|
|
|
|
ভবন তৈরির তিন বছর পরেও চালু হল না আইটিআই, ক্ষোভ
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
ভবন তৈরি হয়েছে বছর তিনেক আগে। হস্টেলও তৈরি। কিন্তু এখনও চালু হল না বিদ্যাসাগরের জন্মভিটে বীরসিংহ গ্রামে সরকারি উদ্যোগে তৈরি আইটিআই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ব্লকে-ব্লকে আইটিআই খোলার কথা বলছেন, তখন তৈরি কলেজ চালু না হওয়ায় কারণ বুঝতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে এই আইটিআই তৈরির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির প্রাক্তন কাযর্করী সভাপতি তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু নিজে। ২০০৮ সালে ওই কলেজের শিলান্যাস করার দিন দফতরের তৎকালীন মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ ২০০৯-’১০ শিক্ষাবর্ষে পঠন-পাঠন শুরু হয়ে যাবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। একান্ত ভাবে বাম উদ্যোগে তৈরি কলেজটি চালু করায় তাই তৃণমূলের কোনও আগ্রহ নেই বলে অভিযোগ। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “২০১০ সালে ভবন তৈরির পর বাকি কাজকর্মও এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১১-তে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সব কিছু বদলে যায়। ওরা রাজনৈতিক কারণে এই কলেজ চালু করতে উদ্যোগী হয়নি। আর কোনও কারণ নেই।”
সিপিএমের অভিযোগ অবশ্য ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “কিছু কাজ এখনও বাকি রয়ে গিয়েছে। তা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। শিক্ষার উপকরণ হিসাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির টেন্ডার করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী শিক্ষাবর্ষেই পঠন-পাঠন শুরু করে দেওয়া হবে।” |
অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আইটিআই ভবন। —নিজস্ব চিত্র। |
কারিগরি শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেকার যুবকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে বীরসিংহ গ্রামে আইটিআই কলেজ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বীরসিংহ হাইস্কুলের দান করা তিন একর জমির উপর কলেজ-সহ হস্টেলটি তৈরি করতে খরচ হয় পাঁচ কোটিরও বেশি টাকা। ঠিক ছিল, প্রাথমিক ভাবে ৩৩০ জন কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। ছ’মাস থেকে দেড় বছরের ইলেকট্রিশিয়ান, মোটর ভেহিক্যালস মেকানিক্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং মেকানিক্স, সার্ভেয়ার, ফিজিওথেরাপি-সহ ১০টি কোর্সে নামমাত্র খরচে প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে এখানে। কলেজ চালু হওয়ার পর বাইরের লোকের যাতায়াত বাড়লে গ্রামের আর্থ-সামাজিক চেহারা পাল্টে যাবে বলে আশা করেছিল প্রশাসন।
বৃথা সেই আশা। আশ্বাস সার। ভবন তৈরি হয়ে গেলেও কলেজ চালু হয়নি আজও। এ দিকে, নতুন ভবনের ছাদ থেকে জল পড়ছে, খসে পড়ছে পলেস্তারা। এমনকী রাতে নানা রকম অসামাজিক কাজকর্মও হচ্ছে ফাঁকা ওই এলাকায়। কলেজের পাঁচিল টপকে জুয়া-সাট্টা-মদের আসর বসছে। পুলিশ-প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপই নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে আইটিআই কলেজ তৈরির কথা বলছেন। শুনছি জমি পাওয়া নিয়ে নাকি নানা সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সরকারি খরচেই বীরসিংহ গ্রামে যে একটি কলেজের পরিকাঠামো তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে, সে দিকে কারও নজর নেই।”
অন্য দিকে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মভিটের উন্নতির জন্য বাম সরকারের নেওয়া অন্য উদ্যোগগুলির অবস্থাও তথৈবচ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বছর দশ-বারো আগে বিদ্যাসাগরের নামে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছিল গ্রামে। প্রথম-প্রথম কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা জেলার বাস আসছিল সেখানে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় প্রশাসন উদ্যোগী না হওয়ায় আজ বাসস্ট্যান্ডটি এক প্রকার বেদখল হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও একটি অতিথি নিবাস বানানো হয়েছিল। ব্যবহার না-হওয়ায় সেটিও বেহাল। অর্থাৎ সরকারি ভাবে কোটি-কোটি টাকা খরচ হলেও জনপদটির বাস্তবে কোনও উন্নতি হয়নি। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের আশ্বাস, “আগে আইটিআই চালু করব। পরে বাসস্ট্যান্ডটিও নতুন করে চালু করার জন্য উদ্যোগী হব। যাতে বাইরে থেকে মানুষ এসে ওই অতিথি নিবাসে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থাও করা হবে।”
বামেরা প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। তৃণমূল পারবে কি না বলবে সময়। |
পুরনো খবর: উদ্বোধনের বছর পার হলেও চালু হয়নি আইটিআই |
|
|
|
|
|