত বোধ হয় পার্ক স্ট্রিটের অন্যতম সেরা আইকন। যাকে যেখানে মানায়।
ঊষা উত্থুপ এক সময় ট্রিঙ্কাজ-এ গান গাইতেন। তখন তিনি উত্থুপ নন, আইয়ার। সে দিন গত। আমি একদিন ‘সামহোয়ার এলস্’-এ ঢুকেছিলাম, গান শুনব বলে। পাঁচ মিনিট থেকে বেরিয়ে এসেছি। না হলে ইএনটি দেখাতে হত।
‘কৃত্তিবাস’-এর গরলপায়ী, চন্দ্রভুক সুনীল-শক্তি খুব একটা পার্ক স্ট্রিট যেতেন বলে শুনিনি। ওঁদের মাতৃক্রোড় ছিল বারদুয়ারি। যে সব বাঙালি ইংরেজিতে লিখে আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক হলেন, তাঁদের রমরমা পার্ক স্ট্রিটে অনেক বেশি। বাংলায় লেখা বাঙালি লেখকদের কে আর চেনে! তাঁদের জন্য গেদে বনগাঁ আছে।
পার্ক স্ট্রিটকে লোকে এখন ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ বলে। বলে দোআঁশলা। আরে সেটাই তো এখন সারা পৃথিবীতে চলছে। মায়ানমারে জন্ম, কলকাতায় স্কুল, লন্ডনে পিএইচ ডি, নাইরোবিতে বিয়ে, নিউইয়র্কে ফ্ল্যাট। একেই বলে ‘মেল্টিং পট’। আমি বলি ঢপের চপ।
এখন পার্ক স্ট্রিটের আর সেই ইগো নেই। বরঞ্চ রাস্তাটা এক ধরনের আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছে। গত তিন বছরে কলকাতায় অজস্র হোটেল হয়েছে, আশিখানার বেশি রেস্তোরাঁ হয়েছে, বিরাট বিরাট বাড়ি উঠেছে, শপিং মল বেড়েছে। সুতরাং কুইন্স ম্যানসন বললেই যেমন বাঙালির চোখ চকচক করত, সে আদেখলেপনা পার্ক স্ট্রিটকে নিয়ে আর নেই। কিন্তু মিউজিক ওয়ার্ল্ড উঠে গেল যেদিন, সেদিন ক্রসিঙে পা ছড়িয়ে বসে কাঁদতে ইচ্ছে হয়েছিল।
কবরখানা পরিচয় সরিয়ে পার্ক স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট হয়ে ওঠার পর শুরু হয় তার সোনালি ইতিহাস। যদিও কবরখানা শুনে নাক সিঁটকানোর কোনও দরকার নেই। মানুষ যেখানে থাকে সেখানে যেমন প্রসূতিসদন লাগে তেমনি কবরখানাও লাগে। মানুষ তো আর রাস্তার মাঝখানে বাচ্চা পেড়ে ফেলতে পারে না, একটা ঘের লাগে। তেমনি মৃতেরও লাগে। তবে ইতিহাস বলছে, মায়ারানি বাপের বাড়ি যেতে গিয়ে লুম্বিনীর রাস্তাতেই গৌতম বুদ্ধকে প্রসব করেছিলেন। মানে রাস্তাতেই হয়ে গিয়েছিল।
পার্ক স্ট্রিটের নাম পালটানোর কি দরকার ছিল? মাদার টেরিজাতে আমি গড় করি, উনি না থাকলে বিবিসি দেখাতেই পারত না আমরা রাস্তায় খাই, রাস্তাতেই পটি করি, রাস্তাতেই ঘুমোই এবং ঘুম থেকে উঠি না। শেয়াল-কুকুরে টেনে নিয়ে যায়। গরিবের ধাত্রী মাদার টেরিজার নামে এখন এই রাস্তা, কিন্তু মাদার টেরিজা সরণি বলুন, কোনও ট্যাক্সি নিয়ে যেতে পারবে না। |
|
গত দু’বছর চৌরঙ্গি থেকে মল্লিকবাজার পর্যন্ত একটা আলোর চাদর পরে বড়দিনে সারারাত জ্বলজ্বল করে পার্ক স্ট্রিট। বিরাট বিল ওঠে, উঠুক না। গৌরী সেন আছে। একটু সাজুগুজু হবে না? নাইট লাইফ বলে কিচ্ছু নেই। একটা মেগাসিটি কে বলবে? রাত সাড়ে দশটাতেই মদের গ্লাস কেড়ে নেয়। কী রে বাবা, রাত না হলে নেশা হয়? ভাই পুলিশ তুমি বলো, আকাশে দুটো চাঁদ না দেখলে সম্মোহন হয়?
বিয়াল্লিশে অশনি সংকেত দেখেছিল পার্ক স্ট্রিট। ব্রিটিশ সরকার এখান থেকে চাল তুলে পাঠাল ওদের সৈন্যদের জন্য। বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হল। দু’পাশের ফুটপাথে টপাটপ ডেডবডি শুয়ে পড়ল, মা ফ্যান দাও। কে ফ্যান দেবে রে? ফ্যান দিতে গেলে চাল লাগে। চাল নিয়ে চার্চিল এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবদন্তি ভাইস চ্যান্সেলর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে উদারতার রাজনীতিটি করেছিলেন, তা আর কেউ করেনি কোথাও। সব চাল উড়ে গেল ব্রিটিশ সৈন্যকে খাওয়াতে। পার্ক স্ট্রিট ডেডবডির ভেতর দিয়ে বয়ে গেল, নদী হলে ভাসিয়ে নিয়ে যেত। চোখে দেখতে হত না।
পার্ক স্ট্রিট নিয়ে আর একটা বিখ্যাত বিলাপ অকশান। রবিবারের সকালে কোট প্যান্ট পরা, মুখে পাইপ ধরা কিছু বাঙালি ছিল, যাঁরা নিজেদের মিত্র না বলে ‘মিটর’ বলতেন, রায় না বলে বলতেন ‘রে’, দত্ত না বলে ‘ডাট’, তাঁরা একটা কিউরিও শপের ভেতর বসে মরা সাহেবের আলমারি নিয়ে দর হাঁকতেন। আর্মেনিয়ান, অ্যাংলো, অস্ট্রেলিয়ান, গ্রিক, রিপন স্ট্রিটের স্কার্ট পরা বৃদ্ধা সবাই আসতেন। তাঁরা সব কোথায় গেলেন? কলকাতা যে একদিন কল্লোলিনী মেট্রোপলিটন ছিল, তা ওই অকশানে গেলেই বোঝা যেত।
রাস্তাটার যেমন নামযশ, তেমনি বদনামও কম নয়। এ রাস্তায় লোকে আসে একটু ফস্টিনস্টি করবে বলে। এতগুলো পানশালা, এতগুলো হোটেল, এত মাল্টি ন্যাশনাল দোকান। কত তোলা তুলছে লোকে। কত গরিব বড়লোক হয়ে গেল। কত ধনীর ছেলে এক হাতে শেক্সপিয়র, এক হাতে জনি ওয়াকার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সেখানে একটু নাইট লাইফ থাকবে না? একটুআধটু স্ট্রিপটিজ তাও নিষিদ্ধ। আমেরিকা জার্মানি জাপান ফ্রান্সে না হয় ওটা জলভাত। কিন্তু চিন ভিয়েতনাম কিউবাতে যদি চলতে পারে আমরা স্ট্রিপটিজ বন্ধ করে কী মহান দেশোদ্ধার করলাম?
পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণ বন্ধ হোক, স্ট্রিপটিজ খোলা হোক। জার্মানিতে ‘বেলিডান্স’ খুব জনপ্রিয়। কলেজ ইউনিভার্সিটির বহু মেয়ে বেলি ডান্স করে পড়াশোনা চালায়। আর এখানে তিনটে মোড়ে, একটা পুরনো আলেয়াস ফ্রঁসেজের কোনায়, একটা পার্ক হোটেলের আগে, একটা সেন্ট জেভিয়ার্স ছাড়িয়ে এই তিনটে পয়েন্টে নিয়মিত ফিসফিসানি শোনা যায় ‘কলেজ গার্ল, কলেজ গার্ল। একদম ফ্রেশ’। এটা কি খুব সম্মানের? পুলিশ জানে না?
সব নদীর যেমন শাখা নদী থাকে, তেমনি সব রাস্তার কিছু লেন বাইলেন থাকে। আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা, যেখানে আগে মিউজিক ওয়ার্ল্ড ছিল, পিটার ক্যাটের পাশ দিয়ে সোজা লোরেটো চার্চের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটা। এখনও সেখানে গোধূলি দেখা যায়, পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের একমাত্র অবশিষ্ট মর্ত ভূমি যেখানে এখনও গিয়ে দাঁড়ালে মনে হয় যিশুর রক্তমাখা পা ছুঁয়ে নেমে আসা গোধূলি যেন পার্ক স্ট্রিট পরিশুদ্ধ করে বাঁ ধারে গঙ্গার দিকে চলে যাচ্ছে, আর ডান দিকে পার্ক সার্কাস কানেক্টর দিয়ে বাইপাস ছাড়িয়ে বিদ্যাধরীর দিকে চলে যাচ্ছে।
পার্ক স্ট্রিট কলোনিয়াল বুর্জোয়াজির একটি আভিজাত্য এবং মধ্যবিত্তের ঈর্ষা। তার ওপর লাল কার্পেটের মতো মুড়িয়ে রাখা ইতিহাস। তবে ইতিহাসের বড্ড ওজন। অত ওজন রাস্তাটা আর টানতে পারছে না। দু’হাত দূরে নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল যে কবির তিনি বহু বেদনায় পার্ক স্ট্রিট নিয়েই বোধ হয় লিখেছিলেন, ‘এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু নামাও’।
ইতিহাসের কথাই যখন উঠল তখন বলি, এই যে পিটার ক্যাট, একটা খানাপিনার দোকান, মানে রেস্তোরাঁ, পানভোজনের নাম পিটার ক্যাট কেন? এখান থেকে একটা পোস্ট কলোনিয়াল উপন্যাস লেখা হতে পারে, যা এখন ইউরোপ আমেরিকায় খাচ্ছে।
লর্ডসের ক্লাব হাউসে একটা বিড়াল ছিল, সে খুব বিশেষজ্ঞের মতো চেয়ারে বসে টেস্ট ম্যাচ দেখত। পাঁচদিন ধরে। খুব পাবলিসিটি পছন্দ করত। ক্যামেরা দেখলেই পোজ। বিড়ালকে দোষ দিলে হবে না। আমরা মানুষ কি কম পাবলিসিটি পছন্দ করি? নিজের ছবি নিজে তুলে টপাটপ লাগিয়ে চলেছি ফেসবুকের অনন্ত দেওয়ালে। তার বেলা? এই বিড়ালটির মৃত্যুর পর অবিচুয়ারি লেখা হয় উইসডেনে। তার নামে রেস্তোরাঁ? নাকি অন্য কোনও কাহিনি আছে? গোপন কোনও কাহিনি?
|
আট কাহন |
১) পার্ক স্ট্রিটের লম্বাই বলতে এক কালে বোঝাত চৌরঙ্গিতে দাঁড়ানো ‘ফারপোজ’ থেকে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মাঝখানে সেঁধানো ‘ইজায়াস’ বার অবধি
২) প্রথম দিন ডেটিংগুলো ছেলেমেয়েরা সারত ফ্লুরিজ-এর চা-পেস্ট্রি আর ম্যাগনোলিয়া-য় স্কিম্পি লাঞ্চ দিয়ে এবং ম্যাডহাউসের ফ্লোরে নেচে। বিয়ের প্রোপোজ করার ডিনারের জন্য ছিল স্কাইরুম, ব্লু ফক্স ও মোকাম্বো
৩) ষাটের দশকের শেষে পার্ক স্ট্রিট বলতে বোঝাত ব্লু ফক্সে প্যান ক্রেন, ট্রিঙ্কাজে ঊষা আইয়ার। আর একটু বেরিয়ে ফারপোজের লিডো রুম ধরলে শেফালি
৪) পকেটে তেমন রেস্ত না থাকলে দুপুরে প্রেম করার সেরা লোকেশন ছিল পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান। সুন্দরী রোজ এলমারের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে বান্ধবীর চুম্বন ভিক্ষা করা ছিল একটা স্বর্গীয় ব্যাপার। দীর্ঘ সময় ধরে এক শ্রেণির বাঙালির কাছে প্রেমের আরেক নাম ছিল পার্ক স্ট্রিট
৫) পার্ক স্ট্রিটের বগলে গ্যাসলাইট জ্বলা রাসেল স্ট্রিট ছিল এক ফালি লন্ডন। গোটা রাস্তাটা ছিল সে জমানার তরুণদের কাছে বিলেতের পাসপোর্ট
৬) দিনের পার্ক স্ট্রিট ছিল অ্যাকাডেমিক এশিয়াটিক সোসাইটি, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, মিডলটন রো-এ মুড়লে লোরেটো হাউস। সন্ধে নামলে এরোটিক। সেরা বসনের নারীপুরুষ, ব্যান্ডের বিলিতি সুর, পানভোজনের হাতছানি
৭) পার্ক স্ট্রিটের সেরা দিনগুলোতে ক্রিসমাস কিংবা নিউ ইয়ারে রাস্তায় কোনও জনসমুদ্র ছিল না। রেস্তোরাঁগুলো ভিড়ে ভিড়াক্কার। বম্বে, দিল্লি, মাদ্রাজ থেকে শৌখিন পুরুষরা ক্রিসমাস কিংবা নিউ ইয়ার্স মানাতে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে উড়ে আসতেন
৮) তাঁর রাসেল স্ট্রিটের আবাস থেকে ফ্লুরিজে গিয়ে প্রাতরাশ সারতেন শুভো ঠাকুর। আর সন্ধেবেলা দেখা দিতেন বাংলার কিছু সেরা মগজ। যৌবনকালের কমলকুমার মজুমদার, হামদি বে। ঠিকানা অলিম্পিয়া। কখনও রাধাপ্রসাদ গুপ্ত (নানা জায়গায়), কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (প্রধানত অলিম্পিয়া)। আর সিনেমা জগতের প্রায় সবাই... |
|
সংযোজনা: শঙ্করলাল ভট্টাচার্য। |
|
|
|
|
|