ফেডারেশনের ফ্র্যাঞ্চাইজি দল বেঙ্গালুরু এফসি-কে কি আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করার ‘দায়িত্ব’ নিয়েছেন রেফারিরা?
বুধবার যুবভারতীতে সুনীল ছেত্রী বনাম জোসিমার যুদ্ধ শেষের পর সেই প্রশ্ন উঠে গেল হঠাৎ-ই।
কেন এ রকম চমকপ্রদ অভিযোগ উঠছে?
দুটো উদাহরণ দেওয়া যাক—
১) ম্যাচের একেবারে শুরুতে নিজেদের বক্সে পেন ওরজিকে বিশ্রী ফাউল করেন বেঙ্গালুরুর কার্টিস ওসানো। পেন পড়েও যান। নিশ্চিত পেনাল্টি। কিন্তু তা এড়িয়ে যান কেরলের রেফারি রাথিস কুমার।
২) খেলা শেষ হওয়ার মিনিট পনেরো আগে জোসিমারের একটি গোলমুখী জোরালো শট বেঙ্গালুরুর এক ফুটবলার হাত দিয়ে বার করে দেন। জটলার সুযোগ নিয়ে। পেনাল্টি দিতেই পারতেন রেফারি।
ম্যাচের পর রেফারির উপর তীব্র ক্ষোভে যখন গ্যালারিতে ঝামেলা চলছে তখন মহমেডানের ফুটবল সচিব ইকবাল আহমেদও তোপ দেগে দিলেন রেফারি এবং ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। বলে দিলেন, “ফেডারেশন তো বেঙ্গালুরুর মালিক জিন্দালদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছে, তাই ওদেরই চ্যাম্পিয়ন করবে। রেফারিরাও সে ভাবেই চলছে। না হলে এই ম্যাচ আমরাই জিতি।” |
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মহমেডান কোচ আজিজও। বলে দিলেন, “এটা কি রেফারিং হয়েছে? এত খারাপ রেফারিং হলে কখনও জেতা যায়। তিনটি পেনাল্টি আমরা পাইনি।”
লিগ শীর্ষে থাকা দলের সঙ্গে মহমেডানের ম্যাচটা অবশ্য বেশ উপভোগ্য হল। পাঁচ পাঁচটি গোল হল। সুনীল ছেত্রী আর জোসিমারদু’দলের দুই স্ট্রাইকার জোড়া গোল করে ম্যাচ জমালেন।
২-৩ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন সাদা-কালো ফুটবলাররা। সেই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও। উত্তেজিত সমথর্করা প্লাস্টিকের চেয়ার খুলে নিয়ে ছুড়তে থাকেন মাঠে। পুলিশের সামনেই। ছোড়া হতে থাকে ইট, জলের বোতলও। পুলিশ ছিল নীরব দর্শক।
স্টেডিয়ামের বাইরে গিয়েও সাদা-কালো সমর্থকরা থামেননি। বেঙ্গালুরুর বাস লক্ষ করেও ইট, ভাঙা চেয়ার ছোড়া হয়। বৃষ্টির মতো ইট পড়ছিল। যাতে আটকে পড়েন অনেক দর্শকের সঙ্গে খেলা দেখতে আসা ইউনাইটেড কোচ এলকো সতোরিও। স্টেডিয়ামের অফিস ঘরগুলির বেশ কয়েকটি কাচের জানলা ভাঙা হয়। ইটের আঘাতে মাথা ফাটে এক দর্শকের। বেশ কিছুক্ষণ এ রকম চলার পর মাঠে নামে পুলিশ। লাঠি চালিয়ে ওরা তাড়িয়ে দেন মারমুখী দর্শকদের।
|
উন্মত্ত সমর্থকদের সৌজন্যে উড়ল চেয়ার। দর্শক নিথর পুলিশ। |
পুরো ঘটনার কথাই তার রিপোর্টে জানাচ্ছেন ম্যাচ কমিশনার ও রেফারি। ফলে ফের মহমেডানের বড় অঙ্কের জরিমানা হতে চলেছে। কারণ ম্যাচের সংগঠক ছিল মহমেডানই।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য পেন-জোসিমাররা আক্রমণাত্মক মেজাজেই ছিলেন। কিন্তু গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন আজিজের ছেলেরা। উল্টে পাল্টা আক্রমণে উঠে গোল করে যান বেঙ্গালুরুর জন মিয়ঙ্গার। বিরতির ঠিক আগেই বেঙ্গালুরুর কিপার পবন কুমারের ভুলেই ১-১ করেন জোসিমার।
দ্বিতীয়ার্ধ্বের শুরুতেই আবার বেঙ্গালুরু ২-১ করে। আঠারো গজের শটে সুনীল ছেত্রী দুরন্ত গোল করেন। এরপরই অসীমকে তুলে নবিকে নামান আজিজ। নবি নামায় সাদা-কালোর আক্রমণ আরও জোরালো হয়। জোসিমার ফের ২-২ করে দেন।
|
মাঠে দিশাহারা কোচ আজিজ। বুধবার। |
এ দিনের জোড়া গোল নিয়ে আই লিগে মোট নয়টি গোল হয়ে গেল জোসিমারের। এই মুহূর্তে আই লিগে যা সর্বোচ্চ। গোটা ম্যাচের মতোই বেঙ্গালুরুর তৃতীয় গোলটি হয় চূড়ান্ত নাটকীয় ভাবে। সুনীলের হেড গোল লাইনে দাঁড়িয়ে সেভ করতে দেখা যায় মহমেডানের ডিফেন্ডার কলিন আব্রাঞ্চেসকে। কিন্তু রেফারি গোলের বাঁশি বাজিয়ে দেন। পরে জানা যায়, গোল লাইন পেরিয়ে গিয়েছিল।
১৩ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে যখন বেঙ্গালুরু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তখন চার্চিল ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগে বেশ চাপে আজিজ। চোটের জন্য ওই ম্যাচে জোসিমারকে যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনই কার্ড-সমস্যায় পাওয়া যাবে না লুসিয়ানোকেও। টোলগেও অনিশ্চিত। সত্যিই খারাপ সময় যাচ্ছে আজিজের! |
মহমেডান: অশোক, মেহরাজ, লুসিয়ানো, নির্মল, কলিন, রাকেশ (মণীশ), পেন, স্যামসন, ইসফাক, অসীম (নবি), জোসিমার। |
পুরনো খবর: আজিজের বাঁচার ম্যাচ
|