নিজস্ব সংবাদদাতা • ধনেখালি |
দু’দিন পেরিয়ে গেলেও ধনেখালিতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নরেন দে এবং প্রাক্তন বিধায়ক অজিত পাত্র-সহ ফরওয়ার্ড ব্লকের ১০ জন নেতাকর্মীর উপরে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। হামলার ঘটনাকে সামনে রেখে হুগলিতে কোণঠাসা হয়ে পড়া বামফ্রন্ট লোকসভা নির্বাচনের আগে অক্সিজেন পেতে চাইছে। এ জন্য একাধিক পথসভা, জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে বলে বাম নেতারা জানিয়েছেন।
জেলার বাম নেতাদের অভিযোগ, শাসক দলের নেতাকর্মী হওয়ার জন্যই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না। তাঁরা এলাকাতেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ উড়িয়ে পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “অভিযুক্তেরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
বর্ষীয়ান ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেনবাবু বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর দু’চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। ওই হামলার ঘটনায় ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের ছায়াসঙ্গী তথা ধনেখালি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সৌমেন ঘোষ ওরফে পটলা, ধনেখালি পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ওই দলেরই অমিত ঘোরুই এবং ধনেখালি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ আসলাম ওরফে বুলবুল-সহ সাত জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় পুলিশের কাছে। অসীমাদেবী আগেই অবশ্য নরেনবাবুদের উপরে হামলাকে ফরওয়ার্ড ব্লকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের বলে দাবি করেছিলেন।
বাম নেতাদের অভিযোগ, সৌমেনবাবুর নেতৃত্বেই তাঁর দলবল এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ বছরে গোড়ায় ধনেখালিতে পুলিশ হেফাজতে তৃণমূল নেতা কাজি নাসিরুদ্দিন ওরফে নাসুর মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয়। সেই ঘটনাতেও বারে বারেই নাম জড়িয়েছে সৌমেনের। ইতিমধ্যে সিবিআই দু’বার জেরা করেছে সৌমেনকে। নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মানুজা বিবি বারে বারেই তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং তাতে বিধায়ক এবং তাঁর ছায়াসঙ্গী সৌমেনের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন।
কেন বার বার তাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে? সৌমেনবাবুর দাবি, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই আমার বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ আনা হচ্ছে।”
রবিবার বিকেলে ধনেখালিতে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করতে যান নরেনবাবু। পাশের একটি লজে ওই সময়ে তৃণমূল মহিলা সমিতির বৈঠক চলছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইরে থাকা কিছু ফরওয়ার্ড সমর্থক তাঁদের মহিলা সমর্থকদের উদ্দেশে কটূক্তি করে, এই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানান এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে মারামারি বাধে। সেই ফাঁকেই এক দল তৃণমূল নেতাকর্মী ফরওয়ার্ড ব্লকের কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। প্রহৃত হন নরেনবাবু, দলের প্রাক্তন বিধায়ক অজিত পাত্র-সহ সহ ১০ জন। কার্যালয়ের বাইরে থাকা নরেনবাবুর গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সে দিন কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়াই কার্যত একতরফা ভাবে তৃণমূল কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায় ফরওয়ার্ড ব্লক কার্যালয়ে। সেখানে সৌমেনবাবু, শেখ আসলাম ছাড়াও বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা-কর্মী ছিলেন। হামলার ঘটনাকে সামনে রেখে চলতি মাসের ২২ তারিখে চুঁচুড়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে একটি জনসভার আয়োজন করেছে বামফ্রন্ট। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা চেয়ারম্যান তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য নৃপেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “১৩ দফা দাবিতে আমাদের ওই জনসভা। তার মধ্যে কিন্তু আমাদের অন্যতম প্রধান বিষয়ই থাকছে তৃণমূলের সন্ত্রাস।” সিপিএমের ধনেখালি জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “একতরফা সন্ত্রাসে ধনেখালিতে আমাদের প্রতিবাদে পথে নামার পরিস্থিতি নেই। আমাদের নেতা মার খেলেন আর শাসক দল আমাদের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে দাপিয়ে মিটিং মিছিল করছে। পুলিশ নীরব দর্শক।” |