রান্নাঘরের গাঁথনি ভাঙতেই বেরিয়ে এল প্রৌঢ়ের দেহ
কাল থেকেই পচা গন্ধ ছড়াচ্ছিল এলাকায়। সন্ধ্যায় স্থানীয় লোকজনের ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। গিয়ে দেখে, যে বাড়ি থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছিল, তার দু’টি দিকের দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। এক দিকের দরজার তালা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে পুলিশ। গন্ধের উৎস সন্ধান করতে করতে দোতলার একটি ঘরে যায় তারা। সেই ঘরের এক দিকে রান্নার জায়গা। ওই অংশে যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল, গন্ধ ছড়াচ্ছিল সেখান থেকেই। কিন্তু সেখানে ইটের গাঁথনি। তার উপরে ছড়ানো সিমেন্টের গোলা। গাঁথনি দেখে পুলিশ বুঝতে পারে, সেটি খুব পুরনো নয়। তখনই সন্দেহ দানা বাঁধে তাঁদের মনে।
সেই গাঁথনি ভাঙতেই ভিতর থেকে বেরিয়ে এল মশারি জড়ানো পচাগলা একটি দেহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ঘণ্টা দুই ধরে এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় কেন্দুয়া মেন রোড এলাকায়। রাত পর্যন্ত সেই দেহের শনাক্তকরণ হয়নি। কারণ, ওই প্রৌঢ়কে শনাক্ত করার জন্য বাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের অনুমান, দেহটি ওই বাড়ির মালিক, বছর পঞ্চান্নের শঙ্করপ্রসাদ রায়ের। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ অবশ্য একে পরিকল্পিত ভাবে খুন বলে মনে করছে। যদিও কত দিন আগের ঘটনা, তা নিশ্চিত ভাবে বলতে না পারলেও পুলিশের অনুমান, চার-পাঁচ দিন আগে এই খুন হয়। কারণ, মৃতদেহে পোকা ধরে গিয়েছিল। খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও বিশেষ কোনও সূত্র পুলিশের হাতে আসেনি। ওই বাড়ির সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
বাড়ি থেকে বার করে আনা হচ্ছে ওই মৃতদেহ। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ জানায়, ৭৭ কেন্দুয়া মেন রোডের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
ওই বাড়িতে শঙ্করবাবু তাঁর স্ত্রী চিত্রা ও বছর সতেরোর মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। যদিও বেশ কয়েক বছর ধরে শঙ্করবাবুর স্ত্রী ও মেয়েকে দেখা যায়নি। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শঙ্করবাবু ডেকরেটরের সামগ্রী সরবরাহ করতেন এবং গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতেন। পাশাপাশি, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গৃহশিক্ষকতাও করতেন তিনি।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দুয়া মেন রোডের ওই এলাকার ওই বাড়িটির দু’দিকে দু’টি দরজা। শঙ্করবাবু থাকতেন দোতলায়। একতলার একটি অংশে থাকতেন শঙ্করবাবুর সেজো বোন বিপাশা ও তাঁর ছেলে চিরঞ্জীব। চিরঞ্জীব ক্যাটারিং এর কাজ করতেন। কালীপুজোর সময়ে বিপাশা ও চিরঞ্জীবও বাড়ি ছেড়ে চলে যান। প্রতিবেশীদের একাংশ জানিয়েছেন, গত সাত-আট দিন ধরে শঙ্করবাবুকেও এলাকায় দেখা যাচ্ছিল না।
বাড়ির দোতলায় দু’টি ঘর। এক দিকের ঘরের একটি অংশে রান্না হয়। যেখানে রান্না হয়, সেই স্ল্যাবের তলায় একটি অংশে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার জায়গা। সেখানেই ছিল ইটের গাঁথনি। যা দেখেই প্রথমে সন্দেহ তৈরি হয় তদন্তকারীদের মনে।
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (যাদবপুর ডিভিশন) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটিকে পরিকল্পিত ভাবে খুন বলেই মনে হচ্ছে। খুনের কারণ নির্দিষ্ট ভাবে বলা যাচ্ছে না। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তদন্তকারীদের অনুমান, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও একটি বিষয় তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। তা হল, বাড়ির ভিতরে কোনও সামগ্রী খোয়া যায়নি বলেই তাঁদের অনুমান।
শঙ্করবাবুদের এক প্রতিবেশী রীতা দাশগুপ্ত জানান, ১৯৮৪ সালে এলআইসির কর্মী মণীন্দ্রনাথ রায় ও তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না রায় এই বাড়িটি তৈরি করেন। তাঁদের দুই ছেলে ও চার মেয়ে। বড় ছেলে সমর ৩০ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। শঙ্করবাবু ছোট ছেলে। চার মেয়ে বকুল, টুনা, বিপাশা ও মৌসুমী। শঙ্করবাবুর সেজো বোন বিপাশাদেবীর বিয়ে হয় মৌসুমীদেবীর দেওরের সঙ্গে। বিয়ের পরে পুত্র চিরঞ্জীবকে নিয়ে কেন্দুয়া মেন রোডে বাপের বাড়ি ফিরে আসেন মৌসুমীদেবী। কিন্তু তাঁর স্বামীকে ওই বাড়িতে যাতায়াত করতে দেখেননি বলেই দাবি স্থানীয়দের একাংশের।
প্রতিবেশীরা জানান, ২০০৪ সালে শঙ্করবাবুর মা এবং ২০০৮ সালে তাঁর বাবা মারা যান। মাঝে মধ্যেই ওই বাড়ি থেকে কথা কাটাকাটির আওয়াজ তাঁরা শুনতে পেতেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
রাত আটটার পরে দেহ নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশকে আরও জানান, বাঘা যতীনে শঙ্করবাবুর শ্বশুড়বাড়ি। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে থাকতে পারেন। প্রসঙ্গত, বছর দশেক আগে বড়তলা থানা এলাকায় একটি বাড়িতে দুই ভাইয়ের বিবাদের জেরে কার্যত এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও ঘরের ভিতরে এমনই গাঁথনি ভেঙে এক ভাইয়ের দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.