জন্মসূত্রে বঙ্গদেশীয় নন, কিন্তু বাংলার কিংবদন্তি ক্রিকেটার তিনি। বাংলার অধিনায়ক ছিলেন, দীর্ঘ সময় চুটিয়ে খেলেছেন বাংলার হয়ে। বরুণ বর্মনের মতো বহু পেস বোলারেরও এই স্পিনারকে ‘রোলমডেল’ করে বেড়ে ওঠা! আর শুধু বাংলা কেন, দেশের হয়ে তেত্রিশটা টেস্ট, পনেরোটা ওয়ান ডে খেলেছেন তিনি। বহু দিন ধরে কাউন্টি ক্রিকেটও বাদ যায়নি। টেস্টে ১১৪টা উইকেট আছে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আছে ৮৯৮টা!
সেই দিলীপ দোশি পাকাপাকি ভাবে ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। কিন্তু শুক্রবার অনেক দিন পর কলকাতায় এসে অতীতের কিংবদন্তি বাঁ-হাতি স্পিনার বুঝিয়ে গেলেন, বাংলা ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টানটা এখনও একই রকম আছে। খেলোয়াড় জীবনে যেমন ছিল।
নইলে মাত্র দেড় দিনের জন্য কলকাতা এসে সিএবি কর্তাদের জোড়া পরামর্শ দিয়ে যান বাংলা ক্রিকেটের উন্নতিকল্পে? দোশির নিজের কথা ধরলে, বর্তমান বাংলা ক্রিকেটের অবস্থা তেমন না জেনেই!
রঞ্জি পর্যায়ে সাফল্য পেতে দু’টো ব্যাপারে কর্তাদের নজর দিতে বলে গেলেন তিনি। এক, এখানকার ক্রিকেটারদের মানসিক কাঠিন্য আরও বাড়াতে হবে। বলে গেলেন, বাংলায় প্রতিভা বরাবরই ছিল, এখনও আছে। ভারতীয় টিমে বাংলা পেসারও যুগিয়েছে নিরন্তর। এখনও যেমন মহম্মদ শামি, অশোক দিন্দারা আছেন। শুধু কাঠিন্যটা আরও বাড়ানো দরকার। আর দুই, কোচিং সেন্টারের রমরমা কমিয়ে দেওয়া। সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া-সহ বাকিদের সঙ্গে আলোচনায় বলে গেলেন, এত কোচিং সেন্টার থাকায় উপকার কম, অপকার বেশি হচ্ছে। তাতে ক্রিকেটারের নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে। |
কী ভাবে নিজস্বতা ধরে রাখতে হবে, তা নিয়ে বৈঠকে স্বয়ং নিজের উদাহরণ দিয়ে যান প্রখ্যাত বাংলা স্পিনার। বলে দেন, এক বার ক্লাব ম্যাচে তিনি কিছুতেই ব্যাটসম্যানদের বোল্ড করতে পারছিলেন না। ক্যাচ উঠছিল। দিলীপ সে সময় ক্লাব কোচকে জিজ্ঞেস করেন, কেন এ রকম হচ্ছে? বাকি বোলাররা বোল্ড করছেন। তিনি কেন পারছেন না। কোচ তখন দোশিকে বলেন, তিনি যেটা পারেন বাকিরা সেটা পারে না। তাঁর মতো বল আর কারও স্পিন করে না, তাই ক্যাচ ওঠে বেশি। দিলীপকে তৎকালীন ক্লাব কোচ বলে দেন, যে ভাবে তিনি বোলিং করেন, সে ভাবেই করে যেতে। “রঞ্জি ট্রফিতে ভাল কিছু করতে হলে আরও একটা ব্যাপার দরকার। ব্যালান্সড টিম দরকার একটা। আমাদের দেশে মুম্বই, কিংবা বিদেশের ইয়র্কশায়ার বা নিউ সাউথ ওয়েলসকে দেখুন। একটা করে ব্যালান্সড টিম আছে। যেখান থেকে পাঁচ-ছ’জন ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলে। বাংলার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা কেন একই রকম হবে না? কেন এখান থেকেও পাঁচ-ছ’জন ক্রিকেটার দেশের হয়ে খেলবে না?” পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলছিলেন দিলীপ। সঙ্গে যোগ করেন, “কয়েক জনের নাম জানা ছাড়া এখনকার বাংলা টিমের ব্যাপারস্যাপার আমি জানি না। শামি এখন তো দুর্দান্ত বল করছে। দিন্দাও ভাল। দেখে ভাল লাগে যে, বাংলা থেকে এখন ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে নিয়মিত সুযোগ পায়। আমাদের সময়ে যা হত না।”
ক্রিকেট ম্যাচ দেখলেও ক্রিকেটীয় কাজকর্মে এখন আর জড়িয়ে নেই তিনি। ভারতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ান ডে সিরিজের বিপর্যয় দেখে দোশির মনে হচ্ছে, অতীতে বিদেশ সফরে গিয়ে থিতু হওয়ার সময় পাওয়া যেত। এখনসেটা হয় না। বলছেন, “আগে সিরিজ শুরুর তিন সপ্তাহ আগে টিম চলে যেত। এখন আর সে সব সম্ভব নয়। তার উপর দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটও একদম আলাদা।” আর বাংলা? বাংলার ক্রিকেটের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনও রকম যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে আছে? এমন ঝটিতি সফরে আসার বিশেষ কারণও কি আছে কিছু?
শুনে দিলীপের পাল্টা প্রশ্ন, “ঘরে আসতে আবার কারণ লাগে নাকি?” |