স্কুলের চৌহদ্দির মধ্যেই রয়েছে ১১ হাজার ভোল্টের ট্রান্সফর্মার। পড়াশোনার ফাঁকে সেই ট্রান্সফর্মারটিকে ঘিরেই খেলাধুলো করে খুদে পড়ুয়ারা। ট্রান্সফর্মার থেকে যে কোনও সময় ঘটতে পারে বিপদ। এই আশঙ্কায় প্রতি মূর্হূতে তটস্থ হয়ে থাকেন শিক্ষকরা।
সিমলাপাল ব্লকের পুইপাল প্রাথমিক স্কুলের এই সমস্যা নতুন নয়। স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা জানান, গত ২০ বছর ধরে স্কুলের উপর দিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎবাহী তার গিয়েছে। স্কুল চত্বরে বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে ওই ট্রান্সফর্মার। বিদ্যুৎ দফতরের কাছে ট্রান্সফর্মারটি সরানোর আর্জি জানিয়েও ফল হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
স্কুল সূত্রে খবর, ১৯৩৬ সালে এই স্কুলটি গড়ে ওঠে। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা জগদীশচন্দ্র সিংহ মহাপাত্র বলেন, “স্কুলের ভিতর ট্রান্সফর্মার বসালে বাচ্চাদের যে বিপদ ঘটতে পারে, বিদ্যুৎ আসার আনন্দে সেই ভাবনাটাই মাথায় আসেনি। স্কুলের তরফেও তখন আপত্তি তোলা হয়নি। কিন্তু পরে বিদ্যুৎ দফতরের কাছে বার বার ট্রান্সফর্মরটি সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও এখনও পর্যন্ত তা সরানো হয়নি।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক করালীকান্ত শতপথি বলেন, “স্কুলের মধ্যে ১১ হাজার ভোল্টের ট্রান্সফর্মারটির এক পাশে মিড-ডে মিল রান্নার ঘর রয়েছে। এক পাশে রয়েছে শৌচাগার। অন্য দিকে ক্লাসরুম। বাচ্চারা ট্রান্সফর্মারটির আশপাশে খেলাধুলা করে। কখন বিপদ ঘটে এই সংশয়ে থাকতে হয়।” |
পড়ার ফাঁকে খেলা। সিমলাপালের পুইপাল গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
স্কুলে পড়াশোনা করে প্রায় ৯৫ জন। শিক্ষকদের আশঙ্কা, ট্রান্সফর্মারের নীচের দিকে কিছু তার ঝুলছে। ট্রান্সফর্মারটি চালু ও বন্ধ করার লোহার আইসোলেটার মাটি থেকে খুব বেশি উপরে নেই। নিষেধ করা সত্ত্বেও সেই লোহার রড ধরে পড়ুয়ারা মাঝে মধ্যে খেলা করে। যে কোনও সময় শটসার্কিট হয়ে বড় বিপদ ঘটার আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। এক শিক্ষক বলেন, “আমরা খুব ভয়ে ভয়ে থাকি। সব সময় বাচ্চাদের নজরে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু এত বাচ্চাকে নজরে রাখাও যায় না। স্কুলের বাচ্চাদের কিছু হলে কে তখন ওই ঘটনার দায় নেবে?”
প্রধান শিক্ষক জানান, গত কয়েক বছর ধরে তাঁরাও স্কুলের তরফে ট্রান্সফরর্মাটি সরানোর দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়েছেন। বছর খানেক আগে ওই স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ওই স্কুলের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। ট্রান্সফর্মারটি সরানোর ব্যবস্থা করতে আগে জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। সম্প্রতি জেলা পরিষদের সভাধিপতিকেও ঘটনাটি জানিয়েছি।” সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির (অ্যাবেকা) জেলা সম্পাদক স্বপন নাগও বিদ্যুৎ দফতরের গড়িমসি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এটা ছেলে খেলার বিষয় নয়। অতগুলো শিশুর জীবনের প্রশ্ন। অবিলম্বে স্কুল থেকে ট্রান্সফর্মারটি সরিয়ে বাচ্চাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।”
সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর আশ্বাস, “স্কুলের মধ্যে ট্রান্সফর্মার থাকতে দেওয়া যায় না। আমি বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।” বিদ্যুৎ দফতরের সিমলাপাল স্টেশনের এক আধিকারিক বলেন, “কয়েক মাস আগে আমরা ওই ট্রান্সফর্মার থেকে ঝুলে থাকা তার একটি বাক্সের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছি। এতে বিপদের আশঙ্কা কিছুটা কমেছে। তবে ট্রান্সফর্মারটি সরানোর কথা আমরাও ভাবছি।’’ কিন্তু কবে? সদুত্তর মেলেনি। বিদ্যুৎ দফতরের বাঁকুড়ার রিজিওনাল ম্যানেজার এ আর গিরি বলেন, “ঘটনাটি জানা নেই। খোঁজ নেব।” |