চলতি বছরের শুরুতেই চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার পর বছর পেরিয়ে গেলেও বেনফেডের কাছ থেকে প্রাপ্য সিংহভাগ টাকা পায়নি চাকদহের তিন সমবায় সমিতি। ফলে আগামীতে আর কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কেনা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওই সমবায় সমিতির কর্তারা। সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে জেলা জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী বলেন, “ওই তিন সমবায় সমিতি বেনফেডের কাছ থেকে প্রায় ৮৪ লক্ষ টাকা পায়। টাকা ফেরতের বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি এজেন্সি বেনফেড চাকদহের বালিয়া, সুটরা ও গোঁটরা সমবায় থেকে সহায়ক মূল্যে এক কোটি ৬ লক্ষ টাকার ধান কিনেছিল। কিন্তু বেনফেড ধানের দাম বাবদ সমিতিগুলোকে মাত্র ২২ লক্ষ দেয়। বাকি রয়েছে ৮৪ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে বালিয়ার সমবায় ৬০ লক্ষ টাকা, সুটরা সমবায় ১৭ লক্ষ টাকা এবং গোটরা সমবায়ের পাওনা ৭ লক্ষ টাকা।
কেন বেনফেড টাকা দিতে দেরি করছে? নদিয়ার বেনফেডের ম্যানেজার সঞ্জীব রায় বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী কেনা ধান চাল করার জন্য সমবায়গুলি কোনও রাইস মিলে পাঠায়। সেই চাল এফসিআইতে জমা পড়লে তবেই সমবায়গুলি টাকা পাবে। সিংহভাগ চালই এফসিআই-য়ে আসেনি। তাই বকেয়া টাকাও পাচ্ছে না সমবায়গুলি।” বছর ঘুরলেও রাইস মিল থেকে কেন চাল এফসিআই-এর গুদামে গেল না? রাইস মিলের পক্ষে সাকেদ মণ্ডল বলেন, “একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে মিল ১০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। সেই ঋণ অনাদায়ে চলতি বছরের মার্চে ব্যাঙ্ক মিলটিকে ‘সিজ’ করে দিয়েছে। তাই আমরা চাল করতে পারিনি। এমনকী ধানের মালিকও এখন ব্যাঙ্ক।” এমত অবস্থায় সমস্যার জট ছাড়ানোর বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ) উৎপল ভদ্র বলেন, “রাইস মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। সমাধানের জন্য বেনফেডের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী ১২ ডিসেম্বর তেহট্ট থেকে শিবির করে সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজ শুরু হবে। পরে জেলার অনান্য জায়গায় ধান কেনা হবে।” প্রশাসনের আশ্বাসে অবশ্য চিঁড়ে ভিজছে না। বালিয়া সমবায় সমিতির সম্পাদক দীনেশ সিংহ রায় বলেন, “সাধারণত ধান কেনার মাস দেড়েকের মধ্যে টাকা মেলে। এ বার টাকা না পেয়ে বাধ্য হয়ে জমানো টাকা চাষিদের দিতে হচ্ছে। ব্যাঙ্ক-রাইস মিলের দ্বন্দ্বে বলি হতে হল আমাদের।” |