|
|
|
|
মনের টানে মাওবাদী-শুশ্রূষা ডাক্তারের: পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভয় বা হুমকিতে নয়। ইসিএলের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক সমীর বিশ্বাস সহানুভূতি থেকেই জঙ্গলমহলে গিয়ে আহত, অসুস্থ মাওবাদীদের চিকিৎসা করতেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁদের সন্দেহ, ৪-৫ বছর আগে মাওবাদী তৎপরতা চলাকালীন ওই প্রৌঢ় চিকিৎসক যে-ভাবে দিনের পর দিন লালগড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় ছিলেন, তাতে তাঁর পক্ষে মাওবাদী সংগঠনের সদস্য হওয়াও বিচিত্র নয়।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ২০০৯-এ লালগড়ের রামেশ্বরপুরে মাওবাদীদের ছত্রচ্ছায়ায় একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়। সেখানে মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য ও গ্রামবাসীদের শুশ্রূষা করার দায়িত্ব ছিল ওই চিকিৎসকের। মনের টানেই সেই কাজ করছিলেন তিনি। বুধবার রাতে আসানসোলের মহিশীলা কলোনি থেকে ৬৭ বছরের ওই চিকিৎসককে গ্রেফতারের পরে মাওবাদীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি বিশদ ভাবে জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীরা জানান, বহু ক্ষেত্রেই জখম মাওবাদীদের শরীরে অস্ত্রোপচার করে গুলি বার করেছেন সমীরবাবু।
পুলিশি সূত্রের খবর, ২০১০-এর ২৫ মার্চ পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির হাতিলোটের জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষের পর থেকেই গোয়েন্দারা সমীরবাবুর খোঁজ শুরু করেন। ওই সংঘর্ষের পরেই রাজ্যে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেণজি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া বা সাংবাদিকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা বন্ধ করে দেন। ’১১-র ২৪ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের কাছে বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন কিষেণজি।
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বক্তব্য, হাতিলোটের লড়াইয়ে মাওবাদীদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। কয়েক জন স্থানীয় মাওবাদী নেতা মারা যান, জখমও হন কয়েক জন। পরে জানা যায়, ওই ঘটনায় কিষেণজি অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও প্রথম সারির কয়েক জন মাওবাদী নেতা জখম হয়েছেন। আর সেই আহত মাওবাদীদের চিকিৎসা করেছিলেন সমীরবাবু। রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-র এক শীর্ষ কর্তা শুক্রবার বলেন, “হাতিলোটের জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষ নিয়ে শালবনি থানায় মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তী কালে কিষেণজি-সহ মাওবাদীদের সঙ্গে ওই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে যোগ করা হয় আসানসোলের চিকিৎসক সমীরবাবুর নাম। কারণ, তিনি জখম মাওবাদীদের শুশ্রূষা করেছিলেন।”
গোয়েন্দারা জেনেছেন, জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে সাপে কামড়ালে কিংবা অসুখে পড়লে মাওবাদীদের সহায় ছিলেন ওই চিকিৎসক। লালগড়ের কাছে কাঁটাপাহাড়িতে মাওবাদীদের মদতে পুষ্ট পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির এক নেতার বাড়িতে ফ্রিজ এনে জীবনদায়ী ওষুধ, ইঞ্জেকশন রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন সমীরবাবু। আসানসোলে নিজের এলাকায় এবং জঙ্গলমহলে মাওবাদী স্কোয়াডের সদস্য ও সমর্থকদের কাছে চিকিৎসার গুণে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১০ সালের মাঝামাঝি কিষেণজির দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত এক মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যের হাতে গুলি লাগে। সমীরবাবু ওই যুবকের অস্ত্রোপচার করলেও তাঁর ক্ষতস্থানে পচন ধরে যায় বলে পুলিশের দাবি।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, হাতিলোটের সংঘর্ষের পরে কিষেণজি এবং অন্য কয়েক জন মাওবাদী নেতা আসানসোল ও সংলগ্ন এলাকায় কিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। সেই সময় তাঁরা সমীরবাবুর আবাসনেও যান। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ইসিএল থেকে অবসর নিয়েও সমীরবাবু কয়েক বছর ওই আবাসন দখলে রেখেছিলেন। |
|
|
|
|
|