জিতলেন সভাধিপতিই! জয়পুর গার্লস হাইস্কুলের টিচার-ইন-চার্জ (টিআইসি) পদে নিয়োগ নিয়ে বিতর্কে জয়ী হল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। অগ্রাহ্য করা হল স্কুলের শিক্ষিকাদের বড় অংশের (স্টাফ কাউন্সিল) মতামতকে।
স্টাফ কাউন্সিল যাঁকে টিআইসি হিসাবে মনোনীত করেছিল, সেই শিক্ষিকা অর্চনা চৌধুরীকে সরিয়ে জয়পুর গার্লস হাইস্কুলের টিআইসি করা হল পুরুলিয়ার সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর মনোনীত প্রার্থী রুমা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। বুধবার জেলা স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) পাঠানো চিঠি হাতে পেয়ে টিআইসি হিসাবে তাঁকে নিয়োগ করার কথা নিজেই জানিয়েছেন রুমাদেবী। তাঁর বক্তব্য, “চিঠি হাতে পেলেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত টিআইসি অর্চনা চৌধুরী স্কুলে না আসায় আমি এ দিন দায়িত্বভার নিইনি।”
ওই স্কুলের টিআইসি নিয়োগকে ঘিরে জটিলতা চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। চলতি অক্টোবরে তৎকালীন টিআইসি চিত্রা সিংহ অবসর নেওয়ার পরে কে ওই পদে বসবেন, তা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। স্কুলে পরিচালন সমিতিও নেই। সভাধিপতির নির্দেশ অনুযায়ী, জেলা স্কুল পরিদর্শক রুমাদেবীকে টিআইসি হিসেবে নিয়োগ করেন। যদিও স্কুলের স্টাফ-কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্য চেয়েছিলেন, রুমাদেবীর তুলনায় ‘সিনিয়র’ শিক্ষিকা হিসেবে অর্চনাদেবীই ওই পদের দায়িত্ব নিন। চিত্রাদেবীর অবসরের পর বেশ কিছুদিন টিআইসি পদ খালি পড়ে থাকায় স্কুলের অভ্যন্তরীন কাজে কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
নভেম্বরের শেষের দিকে অবিলম্বে টিআইসি নিয়োগের দাবি তুলে পুরুলিয়ায় জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে এসে নিজেদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেন স্টাফ-কাউন্সিলের একাধিক সদস্য। তাঁদের অভিযোগ ছিল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্য শিক্ষিকাকে টিআইসি হিসেবে চাইছেন বলেই স্টাফ-কাউন্সিলের মনোনীত শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। সেই সময় স্কুলে প্রশাসকও ছিল না। ২২ নভেম্বর স্কুল পরিদর্শক জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিক কাশীনাথ দে-কে ওই স্কুলের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৮ তারিখ প্রশাসকের উপস্থিতিতে স্টাফ-কাউন্সিলের সদস্যদের ধ্বনি ভোটের ভিত্তিতে টিআইসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অর্চনাদেবী। তাঁর পক্ষে ১১ জনের এবং সভাধিপতির মনোনীত প্রার্থী রুমাদেবীর পক্ষে মাত্র ৩ জনের সমর্থন ছিল। ওই দিন স্কুলে গিয়েছিলেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রাধারানি মুখোপাধ্যায়ও।
এই ঘটনার পরেই হস্তক্ষেপ করে জেলা পরিষদ। শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য সুষেণচন্দ্র মাঝি জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে জানতে চান, জেলা পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতির মনোনীত রুমাদেবীকে কেন টিআইসি-র দায়িত্ব দেওয়া হল না। এক্ষেত্রে সভাধিপতির নির্দেশ কেন লঙ্ঘন করা হয়েছে, তা-ও জানতে চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের পাঠানোর চিঠির জবাব জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে পাওয়ার পরে গত ২ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতি শুধু ওই স্কুলের টিআইসি নিয়োগ নিয়ে বৈঠকে বসে। সেখানেই রুমাদেবীকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সেদিনই জেলা স্কুল পরিদর্শকে চিঠি পাঠিয়ে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। দ্রুত রুমাদেবীকে টিআইসি পদে বসানোর নির্দেশও দেওয়া হয় সেই চিঠিতে।
জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে বুধবার অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ এ দিন বলেন, “স্থায়ী সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই স্কুলের সহ-শিক্ষিকা রুমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টিআইসি পদে মনোনীত করা হয়েছে।” এ দিনই জয়পুর গার্লস হাইস্কুলে জেলা স্কুল পরিদর্শকের একটি চিঠি পৌঁছয়। রুমাদেবী বলেন, “চিঠি পেয়েছি। আমাকেই টিআইসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “আমাকে সভাধিপতি যোগ্য মনে করেছেন। তার মর্যাদা দিতে চাই।” ধ্বনি ভোটের সময় সহকর্মীদের সমর্থন না পাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এটা কোনও ব্যাপার নয়। এখন স্কুলটাকে ভালো ভাবে চালানোটাই আমার কাছে বড় কাজ। ও-সব ভুলে গিয়ে সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই।” অন্য দিকে অর্চনাদেবীর মন্তব্য, “আমি আর কী বলব! যদি রুমাদেবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেব।” কিন্তু, স্টাফ-কাউন্সিলের সিংহভাগ সদস্যের সমর্থনের ভিত্তিতেই তো আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল? অর্চনাদেবীর জবাব, “যা ঘটেছে সবার জানা।”
স্কুলের অভ্যন্তরীণ কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা অবশ্য মানতে নারাজ সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। তিনি বলেন, “শিক্ষা স্থায়ী সমিতি যাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার যোগ্য মনে করেছে তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বিতর্কের কী আছে?” |