প্রতিবন্ধকতা জয় করে সোনার পদক
মাত্র চার বছর আগের কথা। পটাশপুরের প্রত্যন্ত সমাসপুর গ্রাম থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে শিলিকে নিয়ে তমলুকের নিমতৌড়িতে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে এসেছিলেন বাবা বিষ্ণুপদ আচার্য। মেয়ে ওই সংস্থার হোমে থেকে পড়াশোনা ও হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হোক, এটাই ছিল ইচ্ছে। চার বছর আগের সেই শিলি আজ শুধু লেখাপড়া ও হাতের কাজ শেখাই নয়, সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় স্পেশাল অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় সাঁতার কেটে সোনার পদক-সহ তিনটি পদক জিতে এনেছে।
শিলির মতই মানসিক প্রতিবন্ধী তমলুকের কাপাসবেড়িয়া গ্রামের মেয়ে সোনালি ভৌমিকও আন্তর্জাতিক ওই সাঁতার প্রতিযোগিতায় নেমে রুপোর পদক পেয়েছে। বুধবার নিমতৌড়িতে তমলুক উন্নয়ন সমিতির সভাঘরে এক অনুষ্ঠানে সদ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে পদক জিতে ফেরা শিলি ও সোনালিকে সংবর্ধনা জানান জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। জেলাশাসক বলেন, “উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীরাও সফল হতে পারে। শিলি, সোনালীরা সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা ওদের এই সাফল্যে খুবই গর্বিত। ওদের আরও সাহায্য করা হবে।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুই বিজয়িনী সঙ্গে জেলাশাসক। —নিজস্ব চিত্র।
শুধুমাত্র মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের নিয়ে এই বছর স্পেশাল অলিম্পিকের আসর বসেছিল অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসল শহরে। গত ৩০ নভেম্বর-৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই স্পেশাল অলিম্পিকে ভারত থেকে ৪৬ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাঁতার প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে নেমেছিল শিলি ও সোনালি। প্রতিযোগিতায় সাঁতারের ২৫ মিটার ব্যাক স্ট্রোক ইভেন্টে সোনা জেতে শিলি। শুধু তাই নয়, সে ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে রুপো ও বাটার ফ্লাইয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে। আর ২৫ মিটার ব্যাক স্ট্রোকে রুপোর পদক পেয়েছে সোনালী। শিলির মতো সোনালীও চার বছর আগে নিমতৌড়ির ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় এসেছিল। মানসিক প্রতিবন্ধী সোনালীর বাবা প্রশান্ত ভৌমিক পেশায় দিনমজুর। ওই সংস্থায় থেকেই পড়াশোনা, হাতের কাজ শেখার পাশাপাশি সাঁতারের প্রশিক্ষণও নেয় সে। আর সেখান থেকেই সাফল্যের ধাপ গড়া শুরু। শিলি, সোনালিদের এই সাফল্যের পিছনে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে প্রশিক্ষক জয়দেব অধিকারী, শ্যামলী মান্না ও শিউলি ভুঁইয়ার। তমলুকের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় শারীর শিক্ষার প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকা ওই তিন প্রশিক্ষক শিলি, সোনালীদের নিয়ে পাশের নিমতৌড়ি স্মৃতি সৌধের পুকুরে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দিতেন। শ্যামলীদেবী বলেন, “মাত্র দু’বছর আগেই ওদের সাঁতার শেখানো শুরু করি। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে ওরা সাফল্য পেয়েছে। তাই ওদের সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম।”
বুধবার মেয়ের সংবর্ধনায় এসেছিলেন শিলির বাবা বিষ্ণুপদবাবু ও মা ছবিরানিদেবী। বিষ্ণুপদবাবু বলেন, “শিলি ছোটবেলা থেকে ভাল করে কথা বলতে পারে না। তাই ওকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরিচিতদের কাছে জানতে পেরে নিমতৌড়ির এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওকে নিয়ে এসেছিলাম। ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় পদক জিতবে, এমনটা তো স্বপ্নেও দেখিনি। আমরা চাই শিলি আরও পদক জিতুক।” সোনালির মা নমিতা ভৌমিকের কথায়, “দু’মেয়ে ও ছেলের মধ্যে বড় সোনালি প্রথমে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে গেলেও সেখানে ঠিকমতো পড়তে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত নিমতৌড়ির এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মেয়েকে ভর্তি করেছিলাম।” তমলুক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, “প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা উপযুক্ত পরিবেশে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ পেলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে তাঁদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে শিলি, সোনালীরাই তাঁর প্রমাণ।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.