ময়ূরাক্ষী নদীর খাত থেকে বালি তুলতে গিয়ে মিলল একটি প্রাচীন সিন্দুক। ভারী সিন্দুকটির প্রস্থ প্রায় দু’ফুট, চওড়া চার ফুট। পাশেই ঝিলেরা গ্রাম। খবর ছড়াতেই মানুষ ছুটে আসেন নদীর কাছে। সিন্দুকটি অবশ্য গ্রামের মানুষই নিয়ে যান গ্রামেরই সীতারাম ভল্লার বাড়ি। চলে আসেন আশপাশের নানা এলাকার কয়েক হাজার লোক। পুলিশ আসার আগেই লোহার সিন্দুকটির একটি দিক ভেঙেও ফেলা হয়। পুলিশকে সেই সিন্দুক নিয়ে যেতেও বাধা দেওয়া হয়। পুলিশ তখন মৃদু লাঠি চালায়। তাতেও এলাকার মানুষ সিন্দুক না ছাড়ায়, ফাঁকা মাঠে কাঁদানে গ্যাসের দু’টি সেল ফাটানো হয়। তাতে এলাকার মানুষ সরে গেলে শেষ পর্যন্ত পুলিশ সিন্দুকটি নিয়ে যেতে পেরেছে। রাখা হয়েছে বড়ঞা থানায়।
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সিন্দুকটির মধ্যে থেকে ১৮০০ সালের বেশ কিছু রুপো ও তামার মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। একটি গোল সিল পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে কাশিমবাজার সিল্ক ফার্ম কথাটা লেখা রয়েছে।” |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিন্দুকটি থেকে পাওয়া গিয়েছে ৮টি চাবির গোছাও। জেলা পুরাতত্ত্ব সংগ্রহশালার কিউরেটর মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মনে হচ্ছে এই সিন্দুকটি কাশিমবাজার সিল্ক ফার্মেরই সম্পত্তি। কোনও কারণে সেটি নদী গর্ভে চলে গিয়েছিল।” ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে কাশিমবাজারে সপ্তদশ শতকেই সিল্ক ফার্ম তৈরি করেছিল ইংরেজরা।
সিন্দুকটি থেকে পাওয়া বেশিরভাগ মুদ্রাই ১৮৪০ থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যেকার। কিছু রুপোর মুদ্রার গায়ে ইংল্যান্ডের রানি প্রথম ভিক্টোরিয়া ও রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের ছবি ও নাম রয়েছে। কিছু রুপোর মুদ্রা মোগল আমলের বলে অনুমান করা হচ্ছে। হাফ আনা, এক আনা, হাফ রুপিও পাওয়া গিয়েছে। বেশিরভাগটাই তামার হাফ আনা। তার গায়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম লেখা রয়েছে। এই মুদ্রাগুলির বেশিরভাগই ১৮৪০ সালের।
যে ঝিলেরা গ্রামের পাশে ময়ূরাক্ষী থেকে এই সিন্দুক মিলেছে, সেখান থেকে কাশিমবাজার প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের মানুষের দাবি, ময়ূরাক্ষীতে সম্ভবত নৌকাডুবি হয়ে ওই সিন্দুকটি জলে পড়ে যায়। তারপরে তা বালির তলায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। বড়ঞার বিধায়ক কংগ্রেসের প্রতিমা রজক বলেন, “এই সিন্দুকটি থেকে যা কিছু পাওয়া গিয়েছে, তা মুর্শিদাবাদের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে নতুন আলোকপাত করবে।” এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ নদী থেকে ওই সিন্দুকটি উদ্ধার করা হয়। ওই সিন্দুকে কোনও কাগজ বা নথিপত্র ছিল কি না, তা অবশ্য এখন আর বলা সম্ভব নয়। |