|
|
|
|
পর্যটন প্রসারে জঙ্গলমহলে নতুন বাসরুট
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
জঙ্গলমহল ঘিরে পর্যটনের নতুন পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি কেন্দ্রিক পর্যটন প্রকল্পের মৌ সাক্ষর হয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া জঙ্গলমহলের বহু এলাকাই এখনও প্রান্তিক। সামান্য যোগাযোগ ব্যবস্থাটুকুও সেখানে গড়ে ওঠেনি। তাই গোড়াতেই জঙ্গলমহলের যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল ফেরাতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। নতুন নতুন এলাকায় বাসরুটের পারমিট দেওয়া শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিবহণ আধিকারিক প্রিয়াঞ্জন দাস বলেন, “বাস যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতির চেষ্টা চলছে।”
|
বাসের সংখ্যা কম। তাই ঝুঁকি নিয়েই নিত্য যাতায়াত মেদিনীপুর-লালগড় রুটে। —ফাইল চিত্র। |
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে নতুন রুট পারমিট চেয়ে ৩৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ১৪ জনকে ‘অফার লেটার’ দেওয়া হয়েছে। আর রুট পারমিট পেয়ে গিয়েছেন ৬ জন। এই ৬টি বাসের মধ্যে ৫টিই জঙ্গলমহলের। কোনওটির গন্তব্য ঝাড়গ্রাম, কোনওটির বেলপাহাড়ি। জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে মোট ৩৯টি বাসকে পারমিট দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ২২টি বাসই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় চলছে।
নতুন পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে যে জঙ্গলমহলকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা মানছেন জেলা পরিবহণ দফতরের সরকার মনোনীত সদস্য প্রদ্যোৎ ঘোষ। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে জঙ্গলমহলে পর্যটন প্রসারে তৎপর। নতুন নতুন প্রকল্প করছেন। আমরা জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় বাস যোগাযোগ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছি। ফলে, পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পৌঁছতে সকলের সুবিধে হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে দিনে প্রায় ৮০০টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে জঙ্গলমহলে চলে প্রায় ৫০০টি বাস। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। জঙ্গলমহলে এমন অনেক এলাকা রয়েছে, যেখানে এখনও বাস চলাচল শুরু হয়নি। অথচ এই সব এলাকাতেই রয়েছে বেশ কিছু মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯টি ব্লকের মধ্যে ১১টি ব্লক রয়েছে জঙ্গলমহল এলাকার মধ্যে। এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লক এবং মেদিনীপুর (সদর) মহকুমার ৩টি ব্লক। মাওবাদী পর্বে দীর্ঘ অশান্তির জেরে এক সময়ে ঝাড়গ্রামে ভ্রমণপিপাসুদের যাতায়াত কমেছিল। মুখ থুবড়ে পড়েছিল পর্যটন-ব্যবসা। কিষেনজির মৃত্যুর পরে অবশ্য ছবিটা পাল্টেছে। মাওবাদী সক্রিয়তা থিতিয়ে যাওয়ায় পর্যটনের হাল ফিরেছে। চলতি শীতের মরসুমেও উৎসাহীদের যাতায়াত শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জঙ্গলমহলে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত যে কটেজগুলো রয়েছে, তা ‘বুক’ হতে শুরু করেছে। ‘বুকিং’ করছেন কলকাতা-সহ ভিন্ জেলার বাসিন্দারাও। |
নয়া রুট |
• পলাশচাবড়ি-ঝাড়গ্রাম, ভায়া বামুনডিহা, বেলপাহাড়ি, শিলদা
• পলাশচাবড়ি-মদনশোল, ভায়া বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর
• মেদিনীপুর-বেলপাহাড়ি, ভায়া মুম্বই রোড, ঝাড়গ্রাম, বিনপুর
• ঝাড়গ্রাম-পলাশবনি, ভায়া বামুনডিহা, বেলপাহাড়ি, শিলদা
• কাঁথি-ঝাড়গ্রাম, ভায়া এগরা, বেলদা, কেশিয়াড়ি, রোহিণী, লোধাশুলি |
|
জেলার জঙ্গলমহলে বেশ কয়েকটি ‘ইকো ট্যুরিজম পার্ক’ রয়েছে। শীতের সময় এই সব পার্কে প্রচুর লোকজন বেড়াতে আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি পিকনিকের আসর বসানো হয়। পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব মিলে দিনভর চলে আড্ডা-হইহুল্লোড়। স্থানীয় বাসিন্দারাও এখানে প্রচুর ভিড় করেন। ছোট-বড় এই সব পার্কগুলোকে নতুন করে সাজাতে নতুন নতুন পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। কিন্তু সব থেকে আগে দরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন। সে কথা বুঝেই জঙ্গলমহলের পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে ছুঁয়ে নতুন বাস রুটের পরিকল্পনা। জেলা পরিবহণ দফতরের সরকার মনোনীত সদস্য প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখেই নতুন রুট পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা জঙ্গলমহলকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি।” |
|
|
|
|
|