ভরা রাস্তায় হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করল নিউ ইয়র্কে ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেলকে। অভিযোগ, এক পরিচারিকাকে আমেরিকায় নিয়ে আসার সময়ে তার ভিসায় তিনি যে প্রাপ্য বেতনের কথা লিখেছিলেন, আদপে তাকে সেই টাকা দিচ্ছিলেন না। মেয়েটিকেও শিখিয়ে দিয়েছিলেন, সে যেন বেতনের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে সত্যগোপন করে। কিন্তু দেবযানী খোবরাগাড়ে নামে ওই মহিলা কূটনীতিককে যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়, তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। পরে অবশ্য দেড় কোটি টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে ছাড়া পান দেবযানী। ঘটনাচক্রে, কনসাল জেনারেল আপাতত না থাকায় অস্থায়ী ভাবে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনিই।
|
দেবযানী |
অন্য দিনের মতোই বৃহস্পতিবারও মেয়েকে স্কুলে পৌঁছতে গিয়েছিলেন দেবযানী। স্কুলের সামনেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। রাস্তায় সর্বসমক্ষে হাতকড়া পরিয়ে তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ। খবর পেয়েই ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে ডেকে পাঠিয়ে বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ জানান, এক উচ্চপদস্থ ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে এই ব্যবহার মানা যায় না। সুজাতার কথায়, “আইনি দিক পরে। ছোট ছোট দুটো বাচ্চা রয়েছে দেবযানীর। মানবিকতার খাতিরেও এক জন মহিলাকে এ ভাবে হেনস্থা করে না কেউ।” বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিনও শুক্রবার তাঁদের অসন্তোষের কথা জানান। তা ছাড়া, তিন বছরে অন্তত তিন জন উচ্চপদস্থ আমলাকে আমেরিকায় এ ভাবে হেনস্থা হতে হল। ভারত তাই বিষয়টিকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না।
২০১২-য় নিউ ইয়র্কের দূতাবাসে যোগ দেন বছর উনচল্লিশের দেবযানী। ওই বছরেরই নভেম্বরে সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয়কে পরিচারিকা হিসেবে নিয়ে যান তিনি। ২০১৩-এর জুন পর্যন্ত তাঁর কাছে চাকরি করেছিলেন সঙ্গীতা। আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী, সঙ্গীতার মজুরি হওয়া উচিত প্রতি ঘণ্টায় ৬০৫ টাকা। অভিযোগ, ভিসার কাগজপত্রে দেবযানী তা লিখলেও আসলে তিনি দিতেন ঘণ্টায় ২০৫ টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘ওই কূটনীতিক একে তো কম মজুরি দিয়েইছেন, তার উপর ভিসার সময় ভুল তথ্য দিয়েও বিভ্রান্ত করেছেন।’ অভিযোগ সত্যি প্রমাণ হলে পনেরো বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে দেবযানীর। তবে দেবযানী অভিযোগ মানেননি।
কাল সকালে এই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গড়ে সাদার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি, আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রীত ভারারা। এর পর মাঝরাস্তা থেকে ধরে ম্যানহাটানের কোর্টে আনা হয় দেবযানীকে। কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা রেখে জামিন পান তিনি। পরের শুনানি ১৩ জানুয়ারি।
ঘটনা হল, জুন থেকে ওই পরিচারিকারও খোঁজ নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, দেবযানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল কে? আমেরিকার ভারতীয় দূতাবাস অবশ্য মনে করছে, ওই পরিচারিকার অভিযোগের ভিত্তিতেই দেবযানীকে গ্রেফতার করেছিল মার্কিন পুলিশ। তাই দ্রুত তাকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশকে আর্জি জানিয়েছে ভারত।
তবে দেবযানীর গ্রেফতারির নিয়ে দূতাবাস কর্মীদের কূটনৈতিক রক্ষাকবচের প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। এর বলেই আর পাঁচ জন সাধারণ নাগরিকের মতো গ্রেফতার করা যায় না কূটনীতিকদের। তবে দেবযানীর এক বন্ধু সুনীতা দেওয়ান জানান, পরিচারিকাকে আনানোর ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেননি দেবযানী। সেটাই আশঙ্কার। দেবযানীর বাবা উত্তমের অভিযোগ, “মেয়ে বর্ণবিদ্বেষের শিকার।” |