রাজাই এ বার মন্ত্রী! সৌরভ বললেন ভাবছি
ক্রিকেটের ময়দানে গর্বিত জামা ওড়ানো।
বিনোদনের মঞ্চে দাদাগিরি করে তাক লাগিয়ে দেওয়া।
এ বার কি রাজনীতির ঘাসের নতুন চ্যালেঞ্জও নিতে চলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়?
বিজেপি-র পক্ষে তাঁকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোটে দাঁড়াবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সৌরভ যদি মনে করেন বিজেপি থেকে ভোটে জেতার জন্য বাংলা নিরাপদ চারণক্ষেত্র নয়, সে ক্ষেত্রে গুজরাত অথবা দিল্লি যে কোনও নিরাপদ আসন তিনি বেছে নিতে পারেন।
এখানেই শেষ নয়। বিজেপি-র পক্ষ থেকে তাঁকে এক রকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তারা সরকার গড়লে ক্রীড়ামন্ত্রী করা হবে সৌরভকে! প্রস্তাব এসেছে একেবারে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে।
বিজেপি-র তরফ থেকে তাঁর কাছে যে প্রস্তাব এসেছে, সে কথা স্বীকার করছেন সৌরভ। জানাচ্ছেন, সাড়া দেবেন কি না, সিদ্ধান্ত এখনই নেননি। তবে শীঘ্রই নেবেন।
সৌরভকে বিজেপি যে চাইছে, এমন একটা কানাঘুষো গত এক মাস ধরে দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দে চলছিল। গুঞ্জন উৎপত্তির কারণ ১৪ অশোক রোডের বাড়িতে সৌরভের আগমনের খবর জানাজানি হয়ে যাওয়া। এমনিতে এই বাড়ির যিনি বাসিন্দা, তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের লতায়-পাতায়ও কোনও সম্পর্ক নেই।
এক জনের চেহারা গোলগাল। জন্ম দিল্লিতে। বয়স সাড়ে তেত্রিশ। নাম বরুণ।
অন্য জনের চেহারা লম্বা-পেটানো। জন্ম কলকাতায়। বয়স সাড়ে একচল্লিশ। নাম সৌরভ।
ইতিপূর্বে দেখা তো দূরে থাক, ফোনে যোগাযোগও হয়নি বরুণ গাঁধী আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে। তা হলে? শোনা যাচ্ছে সামরিক বাহিনীর কোনও এক অফিসারের মধ্যস্থতায় মধ্য নভেম্বরে সৌরভ দেখা করতে যান বরুণের সঙ্গে। বরুণ গাঁধী বিজেপি-র ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক। তিনি ভালই জানেন, চার রাজ্যে ভোটে জেতার পর বিজেপি নিয়ে যতই ২০১৪-র জন্য মধুচন্দ্রিমার পূর্বাভাস হাজির হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গে অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। মোট ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি-র আসন সংখ্যা মাত্র এক। সেটিও দার্জিলিংয়ে। যেখানে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে তৃণমূলের বোঝাপড়া বৃদ্ধিতে এই আসনও আর বিজেপি-র পক্ষে নিরাপদ নয়।
সৌরভ অনিশ্চিত পরিমণ্ডল থেকে দাঁড়াতে উৎসাহী না হতে পারেন বুঝে তাঁর জন্য বাংলার বাইরের কেন্দ্রের প্রস্তাবও খোলা রাখা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীও চান সৌরভ আসন্ন নির্বাচনে তাঁদের হয়ে লড়ুন। গুজরাতের কোনও নিরাপদ আসন তিনি দাদা-কে ছেড়ে দিতে রাজি।
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মনে হচ্ছে কংগ্রেস এবং রাহুল গাঁধী হালফিল সচিন তেন্ডুলকরকে যেমন দলের ভাবমূর্তিতে মেকওভার দেওয়ার জন্য ব্যবহার করছেন, এ হল তার অ্যান্টিডোট। ঢিলের বদলে পাটকেল। তেন্ডুলকরের জবাবে গাঙ্গুলি।
শোনা যাচ্ছে শুধু সৌরভ নন, বিভিন্ন জগতের আরও কিছু খ্যাতনামাকে দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ক্রিকেট খেলা এবং বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত কমবয়সী তারকাদের দলে নিলে নতুন যুব ভোটারদের ওপর খুব সদর্থক প্রতিক্রিয়া হবে। সৌরভ এবং কুম্বলে এমন দুটো নাম, যাঁদের পারফরম্যান্সের সঙ্গে ভাবমূর্তির বিশ্বাসযোগ্যতাও খুব বেশি।
বেঙ্গালুরু থেকে কুম্বলে কিন্তু বললেন, তিনি রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন না। ফোনে আনন্দবাজার প্রতিনিধিকে বলেন, “আমি কোনও অফার পাইনি। যেখান থেকে খবরটা পেয়েছেন, তাদের কাছে জানতে চান।” কিন্তু এই যে শোনা যাচ্ছে আপনি আর কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদে নেই বলে আপনার হাতে সময়ও রয়েছে? “একেবারে বাজে কথা। ব্যবসা নিয়ে পুরো ডুবে রয়েছি। কেএসসিএ-কে মিস করছি না। ক্রিকেটকেও না,” বললেন কুম্বলে।
‘দাদাগিরি’-র সেট থেকে শুক্রবার দুপুরে পাওয়া সাময়িক বিরতির মধ্যে স্বয়ং সৌরভ অবশ্য স্বীকার করলেন, তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
“হ্যাঁ, অফার পেয়েছি। ভাবছি। এখনও ঠিক করতে পারিনি কী করব। আসলে গত ক’দিন প্রচণ্ড দৌড়ের মধ্যে যাচ্ছে।” বললেন তিনি। গত দু’দিন বেঙ্গালুরুতে লিডারশিপ সামিটে ব্যস্ত ছিলেন সৌরভ। রাহুল দ্রাবিড়ের শহর থেকে ফিরে দাদাগিরি-র শ্যুটিং। শনিবার আবার মুম্বই। টেলিভিশনে বিশেষ ক্রিকেট শো রয়েছে।
এক লাফে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী করতে চাওয়া মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো প্রস্তাব। বিশেষ করে বিজেপি-তে যখন নভজ্যোৎ সিধু, কীর্তি আজাদ বা চেতন চৌহানের মতো প্রাক্তন ক্রিকেট নক্ষত্ররা এত বছর ধরে রয়েছেন। সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, আচমকা প্রস্তাব আসায় তিনি নিজেও কিছুটা বিস্মিত। কিন্তু এখনই রাজনীতির ময়দানে চট করে পা না-ও বাড়াতে পারেন। রাজনীতিতে এখুনি যাওয়া মানে তাঁর জগৎ সম্পূর্ণ বদলে যাবে। মিডিয়ার চুক্তি এবং টিভি শো মিলেটিলে তাঁর যেমন ব্যস্ততা, বা চুক্তির যা বহর, তাতে ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়া এক রকম অসম্ভব।
কোনও কোনও মহলের আবার ধারণা, ক্রিকেট রাজনীতিতে বর্তমান প্রশাসন সৌরভকে যেমন ব্রাত্য করে রেখেছে। শ্রীনিবাসনের বোর্ড যে ভাবে টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে হটিয়ে দিয়েছে, তাতে রাজনৈতিক ক্ষমতার সংসর্গ সৌরভ উপভোগ করতেই পারেন। বিজেপি যদি সচিনের মতোই তাঁকে সরাসরি রাজ্যসভায় নিয়ে যেত, তা হলে এখনই রাজি হয়ে যেতেন। বরুণের সঙ্গে ইতিমধ্যে দু’বার সামনাসামনি কথা হয়েছে সৌরভের।
তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তা হলে কবে নিচ্ছেন? ভোটে দাঁড়াবেন? কি না? সৌরভ বললেন, “খুব তাড়াতাড়ি।” অতএব মহারাজের পরের স্টেশন কি মন্ত্রিত্ব— উত্তর দেওয়ার সময় এখনই আসেনি।
ঐতিহাসিক ভাবে বিজেপি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে খ্যাতনামাদের সরাসরি রাজনীতিতে এনেছে। শত্রুঘ্ন সিন্হা, হেমা মালিনী, স্মৃতি ইরানি প্রমুখ। স্মৃতি ইরানি সম্প্রতি হাওড়ার এক জনসভায় এসে যা সংবর্ধনা আর ভিড় দেখেছেন, তাতে যথেষ্ট আপ্লুত। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ফিরে বলেছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরুণের এখন নীতি হল, সৌরভের বাইরেও যুব-ছাত্র সমাজে প্রভাব রয়েছে এমন লোকেদের দলে টানো। আর তাদের নির্বাচনী টিকিট দাও।
সৌরভ ছাড়াও বিজেপি-র উইশ লিস্টে তবলাবাদক বিক্রম ঘোষ আর বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র নাম শোনা যাচ্ছে। বিক্রম এ দিন বললেন, “অফার আসেনি। এলেও ইন্টারেস্টেড নই।” লক্ষ্মী— তিনি কি শুনেছেন যে গুজব ছড়িয়েছে ইতিমধ্যে দিল্লিতে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর একপ্রস্ত কথা হয়েছে? নেতৃত্ব নাকি চান, তিনি হাওড়া থেকে লোকসভা ভোটে লড়ুন। হাওড়া থেকে বর্তমান সাংসদ তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবুও ঘাঁটি হিসেবে হাওড়াকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
ইডেনে প্র্যাকটিস ও প্রেস কনফারেন্স সেরে লক্ষ্মী বললেন, “আমার তো এখনও চার-পাঁচ বছর কেরিয়ার পড়ে রয়েছে।” কিন্তু তিনি কি ভোটে দাঁড়াবার সরাসরি কোনও প্রস্তাব পেয়েছেন? কিছুটা বিব্রত লক্ষ্মী বললেন, “এখন এগুলো থাক না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.