ভাঙন শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন। আয়লার পর তা আরও বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। নদীর পাড় ঘেঁষে দু’ধারের বসতি থকে ব্যবসা, বাজার-হাট বিপন্ন। ভিটে, ব্যবসা হারানোর ভয়ঙ্কর সমস্যা নিয়ে ভুক্তভোগীরা দিন গুজরান করলেও এ নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই প্রশাসনে। এমনই অভিযোগ বাসন্তীর হোগল নদীর দুই পাড়ের মানুষের।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আয়লার পরে নদী বাঁধ মেরামতি প্রকল্পে বাসন্তী ও সোনাখালির বাঁধ সংস্কারের বিষয়টিও রয়েছে। তবে জমির সমস্যার কারণেই ওই এলাকায় সংস্কারের কাজ শুরু কার যায়নি। তবে বর্তমানে ওই এলাকায় বাঁধের যা অবস্থা তাতে আয়লার প্রকল্পের কাজের আগে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতির চেষ্টা করা হচ্ছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার বাসন্তী ব্লককে দুভাগে ভাগ করে বয়ে গিয়েছে হোগল নদী। যার একদিকে বাসন্তী, অন্যদিকে সোনাখালি। |
নদীর দু’পাড়েই ঘনবসতি, দোকানপাট, বাজারহাট। আর এই হোগল নদীই এখন ঘুম কেড়েছে দু’পাড়ের বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীদের। সুন্দরবনের অধিকাংশ নদীরই নাব্যতা কমে গিয়েছে। ফলে জোয়ারের সময় বা ভরা কোটালে বাঁধ উপচে জনপদে চলে আসে জল। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এর ফলেই নিয়মিত ভাবে পাড় ভাঙছে হোগল নদীর। বহু জায়গায় অবস্থা এতটাই বিপজ্জনক যে যে কোনও মুহূর্তে দোকান বা ঘর তলিয়ে যেতে পারে। ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটছে বাসন্তী ও সোনাখালির হাজার খানেক দোকানদারের। অবিলম্বে বাঁধ মেরামতিতে জরুরি পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। বাসন্তী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোস্তাফা সর্দার বলেন, “দিনের পর দিন যে ভাবে নদীর পাড় ভেঙে বাঁধে ধস নামছে তাতে যে কোনও দিন নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” শঙ্কর সাহা, চিত্ত সাহা, গোপাল দাস বলেন, “ভাঙনের কোপে বহু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে ভাবে নদী পাড় ভেঙে দিচ্ছে তাতে অবিলম্বে প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে অবশিষ্ট দোকানগুলোও নদীর গ্রাসে চলে যাবে।” শুধু দোকানঘরই নয়, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন বাসিন্দারা।
অথচ ২০০৯ সালে আয়লার পরে ক্ষতিগ্রস্ত এই সব এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কথা থাকলেও তা না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ। যদিও আয়লার পরে এই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁধ মেরামতির প্রসঙ্গে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “বাম আমলে বাসন্তী ও সোনাখালিতে নদীর দুই পারে বোল্ডার ফেলে পাইলিং করে ভাঙন আটাকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে ওই এলাকায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরির প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরে বাঁধ মেরামতিতে আর কোনও কাজ করতে দেখিনি।” মহকুমাশাসক প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে দ্রত সমস্যার সমাধান করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
“বাম আমলে নদীর দুই পারে বোল্ডার ফেলে পাইলিং করে ভাঙন আটাকানোর চেষ্টা হয়েছিল। পরে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরে আর কোনও কাজ হয়নি।”
সুভাষ নস্কর, প্রাক্তন সেচমন্ত্রী |
|