বেহাল প্রকল্প, বেতনও বকেয়া কর্মীদের
কোথাও পনেরো মাস, কোথাও ছ’মাস আবার কোথাও বাইশ মাসের বেতন বকেয়া। তার মধ্যেও ঘরে ঘরে পরিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দিতে কাজ করে চলেছেন তাঁরা। জেলার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ১৪টি প্রকল্পের প্রায় ১৫৪ জন কর্মীর দিন কাটছে এভাবেই। আবার যথাযথ দেখভালের অভাবে অনেক কেন্দ্রের পরিকাঠামোই বেহাল। কোথাও ভবন জুড়ে আগাছা, কোথাও মরচে ধরা পাইপ, আবার কোথাও জলের পরীক্ষাও হয় না বলে অভিযোগ।
বর্ধমানের বরশুল, জোটেরাবাগ, শ্রীখণ্ড, অগ্রদ্বীপ, মঙ্গলকোট, সিঙ্গোট-মাজিগ্রাম, কান্দরা, বাহারাম-বহিরামপুর, ধাত্রীগ্রাম, বৈদ্যপুর জোন ১, জোন ২, পাটুলি, পূর্বস্থলী ও কাইগ্রাম এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এই প্রকল্পগুলি রয়েছে। ১৯৮৭ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় প্রকল্পগুলি তৈরি হয়। প্রকল্পগুলি দেখভালের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারগোষ্ঠী। ওই ঠিকাদারগোষ্ঠীর মাধ্যমেই কর্মীদের বেতন দেওয়া হত। তবে পরবর্তীতে ঠিকাদারগোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় ১৯৯৫ সাল থেকে জেলা পরিষদই কর্মীদের বেতনের টাকা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির হাতে তুলে দেয়। সারা বছর প্রকল্পগুলির দেখভাল করে ব্লক প্রশাসন।
বর্তমানে প্রকল্পগুলির অপারেটর, ভাল্বম্যান, নৈশপ্রহরী পদে কর্মীর সংখ্যা ১৫৪। প্রতি মাসে ২২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৬৫০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তাঁরা, অথচ সরকারি সুযোগ সুবিধা তো দূরঅস্ত, মাস পেরোলে প্রাপ্য বেতনও জোটে না তাঁদের। তাঁদের দাবি, সরকারি ভাবে দৈনিক ১৯৬ টাকা বেতন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও তা খাতা কলমেই রয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
আগাছায় ভরা পূর্বস্থলীর পাটুলি জলপ্রকল্প। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পূর্বস্থলী ও পাটুলি পঞ্চায়েত এলাকায় এই ধরণের দু’টি প্রকল্প রয়েছে। প্রতি দিন বেশ কয়েক হাজার মানুষকে পানীয় জল সরবরাহ করা হয় এখান থেকে। প্রকল্পটিতে ১৮ থেকে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন ১০ জন কর্মী। তাঁদের দাবি, ২০১২ সালের জানুয়ারী মাস থেকে বেতন পাননি তাঁরা। ফলে সংসার চালানো রীতিমতো দায় হয়ে পড়েছে। তাঁদেরই কয়েকজন, গোবিন্দচন্দ্র পাত্র, লাল্টু ঘোষ, দ্বারকানাথ দাসদের দাবি, “দু-এক মাস হলে এদিক-ওদিক করে চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু প্রায় দু’বছর ধরে মাইনে না পাওয়ায় প্রত্যেকেরই বাজারে প্রচুর ধার হয়ে গিয়েছে। টাকার জন্য বারবার পঞ্চায়েত সমিতি, বিডিও-র কাছে দরবার করেও লাভ হয়নি।” তাঁদের দাবি, কাজের শুরুতে অনেকেই আশা করেছিলেন চাকরি স্থায়ী হয়ে যাবে। কিন্তু তা তো হলই না, উল্টে মাস মাইনেটাও হাতছাড়া হওয়ার জোগাড়। কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রাম শাখার অপারেটর নিরঞ্জন মাইতি জানান, তাঁদের প্রকল্পের কর্মীদের ছ’মাস ধরে বেতন বকেয়া রয়েছে। জেলার কোথাও এক বছর আবার কোথাও তারও বেশি টাকা বাকি পড়ে আছে বলেও জানান তিনি। কর্মীদের দাবি, বেতন না থাকায় সংসার চালানো থেকে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানো সবটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে দেখা করেও নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। সভাধিপতি অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি সবে কাজ যোগ দিয়েছেন। সমস্যা সমাধানে কিছুটা সময় লাগবে। কাটোয়া মঙ্গলকোটের এক কর্মী জানান, বছর খানেক আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কেও নিজেদের দাবিদাওয়া ও সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। তাতেও লাভ হয়নি। কিন্তু এত মাসের বেতন বকেয়া কেন? বিভিন্ন প্রকল্পে বকেয়ার পরিমাণই বা আলাদা কেন? কর্মীরাই জানান, জেলা পরিষদ যখন টাকা পায়, তখন প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য সমপরিমাণ টাকা বরাদ্দ করে। অথচ বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মীদের সংখ্যা ভিন্ন। ফলে টাকা পেয়েও সমস্ত বকেয়া মেটানো যায় না। কারও বেশি, কারও কম বকেয়া রয়ে যায়।
একদিকে কর্মীদের বেতন না মেলার সমস্যা, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ দেখভাল না হওয়ায় প্রকল্পগুলির পরিকাঠামোও ভেঙে পড়েছে। পাটুলির মতো বেশ কিছু কেন্দ্র আগাছায় ভরে গিয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্রগুলিতেও নিয়মিত ব্লিচিং দেওয়া হয়না, জল পরীক্ষা করা হয়না, পাইপ ও পুরনো যন্ত্রাংশ মেরামতি বা বদলের দরকার হলে দ্রুত পৌঁছয় না বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সুশান্ত বসুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এগুলি হস্তান্তরিত প্রকল্প। বর্তমানে প্রকল্পগুলি দেখভালের পুরো দায়িত্বই জেলা পরিষদের।”
জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু অবশ্য জেলার ১৪টি জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্পের দুদর্শার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই প্রকল্পের কর্মীরা আমায় সমস্যার কথা জানিয়েছেন। টাকা জোগাড় করার চেষ্টা চলছে।” পরিকাঠামোর বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে জানিয়েছেন তিনি।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্পে সমস্যা
কোথাও ১৫ মাস, কোথাও ২২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কর্মীরা।
মিলছে না সরকারি সুযোগ সুবিধাও।
চাকরির শুরুতে স্থায়ীকরণের কথা থাকলেও তা হয়নি বলে কর্মীদের দাবি।
জেলা পরিষদ সমস্ত কেন্দ্রগুলিকে সমপরিমাণে টাকা পাঠায়। ফলে যেখানে কর্মী বেশি সেখানে বকেয়া বেশি থেকে যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.