শিশুকন্যার গর্ভে থাকা থেকে বিবাহ এবং তারপরে জননী হওয়া। এই পুরো সময়টাই তার থাকা দরকার সুরক্ষার জালে। অথচ সেখানেই তাকে বারবার নানা বিপদের মুখে পড়তে হয়। সেই বিপদগুলি সম্বন্ধে সতর্ক করার জন্যই সম্প্রতি কল্যাণীতে আয়োজিত হয়েছিল একটি আলোচনাচক্র। বিশেষজ্ঞেরা সেখানে নাবালিকা বিবাহের কুফল থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের কী খাওয়া উচিত, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কল্যাণীর বিদ্যাসাগর মঞ্চে আয়োজিত ‘সেভিং দ্য গার্ল চাইল্ড’ শীর্ষক ওই আলোচনায় হাজির ছিলেন ব্রিটেনের ক্রিস্টোফার বি-লিংচ, বাংলাদেশের শোয়েব আখতার, নেপালের আসমা রানা-সহ বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকদের সংগঠন কল্যাণী অবেস্টিট্রিক্স অ্যান্ড গায়ানোকোলজিকল সোসাইটি। অনুষ্ঠানে স্কুল পড়ুয়া, আইন কলেজের পড়ুয়াদের প্রশ্নেরও উত্তর দেন চিকিৎসকরা।
এই সংগঠন পথ চলা শুরু করেছিল ২০ জন সদস্য নিয়ে। এখন সদস্য সংখ্যা ৩৮। ইতিমধ্যে ২০১০ সালে ‘গর্ভাবস্থায় মায়েদের রক্তাল্পতা’, ২০১১ সালে ‘গর্ভবতী মায়েদের কেন মৃত্যু হয়’ এবং ২০১২ সালে ‘কৈশোরে গর্ভধারণ’ নিয়ে জাতীয় সন্মেলন আয়োজন করেছিল এই সংগঠন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কর্মশালা, আলোচনাচক্রের আয়োজনও করেছে তারা। কল্যাণীর এই সম্মেলনেও উঠে এল মেয়েদের শারীরিক নানা বিষয়ের কথা। চিকিৎসকরা জানান, আমাদের দেশের অনেক গ্রামেই মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা য়ায়। এই সময়ে শারীরিক গঠন সম্পূর্ণ হয় না ফলে, প্রসবের সময় তাদের অনেকের মৃত্যু হয়। আবার গর্ভাবস্থায় নানা রোগের মুখোমুখি হয়েও মৃত্যু হয় অনেকের।
সম্মেলনের আহ্বায়ক দিলীপকুমার দত্ত বলেন, “শিশু গর্ভে থাকার সময় থেকে মেয়ের বিয়ে পর্যন্ত সাতটি বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা বলেছি। গর্ভে থাকার সময় তাকে রক্ষা করা, তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা, তাদের বিক্রি করার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে, বিয়ের আগে যাতে স্বাস্থ্য গঠন হয় তার দিকে নজর দিতে হবে। তারা যাতে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে সেটাও দেখতে হবে। এমনকী বিয়ের আগে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে।” সঙ্গে প্রসূতিদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তাঁর মত, “গর্ভাবস্থায় ফাস্ট ফুড এড়িয়ে যেতে হবে। বয়স অনুযায়ী পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। তবে যতটা সম্ভব ফ্যাট জাতীয় খাবার ত্যাগ করতে হবে। এক কথায় সুষম খাবার খেতে হবে।”
প্রসঙ্গক্রমে আলোচনায় উঠে এসেছে মেয়েদের শিক্ষার প্রসঙ্গও। শিক্ষার উপরে জোর দিয়েছেন চিকিৎসক বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সবার আগে শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা না হলে কিছুই সম্ভব নয়।” দু’দিনের এই সেমিনারে গুরুত্ব পেয়েছে আল্ট্রাসোনোগ্রাফির বিষয়টিও।চিকিৎসক ইন্দ্রনীল দত্ত বলেন, “আমাদের রাজ্যের খুব কম মহিলাই আল্ট্রাসোনোগ্রাফির বিষয়ে জানেন। অনেক সময় ভুয়ো চিকিৎসকরা যে যন্ত্র দিয়ে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করেন তা ঠিক নয়। সে কারণেও অনেক সময় প্রসূতির মৃত্যু হয়। আমাদের সেই বিষয়েও সচেতন হতে হবে।” |