কৃষিপ্রযুক্তি সহায়কের পদ শূন্য, সাহায্য না পেয়ে বিপাকে চাষিরা
ক্ষ্য ছিল আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষবাসের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। সে জন্য প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক (কেপিএস) নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে প্রায় ৩০ বছর আগে নিযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের অনেকেই ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন। এ ছাড়াও অনেকে অবসর নেওয়ার মুখে। নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় বাড়ছে শূন্য পদের সংখ্যা। বাধ্য হয়ে একজন কেপিএসকেই একসঙ্গে ৩০-৪০টি গ্রামের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই দায়সারা হয়ে যাচ্ছে সেই দায়িত্ব। কৃষি সহায়কদের পাশে পাচ্ছেন না কৃষকরা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা প্রণবেশ বেরা সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “জেলার বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে সেখানে পাশের এলাকার সহায়কদের দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক নিয়োগের বিষয়ে উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় ২৬৮টি কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে জেলায় কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক রয়েছেন মাত্র ১৩৫ জন। অর্থাৎ জেলার অর্ধেক সংখ্যক কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। পরস্থিতি সামাল দিতে একজন কেপিএসের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে একাধিক গ্রামের দায়িত্ব। অবস্থা এমনই যে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে একজন কেপিএস একটি গোটা ব্লকের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। ফলে কাজের চাপে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে কেপিএসদের। প্রয়োজন মতো কৃষকেরা কেপিএসের সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। পাঁশকুড়ার মহতপুর গ্রামের কৃষক গণেশ মাইতি বলেন, “কৃষি প্রযুক্তি সহায়ককে গ্রামে পাওয়া যায় না। সমস্যা হলে তাঁর পরামর্শ নিতে ব্লক অফিসে যেতে হয়।” কোলাঘাট ব্লকের উত্তর জিয়াদা গ্রামের কৃষক প্রশান্ত পড়িয়া বলেন, “আগে গ্রামে কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের সব সময় ঘুরতে দেখা যেত। তবে এখন তাঁদের প্রয়োজনে সে ভাবে পাওয়া যায় না।”
কৃষিপ্রযুক্তি সহায়করা কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের জন্য বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। তাঁরা সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের ক্ষেতের বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন, কৃষকদের তালিকা তৈরি থেকে সরকারি মিনিকিট বিলির আবেদনপত্র জমা নেওয়া ও মিনিকিট বিলিতে সাহায্য প্রভৃতি দায়িত্বও কেপিএসরা বর্তমানে পালন করেন। কিন্তু জেলার প্রায় অর্ধেক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কেপিএস পদ শূন্য থাকায় এইসব কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাঁশকুড়া-১ ব্লকে ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য ১৪ জন কেপিএস থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৭ জন। আবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের জন্য রয়েছেন মাত্র ৩ জন কেপিএস। এগরা-২ ব্লকে অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে ৮টি পঞ্চায়েতের জন্য এখন মাত্র একজন কেপিএস রয়েছেন।
পাঁশকুড়া-১ ব্লকের হাউর পঞ্চায়েত এলাকার কৃষিপ্রযুক্তি সহায়ক হরিপদ সামন্ত গত এক বছর ধরে পাশের চৈতন্যপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। হরিপদবাবু বলেন, “হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৯টি মৌজা ছাড়াও পাশের পঞ্চায়েতের ১৪টি মিলিয়ে মোট ৪৩টি মৌজার কাজ আমাকে করতে হচ্ছে। এত বড় এলাকার কৃষকদের কাছে পৌঁছনো খুবই মুশকিল।” কৃষিপ্রযুক্তি সহায়কদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল সাব-অর্ডিনেট এগ্রিকালচার অ্যান্ড হর্টিকালচার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক অশ্বিনী নায়েক বলেন, “জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়করা অবসর নেওয়ায় পদগুলি শূন্য হচ্ছে। ফলে কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। জেলায় কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের অনেকেই বয়সের ভারে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব সামলাতে হিমসিমও খাচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “দ্রুত কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক নিয়োগের জন্য রাজ্যের কৃষি দফতরের অধিকর্তার কাছে দাবি জানিয়েছি। তবে কাজ হয়নি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.