নাবালিকার বিয়ে নয়, মাইকে প্রচার ইমামদের
জুম্মার নমাজে নাবালিকার বিয়ে রোখার আর্জিও ঠাঁই পেয়ে গেল।
মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া এবং লাগোয়া এলাকার অন্তত পঞ্চাশটি মসজিদে এখন এটাই রেওয়াজ। প্রতি শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নমাজ শেষে তাই মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসছে, “ভাই সব, একটি বিশেষ ঘোষণা কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া মানে নিজের সন্তানের ক্ষতি ডেকে আনা। মেয়ে সাবালিকা হলে তবেই বিয়ে দেবেন...।”
মসজিদের মাইক থেমে যেতেই হরিহরপাড়ার আরজুমা বানু বলেন, “মাস দুয়েক থেকে ফি শুক্রবারেই মসজিদ থেকে জানানো হচ্ছে, কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে কী কী ক্ষতি হবে। আমিও ঠিক করেছি, মেয়ে আগে লেখাপড়া শিখুক। তারপর যখন সাবালিকা হবে তখনই বিয়ের কথা ভাবব। তার আগে নয়।”
হরিহরপাড়ায় অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রথা দীর্ঘ দিনের। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দু’ একটি রোখা গেলেও এই প্রবণতা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের হরিহরপাড়া শাখার সম্পাদক জাকির হুসেন জানান, নাবালিকার বিয়ের প্রতিবাদ করতে গেলে অনেক সময় তার উল্টো মানে করা হয়। এতে সমস্যা বাড়ে বই কমে না। “তাই ইমামদের সাপ্তাহিক আলোচনায় বসে আমরা ঠিক করি যে, নাবালিকা বিয়ে রুখতে মসজিদ থেকেই প্রচার করতে হবে। সেই মতো এলাকার প্রায় পঞ্চাশটি মসজিদ থেকে জুম্মার নমাজের শেষে প্রচার চলছে,” বলেন তিনি।
নাবালিকার বিয়ে রুখতে ইমামদের প্রচার। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
মাইকে প্রচারের পাশাপাশি সময় পেলেই ইমামরা দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা বোঝাচ্ছেন, নাবালিকা বিয়ে দিলে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে। মেয়ের স্বাস্থ্যের নানা সমস্যাও দেখা দেয়। চোঁয়া নতুনপাড়া মসজিদের ইমাম সাইমুদ্দিন মণ্ডল বলেন, “অল্প বয়সে বিয়ে দিতে পারলে অনেক অভিভাবক হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। তাঁরা ভাবেন যে, মাথা থেকে বিরাট একটা চাপ কমে গেল। বাস্তবে কিন্তু ঠিক উল্টোটাই হয়। মেয়ে ও তার সন্তান, দু’জনেরই ভবিষ্যৎ ঝুঁকির হয়ে যায়।”
অনেক বাবা-মা অবশ্য ইমামদের বলেন, “পয়সা নেই, কী করে মেয়ের বিয়ে দেব?” তাই ইমামরা এ-ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, ১৮ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে তাঁরাই বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের খরচ দিয়ে দেবেন। অন্য দিকে, যাঁরা মুসলিমদের বিয়ে দেন, সেই কাজীদেরও ইমামদের পরামর্শ, কাবিলনামাতে যেন মেয়ের বয়স উল্লেখ করেন, এবং তা কেবল বাবা-মায়ের মুখের কথা না শুনে, বার্থ সার্টিফিকেট দেখে লেখা হয়।
প্রচার শুরুর গোড়ায় সমস্যা যে একটু হয়নি তা নয়। কিন্তু এখন ইমামদের কথা মন দিয়ে শুনছেন গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা আমিনা বেওয়া, সুজিয়া বিবি, রাসেদা বিবিরা জানাচ্ছেন, “এ ভাবে তো এর আগে আমাদের কেউ বোঝায়নি। সেই কবে থেকেই দেখে আসছি যে, মেয়েদের বয়স বারো-তেরো বছর হয়ে গেলেই তাদের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। আমাদেরও বিয়ে হয়েছিল খুব অল্প বয়সেই। কিন্তু এখন দিনকাল পাল্টেছে।” তাঁদের মতে, ইমামদের কথায় পূর্ণ বিশ্বাস তাঁদের। তাই মেয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিয়ে দেবেন না, ঠিঁক করেছেন মায়েরা।
স্থানীয় বিডিও রাজর্ষি নাথ জানান, হরিহরপাড়ায় শিক্ষার হার কম। বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর। স্থানীয় মসজিদের ইমামরা মানুষকে সচেতন করতে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা “প্রশংসনীয়” মনে করেন তিনি। পুলিশেরও বক্তব্য, পুলিশ গিয়ে বেশ কিছু নাবালিকা বিয়ে আটকালেও তাতে অবস্থা বদলায়নি। বরং ইমামরা প্রচার শুরু করার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়েছে। হরিহরপাড়া থানার ওসি অরূপ রায় বলেন, “দিনকয়েক আগে হরিহরপাড়ার এক বাসিন্দা থানায় এসেছিলেন। কথায় কথায় তিনি জানান, মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ আসছে। কিন্তু মেয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিয়ে দেবেন না। এটাই বা কম কী বলুন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.