এ বার মোদীর মুখোমুখি কেজরিওয়াল

১৩ ডিসেম্বর
সন্ন লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে পারেন দিল্লি ভোটের নতুন তারকা আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
আজ অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। অমেঠী আসনে রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে গত কালই তাদের নেতা কুমার বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করেছে আপ। দলের রণকৌশল হল, কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’টি দলেরই প্রধান কাণ্ডারীর বিরুদ্ধে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দাঁড় করিয়ে লড়াইটাকে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া। ঠিক যে ভাবে শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে কেজরিওয়াল নিজেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। এ বারে লোকসভা ভোটে দলকে নিয়ে রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের অন্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়তে চান কেজরিওয়াল।
আপ-এর কৌশলের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ভারতের যে কোনও নাগরিকেরই অধিকার রয়েছে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াই করার। উনি যদি আমার বিরুদ্ধে লড়তে চান, আমি স্বাগত জানাব। এর থেকে বেশি প্রতিক্রিয়া এখনই আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। ওরা তো আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কিছু ঘোষণা করেনি।” দিল্লি বিধানসভার প্রচারের সময় এই মোদীই অবশ্য মন্তব্য করেছিলেন যে, “কংগ্রেসের এমন অবস্থা, তাতে শুধু একা হাত দিয়ে হচ্ছে না। হাতে আবার ঝাড়ু (কেজরিওয়ালের দলের প্রতীক চিহ্ন) নিতে হয়েছে!” কেজরিওয়ালকে সেই সময় কংগ্রেসের বি-টিম হিসেবেই দেখিয়েছিলেন মোদী। দিল্লির ফল প্রকাশের পরে অবশ্য কেজরিওয়াল নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
বিজেপি নেতারা বলছেন, অমেঠী থেকে কুমার বিশ্বাসের প্রার্থী হওয়াটা যেমন আপ ঘোষণা করে দিয়েছে, মোদীর বিরুদ্ধে লড়ার বিষয়টি তারা এখনও ঘোষণা করেনি। ফলে আপ যতটা গর্জন করছে, শেষ পর্যন্ত ততটা বর্ষাবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে আম আদমি পার্টি যাতে দিল্লির বাইরে গোটা দেশে পাখা মেলতে না পারে, তার জন্য সচেষ্ট হয়েছে বিজেপি। অন্য দিকে কংগ্রেসের এমন অবস্থা যে তারা মনে করছে, দেশের অন্য প্রান্তেও আপের উত্থান হলেই তাদের লাভ! জাতীয় স্তরে আপকে দিয়েই বিজেপি কাঁটা তোলার অঙ্ক কষছে তারা। দিল্লিতেও অবশ্য একই কথা তারা ভেবেছিল। কিন্তু আখেরে কেজরিওয়ালের ‘ঝাড়ু’ কংগ্রেসকেই সাফ করে দিয়েছে বহু জায়গায়!
কেজরিওয়াল নিজে কী বলছেন তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে? আজ এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “যখন আমি শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলাম, তখনও আমাকে অনেকে নিষেধ করেছিলেন এবং অন্য কোনও আসনে প্রার্থী হতে বলেছিলেন যাতে হেরে যাওয়ার ভয় না থাকে। কিন্তু আমি এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। তার কারণ, আমার তো কোনও ‘অওকাত’ নেই। ফলে আমি লড়াইটাকে প্রতীকী হিসেবে নিয়েছিলাম। মানুষের আন্দোলনের জন্য একটি প্রতীকী লড়াই। শীলা দীক্ষিতকে হারাতে পারব, আমি নিজেও কখনও ভাবিনি। কিন্তু মানুষের যে সমর্থন আমি পেলাম, তাতে আমার মনে হচ্ছে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আরও বৃহত্তর পরিসর গ্রহণ করার জন্য আমাদের এগোতে হবে।”
দিল্লিতে আম আদমি পার্টি যখন প্রচার শুরু করে, তখন তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার। এ বারে ২৮টি আসনে জয়ের দু’দিনের মধ্যে তাদের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়ে গেল ৩ লক্ষ! শুধু দিল্লি নয়, গোটা দেশ থেকেই বহু লোক সদস্য হচ্ছেন আপ-এর। এই সর্বভারতীয় সাড়া দেখেই কেজরিওয়াল আরও একটি ঝুঁকি নিতে চান। প্রথমে ঠিক করেছিলেন, দিল্লির পর মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে লড়বেন। কিন্তু এখন ঠিক করেছেন, লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে অন্তত ৮০-৯০টি আসনে লড়বে তাঁর দল।
কিন্তু তাঁকে কেন ভোট দেবে জনতা? তিনি তো সুযোগ পেয়েও দিল্লিতে সরকার গঠনে রাজি হচ্ছেন না? কেজরিওয়ালের ব্যাখ্যা, যে হেতু তিনি নিজে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি, তাই অন্যের সমর্থন নিয়ে দিল্লিবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে চান না। কেজরিওয়ালের কথায়, “অনেক দূর পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে যখন চ্যালেঞ্জ করেছি, তখন এই ব্যবস্থায় যে দলগুলি আপস করেছে, তাদের হাতে তামাক খাওয়া আম আদমি পার্টির পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব।”
লোকসভা নির্বাচনের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানালেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, “দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ অনুদান পাঠাচ্ছেন। আমরা সমস্ত অনুদান নথিভুক্ত করছি। এবং তার সমস্ত হিসেব শুধু দলের কাছে নয়, সরকারের কাছেও পেশ করব।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে শ্রদ্ধা আছে আপ-নেতার। তিনি মনে করেন, ক্ষমতায় এসেও মমতা এখনও আম আদমির কথা ভোলেননি। কেজরিওয়াল বলেন, “যদি কোনও দল আম আদমিকে ভুলে যায়, তা হলে কিন্তু মানুষ তার জবাব দেবেন। মানুষ তখন তাদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।” আগামী দিনে কলকাতায় এসে প্রচার করতে চান কেজরিওয়াল। তিনি জানান, দিল্লির ভোটে কলকাতা থেকে বহু মানুষ এসে প্রচারে নেমেছিলেন।
কেজরিওয়ালের একটা বড় সন্তুষ্টি হল, দেশের অন্য দলগুলির কাছে তিনি এমন একটি নমুনা তুলে ধরেছেন, যেখানে কেউ প্রকাশ্যে দল ভাঙতে অথবা দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত। তাঁর কথায়, “মানুষের মনে যদি আমরা এই সচেতনতা তৈরি করতে পারি, তাতেই আমাদের সাফল্য। দেশটা অনেক বড়। আমাদের শক্তি অনেক কম। এখন তাই ধাপে ধাপে এগোতে হবে। হারানোর কিছু নেই। জয় করার জন্য রয়েছে গোটা দেশ।” লোকসভা ভোটে ঝাড়ু হাতে সেই লক্ষ্যেই বেরোতে চান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.