ডাকাতি রুখতে গিয়ে খুন, ৬ জনের যাবজ্জীবন
রাতের অন্ধকারে দোকানে ডাকাতি করতে এসেছিল জনা কয়েক দুষ্কৃতী। বছর তেইশের এক যুবক বাধা দেওয়ায় তাঁকে গুলি করে মারতে কসুর করেনি দুষ্কৃতীরা। খড়্গপুর শহরের খরিদায় রাজ্য পুলিশের ডিআইজির (মেদিনীপুর) অদূরেই ঘটেছিল ঘটনাটি। শোরগোল পড়েছিল জেলার পুলিশ-প্রশাসনে। সেই ঘটনারই রায় ঘোষণা হল বুধবার। অভিযুক্ত ছয় যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন মেদিনীপুরের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মহম্মদ মুইজুদ্দিন। ওই ছ’জনকে ২ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৪ মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সাজা ঘোষণার পর অভিযুক্তেরা। মেদিনীপুর আদালতে তোলা ছবি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি। ডাকাতদলকে বাধা দিতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন সঞ্জয় সাউ। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাটি ঘটেছিল রাত দেড়টা থেকে দু’টোর মধ্যে। মোটর বাইকে আসা দুষ্কৃৃতীরা খরিদা বাজারের সোনার দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। ওই দোকানের পাশেই রয়েছে প্রসাধন সামগ্রীর দোকান ছিল। গোড়ায় এই দোকানের শাটার ভাঙা হয়। তার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় উল্টো দিকের দোতলা বাড়ির বাসিন্দা দোতলার গৌরহরি সাউয়ের। তিনি দোতলার বারান্দায় শুয়েছিলেন। শাটার ভাঙার শব্দ পেয়ে তিনি দুই ছেলে সঞ্জয় এবং বিজয়কে ডাকেন। উল্টো দিকের বাড়ির লোক যে জেগে গিয়েছে, তা টের পেয়ে যায় দুষ্কৃতীরাও। তারা সিঁড়ি দিয়ে ওই বাড়ির দোতলায় ওঠে। তারপর দরজা ভেঙে গৌরহরিবাবুর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। শাবল দিয়ে আঘাত করায় দরজা ফুটো হয়ে যায়। সেই ফুটোর মধ্যে রিভলবার ঢুকিয়ে গুলি ছোড়ে এক দুষ্কৃতী। সেই গুলি লাগে গৌরহরিবাবুর ছোট ছেলে সঞ্জয়ের নাকের কাছে। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তদন্ত শুরু হয়। একে একে গ্রেফতার হন রাজা সিংহ ওরফে রসিম, পিন্টু দাস ওরফে বুলান, প্রকাশ মান্না ওরফে কোদাল, সুশীল মান্না ওরফে মেলু, দিলীপ বিশাল ওরফে ভোলা এবং সুমন সিংহ ওরফে রাজা। ধৃতদের মধ্যে সুমনের বাড়ি মেদিনীপুর শহরের চিড়িমারসাইয়ে। রাজা খড়্গপুর শহরের মালঞ্চর বাসিন্দা। আর বাকি চার জনেরই বাড়ি খড়্গপুরের খরিদায়। ২০১২ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি, এই দশ দিনের মধ্যে ৬ জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি মামলার চার্জগঠন হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বিচার-পর্ব শুরু হয়। এই মামলায় ১৮ জন সাক্ষী ছিলেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতি এবং খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। রাজা সিংহের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও মামলা রুজু হয়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, রাজাই রিভলবার থেকে গুলি ছুড়েছিল।
মঙ্গলবারই ধৃত ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। বুধবার সাজা ঘোষণা হয়। এ দিন দুপুরে ধৃতদের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে হাজির করানো হয়। অভিযুক্তরা সকলেই আদালতে দাবি করেন, তারা নির্দোষ। তাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এরপর বিচারক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনান। সঙ্গে ২ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৪ মাস জেল। রাজা সিংহকে অস্ত্র আইনে ৭ বছর কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়। অনাদায়ে আরও ২ মাস জেল। এই মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী ছিলেন দেবাশিস মাইতি।
অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি হওয়ায় নিহত সঞ্জয়ের পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। আদালতে বাড়ির কেউ আসেননি। তবে সঞ্জয়ের দাদা প্রফুল্ল এ দিন বিকেলে বলেন, “আদালতের রায়ে পরিবারের সকলে খুশি। সুবিচার মিলেছে। অভিযুক্তদের উচিত সাজা হয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.