দুশমন ভেবে পিসেকে খতম করলেন কিম জং
ত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শাসক কিম জং উনের পিসেমশাই জাং সং থায়েককে মৃত্যুদণ্ড দিল সে দেশের সরকার। ফায়ারিং স্কোয়াড ইতিমধ্যেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পালন করেছে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম। এই ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার শাসক পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়ার শাসনভার রয়েছে একটি পরিবারের হাতেই। কিম ইল সুং ও কিম জং ইনের পরে এখন সে দেশের শাসক কিম জং উন। থায়েককে এতদিন উনের পরে দেশে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি বলে মনে করা হত। উনের পিসি কিম-কিয়ং হি-কে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরে উত্তর কোরিয়ায় বদলে যাওয়া রাজনৈতিক সমীকরণ ভাবাচ্ছে আমেরিকা-সহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকেই।
উত্তর কোরিয়ার রাজনীতি, জাতীয় পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি খবর পৌঁছয় না অন্য দেশে। দেশের সংবাদমাধ্যমও সরকারি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ১৯৫০-এর দশকে কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে এখনও উত্তর ও মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। আবার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে উত্তর কোরিয়া। তাই সে দেশের উপরে নজর রাখে দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, জাপানের মতো দেশ।
কোর্টে নিয়ে আসা হচ্ছে জাং সং থায়েককে। ছবি: এএফপি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাবা কিম ইল সুংয়ের জমানার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সরিয়ে দিতে চাইছেন কিম জং উন। থায়েককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া সেই প্রক্রিয়ারই অঙ্গ। ১৯৯০-এর দশকে উত্তর কোরিয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে জন্য কিম ইং সুল দায়ী বলেই মনে করেন অনেকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ থায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগের যে তালিকা সে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে রয়েছে অর্থনীতির বেহাল দশার কথাও। সংবাদমাধ্যমের দাবি, থায়েক দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের শাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। বিলাসবহুল “দুর্নীতিগ্রস্ত” জীবনযাপন করতেন। অর্থনীতির বেহাল দশার জন্যও তিনিই দায়ী। সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কিম জং উনের সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সামরিক ট্রাইব্যুনালে থায়েকের একটি ছবিও প্রকাশিত হয়েছে সংবাদপত্রে।
নিহত থায়েকের একটি বিবৃতিও বেরিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, সেনাকে সঙ্গে নিয়ে উনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
আমেরিকার রুয়েডিগার ফ্র্যাঙ্ক, মাইক ম্যাডেনের মতো কোরিয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরীয় সরকারের পক্ষে থায়েকের ভুয়ো বিবৃতি তৈরি খুবই সহজ। তিনি উত্তর কোরিয়ায় চিনের মতো আর্থিক সংস্কার চাইতেন বলে ধারণা অনেকের। তাঁর সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও ছিল। ফলে, হয়তো এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখা বিপজ্জনক মনে করেছেন উন।
তবে উন এখনও উত্তর কোরিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনীর সব অংশকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নীতি নিয়ে বিরোধ হলে থায়েক তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের ছক কষতে পারেন, এমনটা ভাবতেই পারেন উন। তাই অর্থনীতি-সহ সব পরিস্থিতির বেহাল দশার দায় চাপিয়ে দিতে তাঁকে সরাতে চেয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে কিম জং উনের উত্তর কোরিয়া। দেশের অভ্যন্তরীণ গোলমাল থেকে নজর ঘোরাতে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী কোনও অভিযানে নামতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানিয়েছে, সামরিক বাহিনী সতর্ক রয়েছে। তবে এখনও উত্তরের তরফে কোনও সামরিক তৎপরতা চোখে পড়েনি। এক বিবৃতিতে মার্কিন সরকার জানিয়েছে, থায়েককে সত্যিই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ঘটনা সত্য হলে তা উত্তর কোরিয়ার নিষ্ঠুরতার আর একটি প্রমাণ। থায়েক-ঘনিষ্ঠ জাংয়ের মৃত্যুদণ্ডে কিছুটা বেকায়দায় বেজিংও।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পরমাণু অস্ত্রের যন্ত্রাংশ আদানপ্রদানের সম্পর্ক ছিল পাকিস্তানের। তাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন পাক পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান। তাই সে দেশের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখে ভারতও। কিন্তু এখনই এই স্পর্শকাতর বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় নয়াদিল্লি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.