একশো দিনের কাজে রাস্তা ও নর্দমা তৈরি নিয়ে অশান্তি বাধল তৃণমূলেরই দু’দল কর্মী-সমর্থকের মধ্যে। কাঁকসার আকন্দারা গ্রামে বুধবার সকালে সংঘর্ষে জখম হন চার জন। ভাঙচুর হয় দলের একটি অস্থায়ী কার্যালয় ও দু’টি মোটরবাইক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাস্তা ও নর্দমা তৈরির কাজ চলছে। তাতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে অভিযোগ তুলে গ্রামের তৃণমূলের এক পক্ষ কাজ বন্ধ করে দেয়। বুধবার ফের সেই কাজ শুরুতে উদ্যোগী হয় তৃণমূলেরই অন্য কিছু কর্মী-সমর্থক। এ নিয়েই গোলমাল বেধে যায়।
তৃণমূল নেতা আজিজুল মিদ্যার দাবি, এলাকার অপর তৃণমূল নেতা প্রদ্যুৎ চট্টোপাধ্যায়ের ইন্ধনে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগসাজস করে নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করেছেন তাঁরা। এ দিন কাজ শুরু হতেই ফের তাঁরা প্রতিবাদ জানান। |
এর পরে দলের একটি অস্থায়ী অফিসে তাঁরা যখন বসেছিলেন, সেই সময়ে প্রদ্যুৎবাবুর নেতৃত্বে বেশ কয়েক জন মিলে সেখানে হামলা চালান বলে অভিযোগ আজিজুলের। তাঁর আরও অভিযোগ, মারধরে তিন জন জখম হন। ভাঙচুর করা হয় অফিসটি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি মোটরবাইকেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে তাঁর অভিযোগ।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রদ্যুৎবাবু পাল্টা অভিযোগ করেন, গ্রামের উন্নয়নমূলক কাজে বারবার বাধা দিচ্ছেন আজিজুল মিদ্যা ও তাঁর দলবল। এ দিনও ফের তাঁরা তা করায় স্থানীয় মানুষজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রদ্যুৎবাবুর দাবি, “কাজ হারানোর ভয়ে গ্রামের মানুষজন আজিজুল ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। তখনই আজিজুল ও তাঁর সঙ্গীরা তাঁদের উপরে চড়াও হন।” তাঁর দাবি, সেই সময়ে বচসা থেকে মারপিট শুরু হয়ে যায়। দু’পক্ষের চার জন জখম হন। তাঁদের মাথায়, পিঠে চোট লেগেছে। এ দিন গোলমালের খবর পেয়ে গ্রামে যায় পুলিশ। যদিও কোনও পক্ষই পুলিশে কোনও অভিযোগ করেনি। |
লণ্ডভণ্ড তৃণমূল অফিস। |
কাঁকসায় একশো দিনের কাজ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৃণমূলে। |
|
স্থানীয় সূত্রের খবর, কাঁকসার ওই গ্রামে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বরাবর বিবাদ লেগে রয়েছে। এসার অয়েলের কোলবেড মিথেন গ্যাস তোলার প্রকল্পে নানা দাবিতে দু’টি গোষ্ঠী পৃথক ভাবে আন্দোলন করা হয়েছে। এক বার আজিজুল ও তাঁর সঙ্গীরা বেশ কয়েক ঘণ্টা প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করেছিলেন। পরে দুর্গাপুরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীকেই ডেকে পাঠিয়ে দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, কাজ বন্ধ করে কোনও আন্দোলনে দলের সমর্থন নেই। যা করতে হবে তা আলোচনার মাধ্যমেই। আজিজুলকে তিনি পৃথক ভাবে কোনও রকম আন্দোলন না করার পরামর্শও দিয়েছিলেন। প্রদ্যুৎবাবুর দাবি, “তার পর থেকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছেন আজিজুল ও তাঁর সঙ্গীরা। সে জন্য একশো দিনের কাজ নিয়ে এমন মিথ্যা অভিযোগ আনছেন। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হলে গ্রামবাসীরাই একজোট হয়ে প্রতিবাদ করতেন।” আজিজুল মিদ্যার পাল্টা বক্তব্য, “ভুল বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে বেশি দিন সবার মুখ বন্ধ রাখা যাবে না।” |