শ্বাসরোধ করে খুনের পরে সাড়ে পাঁচ ফুটের শরীরটাকে ভেঙে ছোট করে দিয়েছিল আততায়ীরা। পাটুলির শঙ্করপ্রসাদ রায়ের (৬৩) মৃতদেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। মৃতদেহের মাংস পচে হাড় থেকে বেরিয়ে এসেছিল। পুলিশের অনুমান, অন্তত পাঁচ দিন আগে খুনটি হয়েছে এবং একাধিক লোক মিলে খুন করেছে। রান্নাঘরের পাথরের স্ল্যাবে রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে পুলিশ সন্দেহ করছে রান্নাঘরেই খুন করা হয়ে থাকতে পারে শঙ্করবাবুকে। সেখানে একাধিক পায়ের ছাপ মিলেছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
পুলিশ জানায়, দোতলার রান্নাঘরে এঁটো বাসন বা রান্না করা খাবার মেলেনি। তাই পুলিশের অনুমান, সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে খুনটি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, শঙ্করবাবুর কোনও পরিচারিকা ছিল না। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত খুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। সেজ বোন এবং ভাগ্নেকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলার জন্যই এই খুন কি না, সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শঙ্করবাবু যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির একাধিক অংশীদার রয়েছে বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ। বাড়ির মালিকানা পাওয়ার জন্যেও তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। শঙ্করবাবুর বোন ও ভাগ্নের খোঁজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শঙ্করপ্রসাদের বাড়িটি তাঁর বাবার নামে ছিল। তিনি সেই বাড়ির মালিকানা দখলের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর প্রায়ই ঝগড়া হত। পুলিশ জানায়, যাদবপুর থানায় শঙ্করপ্রসাদের নামে বৃদ্ধা মাকে মারধরের একাধিক অভিযোগও রয়েছে। শঙ্করবাবুর সেজ বোন বিপাশাদেবী শ্বশুরবাড়িতে থাকতে পারছিলেন না বলে তাঁদের বাবা মণীন্দ্রনাথই তাঁকে নিজের বাড়িতে ছেলে চিরঞ্জীবকে নিয়ে থাকতে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে রাজি ছিলেন না শঙ্করপ্রসাদ। বাবা-মার মৃত্যুর পরে বাড়ির মালিকানা শঙ্করপ্রসাদ পেয়েছিলেন কি না, বা বিপাশাদেবী ও তাঁর ছেলে চিরঞ্জীবকে বাড়ির অংশীদার করা হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, মাস দু’য়েক আগে বিপাশাদেবী ছেলেকে নিয়ে কেন্দুয়া মেন রোডের বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তবে দিন পাঁচেক আগে চিরঞ্জীবকে পাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু শঙ্করপ্রসাদের বাড়িতে তিনি ঢুকেছিলেন কি না, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। বুধবার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিয়ের পরে রামগড়, গাঙ্গুলিবাগান ও বাঘাযতীনে থাকতেন শঙ্করবাবু। বছর ১৫ আগে তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কেন্দুয়া রোডে তাঁর বাবার বাড়িতে ওঠেন। তার পর থেকে সেখানেই থাকতেন। স্থানীয় শিশু নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরশিক্ষার শিক্ষক ছিলেন শঙ্করপ্রসাদ। তার পরে নিজেই কিন্ডারগার্টেন স্কুল খুলেছিলেন। কিন্তু তা বেশি দিন চলেনি।
শঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু জানান, ছোটবেলায় শঙ্করপ্রসাদের মেয়ে শিরদাঁড়ার অসুখে ভুগেছিলেন। অস্ত্রোপচার করাতে অনেক খরচ হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং স্থানীয় কয়েকটি ক্লাব থেকে চিকিৎসার টাকা জোগাড় হয়। পুলিশ জানায়, বুধবার শঙ্করবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণা ওরফে চিত্রাদেবী ও তাঁর মেয়ে মেখলা পাটুলি থানায় যান। পুলিশের কাছে গিয়ে মেয়ে হিসেবে প্রমাণ দাখিল করে মেখলা অনুরোধ করেন, ময়না-তদন্তের পরে তাঁর বাবার দেহ যেন তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ তদন্তে জেনেছে, স্ত্রী-র সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে ঝামেলা চলছিল শঙ্করপ্রসাদের। মেয়ের সঙ্গেও তাঁর বিরোধ ছিল। ২০১০ সালে শঙ্করপ্রসাদ বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন। তবে তার নিষ্পত্তি হয়নি। পুলিশ জানায়, আলিপুর আদালতে খোরপোষ চেয়ে মামলা করেছিলেন কৃষ্ণাদেবী।
অন্য দিকে, এ দিনই গড়িয়াহাটের একটি বহুতলের এক ফ্ল্যাট থেকে কৃষ্ণপ্রসাদ দাস (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানায়, ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেন প্রতিবেশীরা। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যক্তির স্ত্রী ও কন্যা কটকে রয়েছেন। তাঁদের খবর পাঠিয়েছে পুলিশ।
|