|
|
|
|
সহায়ক মূল্যে ধান কেনা এখনও শুরু হয়নি, চলছে অভাবী বিক্রি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সাধারণত নভেম্বর থেকেই সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ বার ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরোতে চলল। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও সরকারি ভাবে ধান কেনার তোড়জোড় শুরু হয়নি। ফলে, শুরু হয়েছে অভাবি বিক্রি। সরকার যেখানে এ বার কুইন্টাল পিছু ১৩১০ টাকা দরে ধানের দাম বেঁধে দিয়েছে, সেখানে চাষিরা ধান বিক্রি করছেন ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকায়। অর্থাৎ, সহায়ক মূল্যের থেকে বেশ কিছুটা কমে। সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় খোলা বাজারেও ধানের দাম বাড়ছে না।
ডিসেম্বরেও কেন সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা শুরু হল না? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “কিছু এলাকায় টুকটাক শিবির হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যাপক ভাবে শিবির হবে।” একইভাবে জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট হয়েছে। এ বার শিবির করে ধান কেনার কাজ শুরু হবে।” সভাধিপতি কিছু এলাকায় শিবির হচ্ছে বলে দাবি করলেও প্রশাসন এবিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি। শিবিরের কথা জানেন না চাষিরাও। |
|
গত দু’বছর সরকারি ভাবে ধান কেনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এ বার অবশ্য এখনও কোনও তোড়জোরই শুরু হয়নি। ফলে, সমস্যায় চাষিরা। শালবনি ব্লকের সিদাডিহির বাসিন্দা অসিত ঘোষ এ বার ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। বিঘাপিছু ফলন হয়েছে ৪-৫ কুইন্টাল। অসিতবাবু বলেন, “এ বার অতিবৃষ্টিতে আমন চাষ নষ্ট হয়েছে। তার উপর শোষক পোকা লেগে গিয়েছিল। আবহাওয়া ভাল থাকলে এক বিঘা জমিতে ১০-১২ কুইন্টাল ধান হয়।” অসিতবাবু জানালেন, তাঁদের এলাকায় খোলা বাজারে ধানের দাম এখন কুইন্টাল প্রতি ১১২০ টাকার আশপাশে। সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা শুরু হলে এই দাম বাড়বে বলেই মনে করছেন চাষিরা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের পলাশিয়ার বাসিন্দা শঙ্কর দাস বলেন, “সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা শুরু হলে খোলা বাজারে দর একটু বাড়বেই।” শঙ্করবাবুর এ বার ৪ বিঘা জমিতে বিঘাপিছু ফলন হয়েছে গড়ে ৩ কুইন্টাল। মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরিষডাঙার বাসিন্দা কানাইলাল হেমব্রম ১২ বিঘা জমিতে বিঘাপিছু ফলন হয়েছে ২-৩ কুইন্টাল। অতিবৃষ্টি ও শোষক পোকার আক্রমণে এ ক্ষেত্রে ফলন হয়েছে কম।
চাষিরা যাতে কম দামে ধান বিক্রি করে ক্ষতির মুখে না পড়েন সে জন্যই সরকারি ভাবে ধানের দাম বেঁধে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনাও চলে। গত বছর ধানের সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টাল পিছু ১২৫০ টাকা। এ বার তা হয়েছে ১৩১০ টাকা। এখন চাষের খরচ উত্তরোত্তর বাড়ছে। ফলে, খোলা বাজারে ধানের দাম একটু না বাড়লে বহু চাষিকে ক্ষতির মুখ দেখতে হয়। তার উপর সহায়ক মূল্যে দ্রুত ধান কেনা শুরু না হলে চাষির ধান আর চাষির কাছে থাকে না। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চাষিদের কাছে পৌঁছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করে। পরে সুযোগ বুঝে সেই ধান চড়া দামে খোলা বাজারে বিক্রি করে। এখনও ধান কেনা শুরু না হওয়ায় অন্য চাষও ধাক্কা খাচ্ছে। এতদিনে চাষিদের আলু এবং সব্জি চাষে নেমে পড়ার কথা। কিন্তু সেই চাষের প্রাথমিক খরচ তো আসে ধান বিক্রির টাকা থেকে। তা ছাড়া, পৌষ পার্বণে গ্রামবাংলা উৎসবে মাতে। তার আগে ধান বিক্রি করে হাতে টাকা না এলে চাষিরা সমস্যায় পড়বেন।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, অবিলম্বে সরকারি ভাবে ধান কেনা শুরু হবে। সরকারি উদ্যোগে কেনা হবে ২ লক্ষ ১৪ হাজার মেট্রিক টন চাল। অর্থাৎ ধানের হিসেবে ৩ লক্ষ ২১ হাজার মেট্রিক টন। সাধারণত ৩ কুইন্টাল ধান থেকে ২ কুইন্টাল চাল সংগ্রহ হয়। ২০১১ সালে জেলায় ৫ লক্ষ ৫২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। হেক্টর পিছু ফলন হয় ৪০.০৪ কুইন্ট্যাল। ২০১২ সালে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। হেক্টর পিছু ফলন হয় ৪১.১৭ কুইন্টাল। এ বার সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কিন্তু ৪৯ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমির ফলন অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থাৎ ঠিকমতো চাষ হয়েছে ৫ লক্ষ ৩৮৮ হেক্টর জমিতে। এ বার হেক্টরপিছু ফলনও কমেছে। ৪০ কুইন্টালের কম।
এখন কত দ্রুত সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা শুরু হয়, সেটাই দেখার। |
হাল-চাল |
বছর |
লক্ষ্যমাত্রা |
সহায়ক মূল্য |
কবে থেকে শুরু |
২০১১ |
১ লক্ষ ৮০ হাজার |
১০৮০ টাকা |
নভেম্বর |
২০১২ |
২ লক্ষ ৫১ হাজার |
১২৫০ টাকা |
নভেম্বর |
২০১৩ |
২ লক্ষ ১৪ হাজার |
১৩১০ টাকা |
? |
চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার হিসেব মেট্রিক টনে।
সহায়ক মূল্য প্রতি কুইন্টালে।
সাধারণত ৩ কুইন্টাল ধান থেকে ২ কুইন্টাল চাল সংগ্রহ হয়। |
|
|
|
|
|
|