ভবন নেই, খোলা আকাশের নীচেই চলছে কেন্দ্র
মাথার উপর ছাদ না থাকলে ছেলেরা পড়বে কী করে? প্রশ্নটা করলেন বছর চল্লিশের অনিমা দাস। একটু দূরে খোলা আকাশের নীচে গাছের তলায় চলতে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তাঁর নাতি তখন খাবার নিচ্ছে। একা অনিমাদেবী নন, অনেকেই রান্না করা খাবার বিলি যেমন দেখতে আসেন তেমনই এই কেন্দ্রে কেমন লেখাপড়া চলছে তাও দেখতে আসেন। এ রকম সমস্যার মধ্যে কী বর্ষা, কী গ্রীষ্ম বা শীত— প্রায় পাঁচ বছর ধরে একা হাতে সহায়িকা ছাড়াই খোলা আকাশের নীচে কেন্দ্রটি চালাচ্ছেন কর্মী প্রভাতী লেট। কবিচন্দ্রপুর গ্রামের ধর্মরাজতলায় ২৭৩ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এমনই অবস্থা।
রামপুরহাট ১ ব্লকের ওই কেন্দ্রে বর্তমানে তিন বছর পর্যন্ত ৫৪ জন শিশু, তিন থেকে পাঁচ বছরের ২৪ জন, পাঁচ থেকে ছয় বছরের ১২ জন, ৯ জন গর্ভবতী ও ৮ জন প্রসূতি আছে। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস জানান, প্রথমে এলাকার একটি ক্লাব ঘরে কেন্দ্রটি চালু করা হয়। কিন্তু ক্লাবের ঘরটিই তো ঠিক নেই। তার উপর সাপের উপদ্রব। তাই কী করে ক্লাব ঘরে কেন্দ্রটি চালু রাখা যায়! তার থেকে গাছ তলায় কেন্দ্র চালু রাখা ঢের ভাল। পাড়ার মেয়ে অলোকা ফুলমালির ভাইঝি পড়ে ওই কেন্দ্রে। বছর দেড়েকের ভাইঝিকে কোলে নিয়ে অলোকাদেবী খাবার হাতে নিয়ে বললেন, “আমরা চাই ছেলেমেয়েরা ভাল করে লেখাপড়া করুক। কিন্তু রান্না করা থেকে খাবার দেওয়া সব কাজ একা হাতে সামাল দিতে হচ্ছে কেন্দ্রের কর্মীকে। তার উপর কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। খোলা জায়গায় ক্লাস চলছে। তাই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের লক্ষ্য রাখা মুশকিল।”

ছাদ নেই। কবিচন্দ্রপুর গ্রামের এই পাঠশালার ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।
নিজস্ব ভবন না থাকায় কেন্দ্র থেকে প্রায় চার কিমি দূরে আটলা গ্রামের বাসিন্দা, কর্মী প্রভাতী লেটের বাড়িতেই শিশু ও মায়েদের জন্য বরাদ্দ চাল, ডাল রাখতে হয়। ফলে সাইকেল চালিয়ে রান্নার সব সরঞ্জাম বয়ে আনতে হয় তাঁকে। বললেন, “যে দিন বৃষ্টি হয় ওইদিন খাবার বিলি করা ছাড়া ক্লাস করা যায় না। গ্রীষ্মকালেও গরম বাতাসের মধ্যে ছেলেমেয়েদের বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখা যায় না। শীতকালেও ঘন কুয়াশার মধ্যে সকাল সকাল কেন্দ্র খোলা যায় না। আর যে ক্লাব ঘরে কেন্দ্র চালু রাখতে বলা হয়েছিল, সেই ঘরের অবস্থাও ভাল নয়। আবার খোলা আকাশের নীচে রান্না করার ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এলাকায় এক জনের বাড়িতে অন্য একজনকে দিয়ে রান্না করতে হয়।” সমস্যার কথা ভাল ভাবেই জানেন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের সুপারভাইজার মানসী মজুমদার। তাঁর দাবি, “কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের জন্য একাধিক বার সিডিপিও থেকে মহকুমাশাসক সকলকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারাপীঠ লাগোয়া জায়গায় কেউ কি স্বেচ্ছায় জায়গা দেবেন। জায়গার অভাবে ভবন তৈরি করা যাচ্ছে না।”
অন্য দিকে, রামপুরহাট ১ ব্লকের সিডিপিও সৌরভ কোলে বলেন, “ব্লকে ৩৩০টি কেন্দ্র চালু আছে। ৩০টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। যার জন্য ওই সমস্ত কেন্দ্রগুলি কোথাও অন্যের বাড়িতে, কিংবা অন্য কোথাও চলছে। জায়গা না পেলে কী করে ভবন নির্মাণ হবে!” রামপুরহাট মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় বলেন, “দেখা যাক কীভাবে কী করা যায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.