|
|
|
|
শহর লাল করতে সাহায্যের ‘হাত’, উল্টো ছবি বাংলার |
সৌজন্যের রাজনীতিতে কেরল স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গ আসলে ব্যতিক্রম। কেরলের পালাক্কাড ঘুরে এসে লিখছেন
সন্দীপন চক্রবর্তী |
পাশাপাশি দু’টো বাড়ি। পালাক্কাড পুরসভার দফতর আর তাদেরই পরিচালিত টাউন হল। মাঝে ছোট পাঁচিল।
দৃশ্যত থাকলেও কয়েক দিনের জন্য আসলে পাঁচিলটা অস্তিত্বহীন! পুরসভার টাউন হল ভাড়া নিয়ে চলছে সিপিএমের রাজ্য প্লেনাম বা বিশেষ সম্মেলন। পাশের বাড়ি থেকে দিনরাত আসছে সহযোগিতা। পানীয় জলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। হল চত্বরে সামিয়ানার নীচে খাওয়াদাওয়ার আসর থেকে যা উচ্ছিষ্ট পড়ছে, তিন ঘণ্টা অন্তর পুরসভার গাড়ি এসে সাফ করে দিয়ে যাচ্ছে জঞ্জাল। হলের আলো-পাখা ঠিকমতো চলছে কি না, দু’বেলা তদারকি করে যাচ্ছেন পুরকর্মীরা। যে পুরসভার শাসন ক্ষমতায় কংগ্রেস!
বাংলার ইদানীং কালের রেওয়াজে অভ্যস্ত চোখে নভেম্বরের শেষ কয়েকটা দিন বেশ আশ্চর্য লাগছিল! বাংলায় যেমন বামে-তৃণমূলে, কেরলের রাজনীতিতে সিপিএম-কংগ্রেসের সম্পর্ক তেমনই যুযুধান! তেমনই অহি-নকুল! কয়েকটা মাত্র আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট। সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে অনবরত পথে সিপিএমের নেতৃত্বে বিরোধী বাম জোট। সৌর কেলেঙ্কারিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডির ইস্তফা চেয়ে ধুন্ধুমার আন্দোলন চলছে। এই রকম বৈরিতার আবহে প্রধান বিরোধী দলের সাংগঠনিক সম্মেলন আয়োজনে কি না সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকারি দলের পুরসভা! |
|
দেশের প্রথম কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী ই এম এস নাম্বুদিরিপাদের নির্বাচন ক্ষেত্র ছিল উত্তর কেরলের এই পালাক্কাড। সিপিএমের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের জন্মভিটে এই পালাক্কাডের এরাপুল্লি গ্রামে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের বিধানসভা কেন্দ্র এই জেলায়। চিরকালের লাল দুর্গ। যদিও জেলা সদরের পুরসভা অধুনা কংগ্রেসের দখলে। এবং প্লেনাম উপলক্ষে শহর লাল হয়ে উঠতে কোনও বাধাই নয় শাসক দলের রং!
কলকাতার সর্বশেষ খবর, ২৩ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কনভেনশন করার কথা ছিল বামেদের। প্রথমে নেতাজি ইন্ডোর চেয়ে আবেদন। সাড়া নেই দেখে মহাজাতি সদন। সে-ও নাকচ হওয়ার পরে শেষমেশ কনভেনশনই পিছিয়ে জানুয়ারিতে! রাজনৈতিক ভাবে একই রকম স্পর্শকাতর আর একটা রাজ্য হয়ে কেরল কী ভাবে ব্যতিক্রম হল? বাংলায় বিরোধীরা যে লাগাতার অভিযোগ করেন টাকা দিয়ে হল ‘বুক’ করতে চাইলেও সরকারি টালবাহানায় কাজ করা দায়, এখানে সে সব নেই তো! পালাক্কাডের মেয়র (ছোট পুরসভা হলেও এখানে মেয়রই বলে পুরপ্রধানকে) আব্দুল কুদুসের কাছে উত্তর খুঁজতে গিয়ে লজ্জিতই হতে হল! কুদুস বলছেন, “বাংলার কথা আলাদা! কিন্তু এটাই স্বাভাবিক না?”
মেয়রের সহজ যুক্তি, ভাড়া দিয়ে হল নেওয়ার পরে তার পরিষেবা ঠিক রাখা পুরসভারই দায়িত্ব। কুদুসের কথায়, “যে হেতু বিরোধী দলের সম্মেলন, সেখানে ত্রুটি থাকলে রাজনৈতিক প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই আমরা আরও সতর্ক থেকেছি।” সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের তরফে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এ কে বালানের বক্তব্য, “পালাক্কাডে প্লেনাম হবে, ঠিক হয়েছিল মাত্র এক মাস আগে। তার পর শহর সাজানো থেকে শুরু করে প্রেক্ষাগৃহে যাবতীয় বন্দোবস্ত, কোথাও কোনও অসহযোগিতা পাইনি। প্লেনাম উপলক্ষেই কয়েকটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছি আমরা। তার জন্য ফোর্ট ময়দান প্রেক্ষাগৃহও পুরসভার কাছ থেকে পেয়েছি। পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।” প্রাক্তন মন্ত্রী বালান জানাচ্ছেন, তাঁরা সরকারে থাকতেও একই জিনিস করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। |
|
প্লেনাম শেষে ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে নিয়ে জনসভা। সেখানেও পুরসভার অনুমোদন। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী চান্ডির ইস্তফা এবং সৌর কেলেঙ্কারির বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করার সিদ্ধান্তে বিরোধী দলের নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিয়েছেন ওই প্লেনামেই! যার শিল, যার নোড়া, তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া হয়ে গেল না? মেয়রের সহাস্য বক্তব্য, “সেটা ওঁদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। অনুষ্ঠান আয়োজনে পুরসভার ভূমিকার সঙ্গে এটা এক করে দেখা উচিত নয়!”
গায়ে না মেখে সহজে ঘটনাচক্রটা উড়িয়ে দিতে পারলেন কুদুস। তাঁর পুরসভাও পারল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। অনেক দূরে বাংলার বিধানসভা ৭৫ বছর পূর্তির সমাপ্তি উপলক্ষে সৌজন্য নিয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনল। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই পেলেন না বিরোধী শিবিরের নেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরাও রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান পর্যন্ত বয়কট করল।
বাংলা আসলে ব্যতিক্রম! কেরল স্বাভাবিক! কুদুসের কথাটা খুব ভুল?
|
ছবি: লেখক। |
|
|
|
|
|