পানিফল সব্জি না ফল
পরামর্শ পেতে দিশাহারা হরিশ্চন্দ্রপুরের চাষি
র্থকরী ফসল মাখনার পর লাভজনক পানিফল চাষকে ঘিরে আগ্রহ বাড়ছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের চাষিদের। কিন্তু তা ফল না সব্জি তা নিয়ে কৃষি এবং উদ্যান পালন সরকারের দুই দফতরের মধ্যে চাপান-উতোর চলছে। পানিফল চাষ কাদের আওতায় পড়ে তা নিয়ে দুই দফতরই সংশয়ে। ফলে চাষের জন্য সহায়তা কোথা থেকে মিলবে, তা নিয়ে চাষিরা দিশাহারা। উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা পীযুষকান্তি প্রামাণিক জানিয়েছেন, এটা তাঁর দফতরেরই বিষয়।
পতিত জলায় পানিফলের চাষ। হরিশ্চন্দ্রপুরে বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।
পতিত জলাশয়ে পানিফল চাষ হয়। সামান্য পরিচর্যা করে খরচের তুলনায় লাভের হার বেশ ভাল হওয়ায় তিন বছর ধরে নিজেদের উদ্যোগেই হরিশ্চন্দ্রপুরের দু’টি ব্লকের চাষিরা পানিফল চাষ করতে শুরু করেছেন। এলাকায় ৫০০ বিঘার বেশি জলাশয়ে ওই চাষ হচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি দফতরে যোগাযোগ করেও ওই চাষে কোনও সহায়তা মিলছে না।
হরিশ্চন্দ্রপুরে পানিফল চাষের কথা অজানা নয় কৃষি দফতরের। তবুও ওই চাষের কোনও তথ্য দফতরের কাছে নেই বলে কৃষি দফতরের দাবি। এমনকী, পানিফল আদৌ দফতরের তালিকাভুক্ত চাষের মধ্যে পড়ে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। কৃষি দফতরের মালদহ জেলা উপ-অধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, “পানিফল কৃষি দফতরের তালিকাভুুক্ত চাষের মধ্যে নয়, ওটা মনে হয় উদ্যান পালন বিভাগের মধ্যে পড়ে। হরিশ্চন্দ্রপুর ছাড়া জেলায় অন্য কোথাও ওই চাষ হয় বলে শুনিনি।” জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক প্রিয়রঞ্জন সন্নিগ্রাহী বলেন, “পানিফল আমাদের দফতরের তালিকাভুক্ত চাষের মধ্যে পড়ে না। ওই চাষ কারা দেখবে তেমন সরকারি নির্দেশের কথাও জানা নেই! ওই চাষ নিয়ে আমাদের কোনও পড়াশোনাও নেই।”
পতিত জলাশয়ে অর্থকরী মাখনা চাষকে ঘিরেও দুই দফতরে বছরের পর বছর ধরে এমনই চাপান-উতোরের সাক্ষী ছিল হরিশ্চন্দ্রপুর। এখন কৃষি দফতরই ওই চাষিদের নানা ভাবে পরামর্শ ও সাহায্য করে। মাখনার মতোই পতিত জলাশয়ে পানিফল চাষ হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, আষাঢ় মাসে চাষের পর আশ্বিন মাস থেকে ফল তোলা শুরু হয়। বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার টাকায় ১০ কুইন্টাল ফল মেলে। যার বাজার দর ২০ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি লাভ হয় ১৫ হাজার টাকা। তা ছাড়া চুরি বা নষ্ট হওয়ার ভয় সে ভাবে নেই। হরিশ্চন্দ্রপুরের অর্জুনা, তালসুর, মালিওর, সাহাপুর, হলদিবাড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকায় ওই চাষ হচ্ছে।
বারডাঙ্গার চাষি রাজেন দাস তাঁর ১৮ কাঠা পতিত জলাশয়ে এ বছর পানিফল চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “পানিফল চাষ করে লাভের মুখ দেখছি! কিন্তু কোনও সমস্যায় পড়লে কারও সাহায্য মেলে না।” একই কথা বলেন কাওয়ামারির চাষি রবিউল ইসলাম। তাঁর কথায়, “পানিফল চাষ করে দুটো পয়সার মুখ দেখছি। কৃষি দফতর এগিয়ে এলে আরও বেশি উত্‌পাদন হত বলেই মনে হয়।” হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক কৃষি আধিকারিক সাগুন মুর্মু বলেন, “এখানে দফতরের তালিকাভুক্ত ফসলের তালিকায় পানিফল নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তবে, গাছের রোগ-পোকা সংক্রান্ত কোনও সমস্যায় চাষিরা দফতরে এলে সাহায্য করা হবে।” ওই পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা জেলা পরিষদের বর্তমান বিরোধী দলনেতা সিপিএমের শেখ খলিল বলেন, “এলাকায় ৫০০ বিঘারও বেশি জলাশয়ে পানিফল চাষ হচ্ছে। সেটা কোন দফতরে পড়ে, সেই বিতর্কে না গিয়ে চাষিদের কথা ভাবলে আখেরে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।”
উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা পীযুষকান্তি অবশ্য গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিষয়টি উদ্যানপালন কর্মীদেরই দেখার কথা। তিনি বলেন, “পানিফলের জন্য কোনও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা অবশ্য এখনও নেই। আগামী দিনে তা করা যায় কিনা দেখব। তবে উন্নত বীজ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সহায়তা চাষিদের আমরা অবশ্যই দিতে পারি। এ বিষয়ে জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.