অরক্ষিত মন্দির, চোর
পালালেও বাড়ছে না বুদ্ধি
শ্বরের ঠাঁই যেখানে, সেই মন্দিরে সিঁধ কাটবে কার এত দুঃসাহস?
এই সরল বিশ্বাসেই গ্রামবাংলার বেশির ভাগ মন্দিরে নিরাপত্তার ব্যাপারে নেহাতই উদাসীন সেবাইত পরিবারগুলি। প্রত্যন্ত গ্রামের এককোণে বহু দেব-দেবীর মন্দির তাই থাকে স্রেফ এক-দুটো তালার ভরসায়। কোথাও নারকেল দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় মন্দিরের মূল ফটক, এমন উদাহরণও বিরল নয়। অথচ দানধ্যানের সোনার গয়নাগাটি তো বটেই, বহু মূল্যবান ধাতুর মূর্তি, থালাবাসন সবই পড়ে থাকে ভিতরে। গত কয়েক বছরে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মন্দিরে চুরির সংখ্যা বেড়ে চলেছে হু হু করে। পুলিশের অনুমান, ধর্মবিশ্বাসের জন্যই মন্দিরে চুরি করতে দ্বিধায় ভোগে বহু দাগি দুষ্কৃতীও। কিন্তু তা বলে মন্দিরে চুরির ঘটনায় বিরাম নেই। বুধবার আবার মন্দিরে চুরি করতে এসে বর্ধমানের গলসিতে দুষ্কৃতীরা খুন করেছে এক সন্ন্যাসীকে।
হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায় বেশ কিছু শতাধিক বছরের প্রাচীন মন্দির আছে। অনেকগুলিতেই বহু মূল্যবান জিনিসপত্র আছে। নিয়মিত চুরির ঘটনাও ঘটে চলেছে এখানে ওখানে। চোর পালালেও বুদ্ধি বাড়ছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে। মহকুমা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কোথায় কোন মন্দির আছে, তার কোনও হিসেবই নেই পুলিশের কাছে। তা ছাড়া, মন্দিরগুলিতে যে সম্পত্তি আছে, তারও কোনও খতিয়ান কেউ কখনও দাখিল করেনি। ফলে আমাদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।” তিনি বলেন, “এ সম্পর্কে আমাদের জানালে আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।” কিন্তু তা যদি না হয়, তবে গ্রামের লোকের সজাগ থাকার উপরেই ওই সব মন্দিরের নিরাপত্তা অনেকটা নির্ভর করছে বলে মত পুলিশ কর্তাদের একাংশের।
গত ২৬ নভেম্বর খানাকুলের কুড়কুড়ি গ্রামে চুরি যায় সোনার সিংহবাহিনী মূর্তি। ৭-৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই মূর্তির দাম বেশ কয়েক লক্ষ টাকা। একই সঙ্গে চুরি যায় বিগ্রহের বেশ কিছু মূল্যবান গয়না। সেবাইত পরিবারের তরফে কানাই রায় জানান, আগে নারকেল দড়ি পেঁচিয়ে বন্ধ করে রাখা হত মন্দিরের দরজা। কয়েক বছর আগে তালা দেওয়া চালু হয়েছিল। কিন্তু সেই তালা ভেঙেই চুরি হয়ে গিয়েছে। এত দিন কেন নিরাপত্তার ব্যবস্থা মজবুত করেননি তাঁরা? কানাইবাবুর যুক্তি, “ভেবেছিলাম, মায়ের মন্দিরে কে আর সাহস করে চুরি করবে?”
কিন্তু সেই সাহস করছে কেউ কেউ। গত ২৮ অগস্ট গোঘাটের শ্রীপুর গ্রামেও একই রাতে চারটি মন্দিরে গয়নাগাটি চুরি যায়। সেখানেও স্রেফ তালা-চাবির ভরসায় ছিল ওই সব সম্পত্তি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেবাইত পরিবারগুলির আর্থিক অবস্থা এমন নয় যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা করবেন তাঁরা। গ্রামের লোকেরও এ নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে। ফলে চুরি গেলে ‘হায় হায়’ করা ছাড়া তখন আর তেমন কিছু করার থাকছে না।
খানাকুল, আরামবাগ, পুড়শুড়া, গোঘাটে একাধিক শতাব্দী প্রাচীন মন্দির আছে। কোথাও কষ্টিপাথরের প্রাচীন বিগ্রহও আছে। আন্তর্জাতিক মূর্তি পাচার চক্রের কাছে যা অত্যন্ত লোভনীয়। বেশির ভাগ মন্দিরেই সোনা-রূপোর গয়নাও নেহাত কম নয়। ইদানীং কেউ কেউ সে সব ব্যাঙ্কের লকারে রাখা শুরু করেছেন। আরামবাগের রাংতাখালির কুণ্ডু পরিবারের প্রাচীন মন্দিরে মূর্তির গয়না চুরি হয়েছিল ২০০৩ সালে। তারপর থেকে গয়না লকারে রাখা হয় বলে জানালেন ওই পরিবারের সদস্য দেবাংশু কুণ্ডু। তিনি আরও বলেন, “মন্দিরে নিয়মিত পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। তাই গয়নাগাটি সুরক্ষিত রাখতে ব্যাঙ্ক ছাড়া ভরসা নেই।”
কিন্তু এই চিত্র সর্বত্র নয়। আরামবাগ মহকুমার বছরে গড়ে অন্তত ১০-১২টি মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে বলে মহকুমা পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু তারপরেও যথেষ্ট মাথাব্যথা নেই কারও। সম্প্রতি কুড়কুড়ি গ্রামে সিংহবাহিনী মন্দিরে চুরির ঘটনায় সিআইডির সাহায্য চেয়েছিল জেলা পুলিশ। কিন্তু তদন্ত বিশেষ এগিয়েছে বলে এখনও খবর নেই। ধরা পড়েনি কেউ। উদ্ধারও হয়নি খোওয়া যাওয়া বিগ্রহ, গয়নাগাটি।
মন্দিরে চুরির ক্ষেত্রে মালপত্র উদ্ধার বা গ্রেফতারের ঘটনাও যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ বহু সেবাইত পরিবারের সদস্যদের। পুলিশের পাল্টা বক্তব্য, যেহেতু দেবোত্তর সম্পত্তি, তাই পরিবারগুলিও তদন্ত নিয়ে তেমন গা করে না। পুলিশ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, মন্দিরে চুরির ঘটনায় ছিঁচকে চোরেদের হাত কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে দক্ষ মাথা কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মূর্তি পাচার চক্রেরও ভূমিকা থাকে। এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র অবশ্য বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে প্রতি ক্ষেত্রেই যথাযোগ্য তদন্ত হয়। কিছু ক্ষেত্রে জিনিসপত্র উদ্ধারও হয়। কিছু দিন আগে মন্দিরে চুরির অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।”
তবে সব মিলিয়ে যে হারে মন্দিরে চুরি বাড়ছে, তদন্ত সেই গতিতে এগোচ্ছে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

দেবস্থানে দুষ্কর্ম
• ২৬ নভেম্বর খানাকুলের কুড়কুড়ি গ্রামে চুরি যায় সোনার সিংহবাহিনী মূর্তি। ৭-৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই মূর্তির দাম বেশ কয়েক লক্ষ টাকা।
• ২৬ নভেম্বর গোঘাটের শ্রীপুর গ্রামে একই রাতে চারটি মন্দিরে গয়নাগাটি চুরি যায়।
• পুলিশের অনুমান, চুরির ঘটনায় ছিঁচকে চোরেদের হাত কম। দক্ষ মাথা কাজ করে।
• আন্তর্জাতিক মূর্তি পাচার চক্রেরও ভূমিকা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.