কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও রয়ে গিয়েছে লাল বাতি
লাল বাতি আছে লাল বাতিতেই! অন্তত শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা এমনই। অথচ সুপ্রিম কোর্টের লাল বাতি ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশের কথা ব্যবহারকারীরা প্রায় সকলেই জেনেছেন, শুনেছেন। হয়তো কেউ কেউ উদ্বিগ্ন। কেউ নির্বিকার। প্রশাসনের কোনও কর্তা কেউ দ্বিরুক্তি না করে লাল বাতি খুলিয়েছেন। কোনও পুলিশ কর্তা আবার লাল বাতি ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের কোনও মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিবের গাড়ির লাল বাতি অবশ্য যথারীতি দেখাই যাচ্ছে।
মালদহে একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিকের গাড়িতেই
দেখা গিয়েছে লাল বাতি। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
তবে পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র, গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সরকারি ভাবে মিললে তা অবশ্যই মেনে চলা হবে। লাল বাতি খোলার নির্দেশ থাকলে খুলে দেওয়া হবে। আগে নির্দেশ আসুক।” তেমনই জেলা পুলিশ-প্রশাসন কিংবা পুলিশ কমিশনারেটের প্রথম সারির অফিসারদের অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরাও নির্দেশ পাওয়া মাত্র লাল বাতি গাড়ি থেকে খুলিয়ে ফেলবেন।
যতদিন না নির্দেশ আসে, ততদিন অবশ্য যে সব লাল বাতির গাড়ি রয়েছে তার সিংহভাগই যে একই ভাবে চলবে সেটা বুধবারও বাসিন্দারা টের পেয়েছেন। যেমন শিলিগুড়ির কথাই ধরা যাক। পুলিশ কমিশনারের গাড়িতে তো রয়েইছে। ডিসি, অতিরিক্ত ডিসি, এসিপি-র গাড়িতেও লাল বাতি জ্বলতে দেখছেন শহরবাসী। এমনকী, সাতসকালে সুভাষপল্লির হাতিমোড় এলাকার একটি স্কুলে নিয়মিত কিন্ডার গার্টেনে এক পড়ুয়াকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে লাল বাতি লাগানো পুলিশের গাড়ি। কখনও গাড়ির মাথার আলোটি অবশ্য জ্বলে না। তবে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, স্কুলে যাতায়াতের সময়ে সেই গাড়ির সামনের লাল বাতিটি জ্বলছে, নিভছে।
জলপাইগুড়িতেও প্রায় একই দৃশ্য। দুধ সাদা অ্যাম্বাসাডরের মাথায় লাগানো লাল বাতি। শিরিষতলা এলাকার বাসিন্দারা অনেকে দেখতে অভ্যস্ত, ওই গাড়িতে লাল বাতি জ্বলছে। স্কুল পড়ুয়া যাতায়াত করছে। চেনা ছবি বদলায়নি এদিনও। আলিপুরদুয়ার, মালবাজারেও লাল বাতি জ্বালিয়ে যাতায়াত করাটাই অনেক অফিসারের রেওয়াজ। যে কোনদিন শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির কোনও বড় শপিং মলের কাছে গেলেই দেখা যায়, রাস্তার ধারে যেখানে পার্কিংয়ের জায়গা নেই, সেখানে পর পর দাঁড়িয়ে লাল বাতি লাগানো গাড়ি। আমজনতা শুধু নয়, ট্রাফিক পুলিশের সাধারণ কর্মীরাও ওই দৃশ্যের সাক্ষী।
মালদহের ছবিটা একটু আলাদা। এ দিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা জানার পরেই অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অমলকান্তি রায় তাঁরপ গাড়ির লাল বাতিটি খুলিয়ে দিয়েছেন। অমলকান্তিবাবু বলেন, “আমি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ পাইনি ঠিকই। তবুও লাল বাতিটি খুলিয়ে দিয়েছি। এতে কোনও অসুবিধে হবে না।” তা হলে এতদিন কেন ব্যবহার করেছেন? অমলকান্তিবাবুর জবাব, “আসলে গাড়িতে লাগানোই ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পরে ওঠা খোলার কথা ভাবলেও করা হয়ে ওঠেনি।” মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদীও অবশ্য জানিয়ে দেন, লালবাতি লাগানো নিয়ে রাজ্য সরকারের যা নিয়ম আছে তাঁরা সেটাই মেনে চলছেন।
রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরা অবশ্য তড়িঘড়ি লাল বাতি খোলার কথা ভাবছেন না। যেমন কোচবিহারে একাধিক জনপ্রতিনিধিকে লাল বাতি জ্বালিয়ে যাতায়াত করতে দেখতে অভ্যস্ত বাসিন্দারা। কখনও কেউ প্রশ্ন তোলেননি। কোচবিহারের প্রবীণ নাগরিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, হাটে-বাজারে, দোকানের সামনে,, কখনও সেলুনের সামনেও লাল বাতির গাড়ি দেখা যায়। এতদিন কেউ কোনও প্রশ্ন না তুললেও দেশের সর্বোচ্চ আদালত যথেচ্ছ লাল বাতির ব্যবহার করতে নির্দেশ দেওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও পাল্টাবে বলে মনে করেন তাঁরা। কোচবিহারের নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “লাল বাতির গাড়ির ব্যবহার যথেচ্ছ হওয়াটা ঠিক নয়। কোচবিহারে তেমন হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসুক। নিশ্চয়ই তা মেনে চলা হবে।”
নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা, সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ। সেই নির্দেশ কবে পৌঁছয় ও কতটা কার্যকরী হয় সেটাই এখন দেখতে চান উত্তরের ছয় জেলার মানুষ।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.