রেলেরল পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর স্টেশন বাদ পড়ার প্রতিবাদে সরব বাসিন্দারা। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান দিয়ে শুরু করে আন্দোলনে নেমেছে গঙ্গারামপুর রেল উন্নয়ন কমিটি। দাবিপত্র নিয়ে দিল্লি গিয়ে রেলমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। এ জন্য মঙ্গলবার দিল্লি রওনাও হয়ে গিয়েছেন কমিটির প্রতিনিধিরা।
কমিটি সম্পাদক অজয় দাস বলেন, “বিযয়টি আমরা ডিআরএম ও রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে একাধিকবার লিখিত জানিয়েছি। কাজ না হওয়ায় ১৩ ডিসেম্বর রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গের সঙ্গে দেখা করে দাবি সনদ দেব। রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমোদন মিলেছে। তাতেও কাজ না হলে প্রস্তাবিত গঙ্গারামপুর স্টেশনটিকে ডি-শ্রেণীর স্টেশনে উন্নীত করার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন হবে।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের মহকুমা শহর গঙ্গারামপুরের স্টেশনটি হল্ট-স্টেশন থেকে উন্নীত করার দাবি দীর্ঘদিনের। ২০০৪-এ বালুরঘাট-একলাখি রেলপথ চালু হওয়ার পর থেকেই অবহেলার শিকার এই স্টেশন। প্ল্যাটফর্ম এতটাই নিচু যে অন্যের সাহায্য ছাড়া বয়স্করা ট্রেনে উঠতে পারেন না। নেই পর্যাপ্ত শেড। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেই। চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারকে দিয়েই চলে টিকিট কাউন্টার।
নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে গত বছর গঙ্গারামপুর-সহ তিনটি স্টেশনকে ডি-ক্যাটাগরিভুক্ত করার প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠান উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ। বাকি দু’টি স্টেশন হল তপনের রামপুর এবং বংশীহারির দেওতলা স্টেশন। স্টেশন তিনটির পরিকাঠামোর উন্নয়নে প্রায় ২২ কোটি টাকার খসড়া প্রকল্পও পাঠানো হয়। সম্প্রতি গঙ্গারামপুরকে বাদ দিয়েই অন্য দু’টি স্টেশন উন্নয়ন খাতে ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রেল দফতর থেকে টেন্ডার বের হয় । পূর্ব সীমান্ত রেলের ডিআরএম অরুণ শর্মা বলেন, “গঙ্গারামপুর-সহ তিনটি হল্ট স্টেশনকে ডি-ক্যাটাগরি স্টেশনে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু অন্য দু’টি স্টেশন উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।” তিনি জানান, নতুন করে গঙ্গারামপুরের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে কাজ শুরু হবে। তবে সার্বিক ভাবে উত্তরবঙ্গের জেলায় স্টেশনের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রেক-পয়েন্ট তৈরির গুরুত্বের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও রেল দফতর উদাসীন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। রেল সূত্রে খবর, ডি ক্যাটাগরি স্টেশনে উন্নীত হলে যাত্রী শেড, ট্রেনের উচ্চতার সঙ্গে সমতা রেখে প্ল্যাটফর্ম ও ডবল লাইন তৈরি হবে। এ ছাড়া যাত্রী পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নতিও হবে। দূরপাল্লার ট্রেনে উঠতে যাত্রীরা সময় পাবেন। একজন স্টেশন ম্যানেজারও নিযুক্ত হবেন। থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
স্থানীয় বণিক মহলের দাবি, গঙ্গারামপুর এলাকায় রয়েছে ১৪টি বড় চালকল। তেল, হস্তচালিত তাঁতের শাড়ি-সহ একাধিক কারখানাও রয়েছে এই এলাকায়। রয়েছে এফসিআইয়ের গুদামও। গঙ্গারামপুর থেকে রোজ সড়ক পথে মাছ ও মিস্টি দই যায় নানা এলাকায়। স্টেশন উন্নয়নের দাবি তুলে গঙ্গারামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সত্যেন রায় বলেন, “পুর-শহর গঙ্গারামপুর জেলার অন্যতম বাণিজ্য শহর। অথচ গঙ্গারামপুরকে গুরুত্ব দেয়নি রেল দফতর। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” |