|
|
|
|
শ্রমিকরা মজুরি পাননি, মহিষাদলে বন্ধ ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
কাজ করেও মেলেনি টাকা। এই অবস্থায় মহিষাদলে রূপনারায়ণ নদের চরে ম্যানগ্রোভ বনসৃজনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এর দায় চাপিয়েছে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বন দফতরের উপর। তবে দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা বনাধিকারিক নিতাই সাহা। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত মিটিয়ে কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।”
রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী মহিষাদল ব্লকের নাটশাল ১ পঞ্চায়েতের কুম্ভচক, নাটশাল ২ পঞ্চায়েতের বাঁকা গাজিপুর ও অমৃতবেড়িয়া পঞ্চায়েতের ঘোলসাড়া গ্রামে রূপনারায়ণের ভাঙন ঠেকাতে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদের পার বরাবার ম্যানগ্রোভ বনসৃজনের পরিকল্পনা নেয় বন দফতর। সেই মতো বরাদ্দ হয় ৮০ লক্ষ টাকা। বন দফতর সূত্রে খবর, প্রায় ৩০০ হেক্টর চরের ১০০ হেক্টরে কাকরা ও কালো বাইন গাছ লাগানো হবে। বন দফতরের নন্দকুমার রেঞ্জের অফিসার দিলীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, “প্রতি হেক্টরে পাঁচ হাজার গাছ লাগানো হবে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নামখানা থেকে লক্ষাধিক টাকার কাকরা গাছের চারা ও কালো বাইন গাছের বীজ আনা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কুম্ভচক গ্রামে চরের প্রায় ২০ হেক্টর অংশে ঘাস কাটা, মাচা তৈরি ও বীজ পোঁতার কাজ এগিয়েছে। প্রায় এক হাজার কর্ম দিবস কাজ হয়েছে।” তাঁর কথায়, “প্রতি শ্রম দিবসে শ্রমিকদের মজুরি ১৮২ টাকা ৬১ পয়সা। প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক টাকার কাজ হবে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে। বাকিটা হবে বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায়, ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল জোন ম্যানেজমেন্টে (আইসিজেডএম)। এখন পর্যন্ত যা কাজ হয়েছে তার সবটাই হয়েছে আইসিজেডএম প্রকল্পে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি কয়েক বছরের পুরনো। কিন্তু, নানা কারণে বন দফতরে টাকা না আসায় এতদিন প্রকল্প রূপায়ণের কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। প্রসঙ্গত, কুম্ভচক গ্রামে ওই চর অংশের প্রায় দশ হেক্টর জমিতে বছর দশেক আগে ঝাউ, ইউক্যালিপটাস-সহ বেশ কিছু গাছ লাগায় বন দফতর। উদ্দেশ্য ছিল ভাঙন ঠেকানো। কিন্তু তা কার্যকরী ভূমিকা না নেওয়ায় এবং রাজ্যের অন্যত্র ম্যানগ্রোভ বনসৃজন করে সাফল্য মেলায় জেলার বিভিন্ন অংশে তা লাগাতে উদ্যোগী হয় বন দফতর।
ওই প্রকল্পেই দিন কয়েক কাজ চলার পর গত কুড়ি দিন ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। নাটশাল ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামসুন্দর ভুঁইঞা ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অরুণচন্দ্র দুয়া-র বক্তব্য: পঞ্চায়েতই উদ্যোগী হয়ে শ্রমিকের ব্যবস্থা করেছে। তাঁরা কাজে পূর্ণ সহযোগিতাও করেছেন। শ্যামসুন্দরবাবুর অভিযোগ, “বন দফতর আশ্বাস দিয়েছিল, কাজ চলতে চলতেই শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। কিন্তু, তারা কথার খেলাপ করায় শ্রমিকরা চরম সমস্যায় পড়েছেন।” তিনি জানান, প্রায় ২৪০ জন পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক দুই থেকে পাঁচ দিন ওই কাজ করেছেন। তাঁদের পাওনা টাকার পরিমাণ ১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। শ্রমিক সুচরিতা জানা, বিজয়া বাগ-রা বলেন, “আমাদের দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। কাজ করেও টাকা না পেলে আমাদের কি করে চলবে! সংসার চালাতে তাই ওই কাজ বন্ধ করে অন্যত্র কাজ করছি। তবে টাকা পেলে ফের ওখানে কাজ করব।” তাঁরা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চান।
যুগ্ম বিডিও প্রদ্যোৎকুমার পালই বলেন, “বন দফতর শ্রমিকদের দ্রুত মজুরি মিটিয়ে দিতে বাধ্য। দফতরের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এত টাকার প্রকল্প যথাযথ রূপায়ণ করতে শ্রমিকরাই বড় ভরসা।” বন দফতরের কর্তা দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিকদের টাকা নেওয়ার জন্য নথি তৈরির কাজ চলছে। চলতি মাসের মধ্যে টাকা মিটিয়ে ফের কাজ শুরুর ব্যাপারে উদ্যোগী হব।” |
|
|
|
|
|