|
|
|
|
বহু ইটভাটায় এখনও কাজ করছে শিশু শ্রমিকেরা, দাবি সমীক্ষায়
নিজস্ব সংবাদাতা • কাটোয়া |
শিশুশ্রমিক উদ্ধার করতে মহকুমা স্তরে কমিটি রয়েছে ঠিকই, কিন্তু কার্যত তা কোনও কাজ করেনা, এমনই অভিযোগে জানিয়ে জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছে এক স্বেচ্ছসেবী সংস্থা। তাঁদের দাবি, সম্প্রতি কালনা ও কাটোয়ার বিভিন্ন ইটভাটায় সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। প্রশাসনের নজরদাবির ‘অভাব’কেও ইটভাটার মালিকেরা পুরোমাত্রায় কাজে লাগাচ্ছেন বলে তাঁদের দাবি।
শ্রম দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন ইটভাটা থেকে কয়েকজন শিশুকে উদ্ধার করেছেন তাঁরা। তাদের চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে জেলার ইটভাটার মালিকদের সংগঠন, ব্রিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ইটভাটায় শিশুশ্রমিকদের দিয়ে কোনও কাজ করানো হয় না। বরং স্কুল তৈরি করে তাদের শিক্ষার আলোয় আনার চেষ্টা করছেন মালিকেরা।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি সুভাষ ঢালি চলতি মাসের ১০ তারিখ ফ্যাক্স মারফত জেলাশাসককে জানান যে কাটোয়া কালনা মহকুমার প্রতিটি ইটভাটায় শিশুশ্রমিক রয়েছে। ওই শিশুদের উদ্ধারের জন্য মহকুমা স্তরে ‘রেসকিউ কমিটিও’ রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “কাটোয়া ও কালনা দু’টি মহকুমাতেই আমি ওই কমিটিতে আছি। কিন্তু শিশু শ্রমিক উদ্ধারে কমিটির ভূমিকা নেওয়া তো অনেক দূর, নিয়মিত সভাও হয় না।” সংস্থাটির দাবি, সমীক্ষা করতে গিয়ে প্রকাশ্যেই ৮-১০ জন শিশুশ্রমিককে ইটভাটায় কাজ করতে দেখেছেন তাঁরা। এ নিয়ে ইটভাটার মালিকদের সচেতন করতে গিয়ে তাঁরা সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। এ কথা জানিয়ে ২৮ নভেম্বর সুভাষবাবু জেলাশাসককে চিঠি দেন। তাঁর দাবি, “ওই দুই মহকুমার বিভিন্ন ইটভাটায় মালিকেরা মাফিয়া রেখে দেয়। শিশুশ্রমিক নিয়ে বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।” সুভাষবাবু বলেন, “ইটভাটায় গড়ে ৮ থেকে ১০ জন শিশু কাজ করে। তাদের কাঁচা ইট শুকোতে দেওয়া কিংবা ইট বওয়ানোর কাজ করানো হয়। প্রশাসন নজরদারি শুরু করলেই ইটভাটা থেকে শিশুশ্রমিক অনেকটাই কমে যাবে।”
বর্ধমান জেলায় বৈধ ইটভাটা রয়েছে ৬০৭টি। এর বাইরে অসংখ্য বেআইনি ইটভাটা রয়েছে। ওই স্বেচ্ছাস্বেবী সংস্থার অনুমান, ‘নজরদারি’র অভাবই ইটভাটায় শিশুশ্রমিক বাড়ার কারণ। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “এ ব্যাপারে বৈঠক হয় না কেন, বা কমিটির কাজ না করার অভিযোগটি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
শ্রম দফতরের আধিকারিকেরাও জানান, অন্যান্য জায়গার চেয়ে সংগঠিত ক্ষেত্র ইটভাটায় শিশুশ্রমিক বাড়ছে। সে কারণে ১৯৯৯ সালের পর ফের ইটভাটাগুলিতে শিশুশ্রমিকদের নিয়ে সমীক্ষা করার কথা ভাবছে শ্রম দফতরও। চলতি সপ্তাহেই আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার তিনটি ইটভাটা থেকে সাতজন শিশুশ্রমিককে উদ্ধার করে ‘চাইল্ড লাইন’ সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে তারা। ওই দফতরের ডেপুটি লেবার কমিশনার (দুর্গাপুর) পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী স্বীকার করে নিয়েছেন, কাটোয়া-কালনা মহকুমায় ইটভাটা গুলিতে ‘নজরদারি’ খুবই কম হয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ওই দুই মহকুমায় পরিদর্শকের সংখ্যা খুব কম। ফলে ঠিকমতো নজরদারি করা যায় না।” ব্রিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য শিশুশ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি মানতে রাজি নন। সংগঠনের জেলা সভাপতি অসীম বৈরাগ্য বলেন, “প্রশাসনের ভুল ধারণা রয়েছে যে ইটভাটায় শিশুরা কাজ করে। কিন্তু ইটভাটার কোনও কাজই শিশুদের দ্বারা সম্ভব নয়- এটা সকলকে বুঝতে হবে।” কিন্তু ইটভাটায় গেলেই তো দেখা যায় শিশুরা কাজ করছে? কাটোয়ার একটি ইটভাটার মালির রতন ঘোষ জানান, অনেক শ্রমিকই সপরিবারে ইটভাটায় থাকেন। তাদের ছেলেমেয়েরা খেলাচ্ছলে কাজ করতে পারে। আবার স্থানীয় শ্রমিকদের খাবার দিতে এসেও অনেকে টুকটাক কাজ করে। তবে এর সঙ্গে ইটভাটার কোনও যোগ নেই। |
|
|
 |
|
|