লালবাতি ব্যবহারের যথেচ্ছাচার রুখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে বুধবার সকালেই মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকের গাড়ির মাথায় লাগানো লালবাতি খুলে নেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা সাংবাদমাধ্যমে দেখে সিএমওএইচ অজয় চক্রবর্তী এদিন সকালে তড়িঘড়ি ওই লালবাতি খুলে নেওয়ার জন্য গাড়ির চালককে নির্দেশ দেন। এর পরেই গাড়ি থেকে খুলে রাখা হয় লালবাতি ।
লালবাতি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ জারি করেছে, তাঁকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন জেলার এক মাত্র মন্ত্রী তৃণমূলের সুব্রত সাহা। তাঁর কথায়, “হাঁফ ছেড়ে বাঁচব। মাথার উপরে লালবাতি জ্বলতে দেখে অস্বস্তি হয়। রাস্তাঘাটে যানজটে ফেঁসে গেলে লালবাতি লাগানো গাড়ি দেখে ছেড়ে দেয়। এটা ছাড়া বাড়তি কোনও সুবিধে লালবাতির আছে বলে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি না।” |
রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী যেমন সরকারি কোনও গাড়ি ব্যবহার করেন না। তাঁর নিজের গাড়িতেও কোনও লালবাতি লাগানো নেই। অধীরবাবু বলেন, “চেনা বামুনের পৈতে লাগে না।”
তবে জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরের সিজেএম আদালত চত্বরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসেন ফ্ল্যাসার-সহ লালবাতি জ্বালিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট পুলিশের গাড়িতে নীল, সাদা, কিংবা বহু বর্ণের ঘূর্ণায়মান বাতি (ফ্ল্যাসার) লাগাতে হবে বলে নির্দেশ জারি করার ফলে পুলিশকর্তারা আর তাঁদের গাড়িতে লাল আলো লাগাতে পারবেন না। তা সত্ত্বেও জেলা পুলিশ সুপারের গাড়ির সামনে লালবাতি এবং গাড়ির মাথায় ঘূর্ণায়মান বাতি (ফ্ল্যাসার) জ্বলতে দেখা গিয়েছে।
অজয়বাবু অবশ্য বলেন, “অন্য জেলায় অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহার হয় লালবাতির। কিন্তু মুর্শিদাবাদে যে কোনও পদাধিকারীর গাড়িতে ফ্ল্যাসার-সহ লালবাতি ও হুটার লাগানো রয়েছে। ওই সব দেখে আমার অফিসের কর্মীরাও লালবাতি লাগানোর কথা জানায়। সেই মতো লালবাতি লাগানো হয়েছিল। কিন্তু আমি জেলার বাইরে কোথাও গেলে লালবাতি খুলে রাখি।” পুলিশ সুপার অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিন জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে দেখা যায় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তার লালবাতি লাগানো গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে। চালকদের কথায়, এখনও পর্যন্ত কোনও সাহেব লালবাতি খুলে রাখার কথা বলেননি। মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের দু’টি গাড়ির মাথার উপরে লালবাতি লাগানো রয়েছে। কিন্তু বহরমপুরের মধ্যে অন্তত লালবাতি জ্বালিয়ে ঘুরে বেড়াতে তাঁকে কেউ দেখেননি। লালবাতি প্রসঙ্গে জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের সংক্ষিপ্ত জবাব, “কাদের গাড়িতে লালবাতি থাকবে, তা জানিয়ে সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে সরকার ২০০৭ সালে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তাতে স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছেজেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার তাঁদের গাড়িতে লালবাতি লাগাতে পারবেন। লালবাতি লাগানো তাঁরা অবশ্য ওই গাড়িতে চড়ে জেলার বাইরে যেতে পারবেন না বলেও সেখানে উল্লেখ রয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি ছাড়া অন্য কোনও জনপ্রতিনিধির গাড়িতে লালবাতি লাগানো যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও জেলাপ্রশাসনের বিভিন্ন জেলা আধিকারিকদের গাড়িতে যেমন লালবাতি লাগানো আছে, তেমনি জেলাপরিষদের বিভিন্ন কর্মাধ্যক্ষকে লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে ঘুরতে দেখা যায়।
তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে সরকার নতুন করে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করে কি না, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) এনাউর রহমান এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সন্দীপ দত্তের কথায়, “সরকারি কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি। সরকার নির্দেশ দিলেই লালবাতি খুলে রাখব।” |